Advertisement
১৯ মে ২০২৪

রায়ে আশ্বস্ত মা, ছেলের মৃত্যুর তদন্ত হবে এ বার

এক বছরের বেশি সময় ধরে লড়াই চালিয়েও লাভ হয়নি। শেষে আদালতের হস্তক্ষেপে মৃত ছেলের জন্য আইনি লড়াই শুরুর অস্ত্রটা অন্তত হাতে পেতে চলেছেন মা। সেই অস্ত্র হল, চিকিৎসা-সংক্রান্ত ও চিকিৎসক সংক্রান্ত দরকারি কিছু কাগজপত্র।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৭ ০০:২১
Share: Save:

এক বছরের বেশি সময় ধরে লড়াই চালিয়েও লাভ হয়নি। শেষে আদালতের হস্তক্ষেপে মৃত ছেলের জন্য আইনি লড়াই শুরুর অস্ত্রটা অন্তত হাতে পেতে চলেছেন মা। সেই অস্ত্র হল, চিকিৎসা-সংক্রান্ত ও চিকিৎসক সংক্রান্ত দরকারি কিছু কাগজপত্র।

বারবার আবেদন করেও ওই নথি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও হাসপাতালের কাছ থেকে পাচ্ছিলেন না বলে অভিযোগ ল্যান্সডাউনের বাসিন্দা ঝর্ণা ঘোষের। তাঁর ছেলে ৩৯ বছরের নীল ঘোষের মৃত্যু হয়েছিল ২০১৪-র ১৬ নভেম্বর। তাঁর চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র না-পাওয়া পর্যন্ত হাইকোর্ট বা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা চালানোও সম্ভব হচ্ছিল না। এর জন্য তিনি একাধিক বার ধর্না দিয়েছেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরেও।

অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যাতে তদন্ত শুরু করা হয়, তার জন্য ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’ (এমসিআই) এবং ‘রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল’-এ দৌড়ে বেরিয়েছেন। কিছুতেই লাভ হয়নি, সবাই শুধু এড়িয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। শেষে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। গত ২৮ মার্চ জারি করা নির্দেশে হাইকোর্ট অবিলম্বে সেই কাগজপত্র স্বাস্থ্য দফতর মারফত আবেদনকারীকে দিতে বলেছে। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কোর্ট অবিলম্বে তদন্ত শুরুর নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলকে। তদন্তে তারা কী কী পদক্ষেপ করছে, তা-ও কোর্টকে জানাতে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের অবশ্য দাবি, চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি হয়নি। তিনি সব তথ্যপ্রমাণ জমা করেছেন।

ঝর্ণাদেবীর কথায়, বিদেশ থেকে এসে হাল্কা জ্বর হয়েছিল নীলের। গড়চা ফার্স্ট লেনের নার্সিংহোমে হর্ষ অগ্রবাল নামে এক চিকিৎসকের কাছে যান তাঁরা। তিনি রক্ত পরীক্ষা করাতে বলেন। তাতে ডেঙ্গি ধরা পড়ে। ঝর্ণাদেবীর কথায়, যে দিন ডেঙ্গি ধরা পড়ে, সেই দিনই নীলের রক্তে প্লেটলেট না-কমা সত্ত্বেও নার্সিংহোমে ভর্তি করে নেওয়া হয়। অভিযোগ, ‘‘ডায়াবেটিক নীলকে টানা কয়েক দিন গ্লুকোজ স্যালাইন দেওয়ায় কিডনি ফেলিওরে মৃত্যু হয়। এর পর থেকেই চিকিৎসার ও চিকিৎসকের ডিগ্রি সংক্রান্ত নথি হাতে পেতে আমার লড়াই শুরু হয়।’’

২০১৬-র জুলাইয়ে তিনি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এমসিআই-তে অভিযোগ জানান। তারা বিষয়টি রাজ্য কাউন্সিলে পাঠায়। তারা আবার ওই বছরের ৯ নভেম্বর লিখে পাঠায়, চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন এমসিআই-এ থাকায় বিষয়টি তাদেরই দেখতে হবে। এই ঠেলাঠেলি চলতে থাকে। কাগজপত্র পেতে রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে দরবার শুরু করেন ঝর্ণাদেবী। ২০১৭-র ৩০ জানুয়ারি নার্সিংহোমকে চিঠি লিখে কাগজপত্র চায় স্বাস্থ্য দফতর। বার কয়েক তাগাদা দিয়েও কাগজ মেলেনি। এর পরেই হাইকোর্টে যান ঝর্ণাদেবী।

আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত চিকিৎসক হর্ষ অগ্রবালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। পরিকল্পনা করে আমার সুনাম নষ্টের চক্রান্ত করছেন ঝর্ণাদেবী। গ্লুকোজ স্যালাইন নীল ঘোষকে দেওয়া হয়নি। সব তথ্যপ্রমাণ আগেও দিয়েছিলাম, আবারও স্বাস্থ্য অধিকর্তার অফিসে জমা করেছি। তাতেই সত্য প্রমাণিত হবে।’’ রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের তরফে জানানো হয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। ৬ এপ্রিল কাউন্সিলের পরবর্তী বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আশা। তদন্ত কতটা এগিয়েছে, হাইকোর্টকে জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Essential Documents High Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE