Advertisement
E-Paper

বহুতল ওঠেনি এখনও, বদলেছে শুধু পাড়ার চরিত্র

অলস দুপুরে ফেরিওয়ালা হেঁকে যায়। পড়ন্ত দুপুরে গলির রকের আড্ডায় তখন পড়শিরা। মিনার্ভা থিয়েটার ও চৈতন্য লাইব্রেরির ধার ঘেঁষা উমেশ দত্ত লেন বিডন স্ট্রিট থেকে গিয়ে মিশেছে রমেশ দত্ত স্ট্রিটে। রাস্তার অন্য ধারে গরানহাটা। পাড়ার জীবনযাপনে মিশে যায় রাজপথের যান চলাচলের শব্দ আর কোলাহল।

আশিসকুমার খান

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:১৫
ছবি:  শুভাশিস ভট্টাচার্য

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

অলস দুপুরে ফেরিওয়ালা হেঁকে যায়। পড়ন্ত দুপুরে গলির রকের আড্ডায় তখন পড়শিরা। মিনার্ভা থিয়েটার ও চৈতন্য লাইব্রেরির ধার ঘেঁষা উমেশ দত্ত লেন বিডন স্ট্রিট থেকে গিয়ে মিশেছে রমেশ দত্ত স্ট্রিটে। রাস্তার অন্য ধারে গরানহাটা। পাড়ার জীবনযাপনে মিশে যায় রাজপথের যান চলাচলের শব্দ আর কোলাহল।

রেডিওর সুরে মোড়া পাড়াটার কিছু মানুষের ঠিকানা ছিল তখন কুস্তির আখড়া। পাড়ায় অঘোষিত অভিভাবক নিলুদা ঘুম ভেঙেই হাঁক দিতেন ছোটদের, ‘‘ওরে তোরা ওঠ!’’ গলিতে তখন বাইশ-তেইশটা বাড়ি। সকলেই সম্পর্কের বাঁধনে বাঁধা। সত্তরের দশকে নকশাল আন্দোলনে যুক্ত কত ছেলে এক সময়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছে।

আজও স্থানাভাবে এখানে বহুতল মাথা তোলেনি। কিছু বাড়ি হাত বদল হলেও বাইরের চেহারাটা একই। রয়েছে পুরনো প্রতিবেশীদের সুসম্পর্কও। যদিও পাড়ায় আসা নতুনদের সঙ্গে সে ভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ মেলেনি।

পরিষেবা কিছুটা উন্নত হয়েছে। যদিও কোনও এক অজ্ঞাতকারণে অলিগলি সাফ হয় সপ্তাহে এক দিন। অসচেতন নাগরিকের সৌজন্যে কখনও কখনও আবর্জনা ঠাসা প্লাস্টিক আছড়ে পড়ে রাস্তায়। এ পাড়ার বড় সমস্যা ইঁদুর। ইঁদুরের বাসার জন্যে বিপজ্জনক ভাবে আলগা হয়েছে মাটি।

হারিয়েছে পাড়ার কাকা, জেঠা, দাদুর শাসন। সেই স্নেহপ্রবণ মানুষগুলি মনে আর কাজে এক ছিলেন। সন্ধ্যায় বাড়ি ঢুকে পড়তে বসতে হতো, না হলে জুটত বকুনি! ছেলেদের সুর করে নামতা পড়া আর কোনও এক বাড়ি থেকে ভেসে আসা হারমোনিয়াম সহযোগে উচ্চগ্রামে সরগমের ধ্বনি পাড়ার আনাচে কানাচে মিশে অদ্ভূত এক পরিবেশ সৃষ্টি করত। এখন সেই পাড়ারই সন্ধ্যাটা কেমন যেন নিস্তব্ধ, ফ্যাকাশে।

কাছেই রবীন্দ্রকানন। সময়ের অভাবে কমেছে খেলাধুলোর আগ্রহ। অন্য পাড়ার ছেলেরা তবু এসে খেলে। আগে ছুটির দিনে দলবেঁধে যেতাম গড়ের মাঠে। তবে গুলি, ঘূর্ণি, কিংবা চাপ্পুল এখন স্মৃতির খাতায়
নাম লিখিয়েছে।

পাড়ার ধার ঘেঁষে রয়েছে মিনার্ভা থিয়েটার। সেখানে আসতেন খ্যাতনামা অভিনেতারা। মিনার্ভার সামনে দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি খেতে দেখেছি রবি ঘোষকে। থিয়েটারে ঢোকার আগে হাতটা বুকে ঠেকাতেন উৎপল দত্ত। পাড়ার দুই ক্লাব পান্তুয়া আর নেতাজি সঙ্ঘের মধ্যে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা নিয়ে ছিল রেষারেষি।

পরিবর্তনের মাঝেও এ পাড়ায় ছোটদের নাট্যচর্চাটা আজও রয়ে গিয়েছে। পাড়া ও আশপাশের খুদেদের নিয়ে রয়েছে বিডন স্ট্রিট শুভম। পাড়ার চৈতন্য লাইব্রেরির পাঠকসংখ্যা অনেক কমেছে। আজও আড্ডা বসে কখনও শীতলা রক কখনও বা খাটালের সামনের রকে। পাড়া-পাড়া গন্ধটা আছে এখানে। সেটাই আমার ভরসা।

লেখক আইনজীবী

Apartment People
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy