Advertisement
E-Paper

এখন মা খুব ভালবাসে, আত্মহত্যা করতে চাওয়া মেয়ের কথা শুনে জলে ভরে গেল মায়ের দু’চোখ

কেমন আছে সে? এ কথা জানতে চাওয়ায় মায়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে এক নাগা়ড়ে সবটা বলে চলে একরত্তির মেয়েটি। তার পরে হাসিহাসি মুখে পরনের জামা দেখিয়ে বলে, ‘‘মামাবাড়ি যাচ্ছি। জয়নগরে। এই জামাটা মা দিয়েছে। পুজোয়!’’

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮ ০১:১৭
—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

মা এখন তাকে খুব ভালবাসে, মারে না। বকুনি দেয় না, খেতেও দেয়।

কেমন আছে সে? এ কথা জানতে চাওয়ায় মায়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে এক নাগা়ড়ে সবটা বলে চলে একরত্তির মেয়েটি। তার পরে হাসিহাসি মুখে পরনের জামা দেখিয়ে বলে, ‘‘মামাবাড়ি যাচ্ছি। জয়নগরে। এই জামাটা মা দিয়েছে। পুজোয়!’’ পাশে দাঁড়ানো মায়ের চোখে তখন জল। আবেগ সামলে বলেন, ‘‘নিজের মেয়েকে কেউ মরে যেতে দিতে পারে? আমরাও ওকে ভালবাসতাম। কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল, বুঝতে পারছি না।’’

গত অগস্ট মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুভাষগ্রামের একটি স্কুলে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল চতুর্থ শ্রেণির এই ছাত্রীকে নিয়েই। অনেক রকমের ওষুধ ভর্তি একটি শিশি ব্যাগে ভরে সে নিয়ে গিয়েছিল স্কুলে। সহপাঠীদের সেটি দেখিয়ে বলেছিল, ওই ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করতে চায় সে। কোনও ভাবে কথাটা ক্লাসে উপস্থিত শিক্ষিকার কানে পৌঁছয়। তাঁর মাধ্যমে জানতে পারেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। তিনি কথা বলার চেষ্টা করলে শিশুটি প্রধান শিক্ষিকার কাছে অভিযোগ করে, মা আর সৎবাবা তার উপরে নানা ভাবে নির্যাতন চালান। ঠিক সময়ে তাকে খেতে দেওয়া হয় না। বাড়ির কাজ করানো হয়। সেই কাজে একটু ভুল হলেই বেধড়ক মারধর করা হয় তাকে। তাই সে বেঁচে থাকতে চায় না। সেই সঙ্গে জানিয়েছিল, সে দিদার কাছে চলে যেতে চায়। ঘটনার দিন ব্যাগে করে তাই পোশাকও নিয়ে বে়রিয়েছিল সে!

আরও পড়ুন: চায়ে‌র কাপেই ছড়ায় স্মৃতির সৌরভ

একরত্তির মেয়ের এই কথা নাড়িয়ে দিয়েছিল স্কুলের সকলকে। অবাক শিক্ষিকারা যোগাযোগ করেছিলেন সোনারপুর থানায়। পুলিশ শিশুটির দিদার সঙ্গেও কথা বলে। জানা যায়, বাবার মৃত্যুর পরে মেয়ের গৃহশিক্ষককে বিয়ে করেছেন শিশুটির মা। তাঁর সঙ্গেই একটি ভাড়া বাড়িতে মেয়েকে নিয়ে থাকেন তিনি। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এর পরে ২ অগস্ট শিশুর মা এবং বাবাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরের দিনই অবশ্য জামিনে মুক্তি পেয়ে যান তাঁরা। চাইল্ড লাইনের মাধ্যমে হোমে পাঠানো হয় শিশুটিকে।

