Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

কর্মীদের বেতনের ২৮ কোটি টাকা ফেরাতে হাইকোর্টের নির্দেশ ট্রাম কোম্পানিকে

কর্মীদের বেতন থেকে তাদের ক্রেডিট সোসাইটির জন্য প্রায় ২৮ কোটি টাকা কেটে নিলেও সেই টাকা সোসাইটির তহবিলে জমা দিতে পারছে না কলকাতা ট্রাম কোম্পানি। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে নির্দেশ দিয়েছেন, বকেয়া টাকা যাতে ৩০ জুনের মধ্যে মেটানো হয় তার ব্যবস্থা করতে। একই সঙ্গে বিচারপতির নির্দেশ, ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে একটি হলফনামা পেশ করতে হবে। তাতে জানাতে হবে, টাকা কেটে নেওয়া হলেও সেই টাকা কোথায়, কী ভাবে খরচ করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৬ ২১:৫৯
Share: Save:

কর্মীদের বেতন থেকে তাদের ক্রেডিট সোসাইটির জন্য প্রায় ২৮ কোটি টাকা কেটে নিলেও সেই টাকা সোসাইটির তহবিলে জমা দিতে পারছে না কলকাতা ট্রাম কোম্পানি। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে নির্দেশ দিয়েছেন, বকেয়া টাকা যাতে ৩০ জুনের মধ্যে মেটানো হয় তার ব্যবস্থা করতে। একই সঙ্গে বিচারপতির নির্দেশ, ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে একটি হলফনামা পেশ করতে হবে। তাতে জানাতে হবে, টাকা কেটে নেওয়া হলেও সেই টাকা কোথায়, কী ভাবে খরচ করা হয়েছে।

‘কলকাতা ট্রামওয়েজ এমপ্লয়িজ কোঅপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি’-র আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ জানান, ওই সমবায় থেকে কোনও কর্মী টাকা ধার নিলে, ধারের টাকা অথবা সদস্য বাবদ চাঁদা ট্রাম কোম্পানি কর্মীদের মাসিক বেতন থেকে কেটে নেয়। সমবায়ের অভিযোগ, ২০১১ সাল থেকে ট্রাম কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বেতন থেকে টাকা কেটে নিচ্ছেন। কিন্তু সেই টাকা ক্রেডিট সোসাইটির তহবিলে জমা পড়ছে না। সেই কারণে ২০১৪ সালে কলকাতা হাইকোর্টে ট্রাম কোম্পানি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সমবায়ের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়। সমবায়ের দাবি, গত বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সমবায়ের তহবিলে ২৭ কোটি ৯৬ লক্ষেরও বেশি টাকা জমা পড়েছিল।

গত বছরের ডিসেম্বরে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, এই বিষয়ে তার বক্তব্য হলফনামা দিয়ে জানাতে। এ দিন মামলাটির শুনানি ছিল। ট্রাম কোম্পানির আইনজীবী সপ্তাংশু বসু আদালতে জানান, হলফনামায় ট্রাম কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার কর্মীদের বেতনের ৭৫ শতাংশ টাকা দেয়। প্রতি মাসে কর্মীদের পুরো বেতন কর্তৃপক্ষ দিতে পারছেন না। ট্রাম, বাস চালিয়েও খরচ তো উঠছেই না, বরং চালালেই ক্ষতি হচ্ছে। সংস্থার রোজগার নেই বললেই চলে। প্রতি মাসে বেতনের ৩ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা বকেয়া থেকে যাচ্ছে। বেতনের টাকা মিটিয়ে ক্রেডিট সোসাইটির বকেয়া টাকা মেটানো যাচ্ছে না। আইনজীবী সপ্তাংশুবাবুর আর্জি, আদালত রাজ্যকে নির্দেশ দিক, ট্রাম কোম্পানিকে টাকা দিতে, তবেই সংস্থা তার কর্মীদের ক্রেডিট সোসাইটির বকেয়া প্রায় ২৮ কোটি টাকা মেটাতে পারবে।

তা জেনে আইনজীবী অরুণাভবাবু আদালতে জানান, রাজ্যেরই একটি সংস্থা এই কথা বলছে। তা হলে তো বেসরকারি কোনও প্রতিষ্ঠান বলতে পারে ব্যাঙ্কের কাছে টাকা ধার চাওয়া হয়েছে। ব্যাঙ্ক ধার দিচ্ছে না। সেই কারণ, কর্মীদের বেতন দেওয়া যাচ্ছে না।

এই সময় বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ট্রাম কোম্পানির আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘‘সংস্থার কর্তৃপক্ষ বেতন থেকে টাকা কেটে নিচ্ছেন। অথচ সেই টাকা ক্রেডিট সোসাইটির তহবিলে জমা করছেন না। এটা কি তিনি করতে পারেন?’’

বিচারপতি এই কথা বলার পরেই আইনজীবী অরুণাভবাবু বলেন, ‘‘বেসরকারি কোনও প্রতিষ্ঠান যদি কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা কেটে নেওয়ার পরে তা জমা না দেয়, তা হলে আদালত প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এ ক্ষেত্রে কী হবে?’’ অরুণাভবাবু আরও জানান, ২০১১ সাল থেকে বকেয়া রয়েছে। ক্রেডিট সোসাইটিকে তো সুদ-সহ সদস্যদের টাকা মেটাতে হবে। টাকা যদি জমা না পড়ে তা হলে কী ভাবে সুদ-সহ টাকা মেটানো যাবে। বকেয়া টাকার অন্তত ৫০ শতাংশ টাকা অবিলম্বে মেটানো হোক। আইনজীবী সপ্তাংশুবাবু জানান, সংস্থার সেই টাকা মেটানোর ক্ষমতাও নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

high court in calcutta ctc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE