কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে মাকে ফোন করে সাড়া পাননি ছোট ছেলে। ফোনটি বন্ধ ছিল। বাড়ি ফিরে দরজায় ধাক্কাধাক্কি ও ডাকাডাকি করেও সাড়া মেলেনি। এর পরেই প্রতিবেশী এবং পরিজনদের খবর দেন ছেলে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজার তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে নিমতা থানার অধীন পদ্মপুকুরে কবি সত্যেন সেন সেকেন্ড লেনে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম রীতা ভট্টাচার্য (৭০)। এই ঘটনায় রবিবার খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। মৃতার বড় ছেলে এবং পুত্রবধূর বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। ঘটনাচক্রে, রবিবার দিনভর অভিযুক্ত দম্পতির খোঁজ মেলেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে ঘটনাটি খুন বলেই অনুমান করা হচ্ছে। মৃতদেহের ময়না তদন্তের রিপোর্ট এলে কী ভাবে মৃত্যু, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে প্রাথমিক ভাবে শ্বাসরোধ করার জেরে এমন ঘটনা বলে মনে করছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত বৃদ্ধার ছোট ছেলে সুবীর ভট্টাচার্য একটি বেসরকারি সংস্থায় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন। তিনি অভিযোগে জানিয়েছেন, শনিবার রাতে ফেরার পথে বেলঘরিয়া স্টেশনে নেমে মাকে ফোন করেছিলেন তিনি। বাড়ি ফিরে দেখেন, দোতলা বাড়িটি পুরো অন্ধকার এবং বাইরে থেকে তালাবন্ধ। ডাকাডাকি করেও মায়ের সাড়া না মেলায় সুবীর সকলকে খবর দেন। সেই খবর পেয়ে পুলিশ প্রথমে একতলার ঘরের একটি জানলা খুলে দেখে, বিছানায় কম্বল চাপা দেওয়া অবস্থায় শুয়ে রয়েছেন রীতা। উদ্ধারের সময়ে বৃদ্ধার কান থেকে রক্ত চুঁইয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে।
সুবীরের অভিযোগ, বাড়িটির দোতলায় তাঁর দাদা-বৌদি এবং তাঁদের সন্তান থাকতেন। একতলায় মাকে নিয়ে থাকতেন সুবীর। বড় ছেলের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে ওই বৃদ্ধার বিবাদ চলছিল। বিষয়টি আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে। এর আগেও বৃদ্ধার বড় ছেলে মাকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
ঘটনার পরে বাড়ির পরিচারিকার সঙ্গে কথা বলে সুবীর এ-ও জানতে পারেন, শনিবার সকালে তিনি ওই বাড়িতে কাজে এসেছিলেন। কিন্তু বৃদ্ধার বড় ছেলে পরিচারিকাকে জানিয়ে দেন, মা বাড়িতে নেই, তাই তাঁকে সে দিন কাজ করতে হবে না। প্রাথমিক ভাবে দাদা-বৌদি এই ঘটনায় জড়িত বলেই মনে করছেন অভিযোগকারী। সেই সঙ্গে মায়ের মোবাইল ফোন, ২৫ হাজার টাকা, সোনার গয়না, একাধিক নথি এবং বাড়ির দলিলও চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সুবীর।
পুলিশ সূত্রের খবর, তদন্তে সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বৃদ্ধার বড় ছেলে ও তাঁর স্ত্রীর খোঁজে তল্লাশি চলছে। খোঁজ মিললে এই ঘটনার সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগসূত্র রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারবে পুলিশ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)