আরও পড়ুন: ঝাঁপ বন্ধ, মেট্রো স্টেশনে আটকে পড়লেন মহিলা

দুর্গাপুজোর এক সপ্তাহ আগে হোম থেকে বাড়ি ফিরেছে শিশুটি। এখন সুভাষগ্রাম কালীতলা এলাকায় সেই মা এবং সৎবাবার সঙ্গেই থাকছে মেয়েটি। একচালা ঘরে খাট ছাড়া আর বিশেষ কোনও আসবাব নেই। তিন সদস্যের সংসারে রান্নার ব্যবস্থা বারান্দায়। সেখানেই বসে শিশুটির মা বলেন, ‘‘মেয়েকে একা মানুষ করতে সমস্যা হবে ভেবেই আবার বিয়ে করেছিলাম। সে রকম স্বচ্ছল ছিল না সংসার। কলকাতায় একটি জায়গায় আয়ার কাজ করতাম। আমার স্বামীও একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। কাজের জন্য দিনের বেশির ভাগ সময়ে বাইরেই থাকতে হত আমাদের। তাই হয়তো মেয়েকে ঠিকমতো সময় দিতে পারিনি তখন। এখন তো আর কাজই নেই। প্রচুর সময়।’’ জানালেন, ওই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরে তাঁদের কাজ চলে যায়। এখন শিশুটির সৎবাবা নতুন কাজ নিয়েছেন। তবে তার মা আর কাজে যোগ দেননি। মেয়েকেই সময় দিতে চান। মা-মেয়ের সঙ্গে কথাবার্তা চলার ফাঁকেই ঘরে ফিরলেন তার সৎবাবা। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ে যে ক’দিন হোমে ছিল, ওর ফেরার অপেক্ষাই করেছি। পুজোর বহু আগেই ওর জন্য নতুন জামা কিনে রেখেছিলাম। না ভালবাসলে এ সব করতাম?’’ তবু আশঙ্কা কাটছে না শিশুর দিদার। তিনি বলেন, ‘‘হোম থেকে ফেরার পরে পুলিশকে বলেছিলাম, নাতনি আমার সঙ্গে থাকুক। পুলিশ বলল, মায়ের কাছেই ভাল থাকবে। ওরা ভাল থাকলেই ভাল।’’

বাবা-মায়ের ‘ভালবাসায়’ এখন কি তবে ধীরে ধীরে মন ভাল হবে শিশুটির? মনোরোগ চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিশুটির বাবা-মায়ের দায়িত্ব অনেক বে়ড়ে গেল। সে কেমন পরিবেশ পাচ্ছে, তার উপরেই মেয়েটির ভাল থাকা নির্ভর করবে।’’ অনেক সময়েই অভিভাবকেরা ভুল করে ফেলেন। তার জেরে সন্তানের অনেক বড় ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। কী ভাবে ছেলে-মেয়েকে মানুষ করতে হয়, সে ব্যাপারে বাবা-মায়ের শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন ওই চিকিৎসক।

আর কী বলছে শিশুটি? সে কি পুরনো স্কুল ছেড়ে দিতে চায়? প্রশ্ন শুনে মায়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে শিশুটি শুধু বলে, ‘‘মা জানে।’’ শিশুর মায়ের দাবি, ‘‘মেয়ে হয়তো ওই স্কুলে আর মানিয়ে নিতে পারবে না। তাই অন্য কোথাও ভর্তি করার কথা ভাবছি।’’ শিশুটির দিদার অবশ্য মত নেই এই স্কুল বদলের সিদ্ধান্তে। তাঁর আর্জি, ‘‘এমনটা যেন না করে ওরা। ওই দিদিমণিরাই আমার নাতনিকে বাঁচিয়েছিলেন।’’ আর কী বলছে তার স্কুল? শিক্ষিকারা কি চান তাঁদের ছাত্রীকে হারাতে? ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দোলনচাঁপা রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘স্কুলের সব পড়ুয়াই আমাদের সন্তানের মতো। আমাদের স্কুলে ওর কোনও অসুবিধে যাতে না হয়, সে দিকে নজর রাখা তো আমাদের কর্তব্য।’’

Girl Child Molestation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy