Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Pet

আদালতের নির্দেশে পোষ্যদের যন্ত্রণা মুক্তির আশা

প্রথম প্রথম ঘুমের ওষুধ দিয়ে কিছুটা ভাল রাখার চেষ্টা করলেও পরে নিরুপায় হয়ে একের পর এক ফোন করে যান চিকিৎসককে।

শব্দবাজির তাণ্ডবে দুর্বিষহ অবস্থা হয় পোষ্যদের। নিজস্ব চিত্র

শব্দবাজির তাণ্ডবে দুর্বিষহ অবস্থা হয় পোষ্যদের। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২০ ০৩:০০
Share: Save:

তখন সে ৪৮ দিনের অন্তঃসত্ত্বা। শব্দ-যন্ত্রণা আটকাতে ঘরের জানলা-দরজা বন্ধ করে মোটা কাপড় দিয়ে তার মাথা-কান-গলা পেঁচিয়ে রাখা হয়েছিল। তবু রেহাই মেলেনি।কয়েক দফায় অজ্ঞান হওয়ার পরে কালীপুজোর পরদিন তার পেটে থাকা বাচ্চাটি নষ্ট হয়ে যায়। আওয়াজের ভয় এবং সন্তান হারানোর শোক এতটাই চেপে বসেছিল ওর যে দ্রুত পেট পরিষ্কার করিয়ে নেওয়াও যায়নি। দিন দশেক খাওয়া, মল-মূত্র ত্যাগ— প্রায় সবই বন্ধ ছিল তার। কাউকেই কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছিল না সে। সর্বক্ষণ চোখ দিয়ে জল গড়াত। মাস খানেকের মধ্যেই পায়োমেট্রা রোগ হয়। আদরের রানিকে আর বাঁচাতে পারেননি বেহালার বাসিন্দা সম্রাট বর্ধন এবং তাঁর স্ত্রী দময়ন্তী।

কালীপুজো, দীপাবলি বা ছটের সময় একাংশের আনন্দের নামে শব্দবাজির তাণ্ডবের এমন দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা রয়েছে পোষ্যের প্রায় সব অভিভাবকেরই। কেউ সর্বক্ষণ পোষ্যকে জড়িয়ে ধরে বসে থেকেও তার হৃদ্রোগে

আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু আটকাতে পারেননি। কেউ আবার প্রথম প্রথম ঘুমের ওষুধ দিয়ে কিছুটা ভাল রাখার চেষ্টা করলেও পরে নিরুপায় হয়ে একের পর এক ফোন করে যান চিকিৎসককে। তার পরে থানায়। কিন্তু সুরাহা মেলে না। তবে চলতি বছরে কলকাতা হাইকোর্ট সমস্ত রকমের বাজি বিক্রি এবং পোড়ানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরে পোষ্যের যন্ত্রণামুক্তির আশা দেখছেন অভিভাবকদের অনেকেই। আবার পূর্ব অভিজ্ঞতা মনে করে তৈরি হচ্ছে আশঙ্কাও!

এমনই এক পোষ্যের অভিভাবক বাগুইআটির রুমনা দাস যেমন বললেন, ‘‘কালীপুজো, দীপাবলির রাতে আমার পোষ্য দেশি কুকুর সোনু বাজির ভয়ে খাটের নীচে ঢুকে প্রবল কাঁপত। জড়িয়ে ধরে কত যে রাত কেটেছে, বোঝাতে পারব না। পাড়ায় যাদের খেতে দিই, তাদের অনেকেও বাজির ভয়ে এই সময়টায় পাড়াছাড়া হয়ে যায়। কুকুরের কাছে নিজের এলাকা বড় ব্যাপার। কামড় খেয়ে গাড়িতে ধাক্কা খেয়ে মৃতপ্রায় হয়ে ফিরত। বার বার পুলিশকে বলেও বাজি ফাটানো বন্ধ করতে পারিনি।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘মাত্রাতিরিক্ত শব্দবাজি ফাটানো প্রতিবারই নিষিদ্ধ থাকে। কাজ তো হয় না। এ বারেও হবে কি না, পুলিশের উপরেই নির্ভর করছে।’’

বাগবাজারের সুজাতা দেবনাথ আবার জানাচ্ছেন, সেপ্টেম্বর-নভেম্বর কুকুরের সন্তান প্রসবের সময়। অন্তঃসত্ত্বা কারও উপরে বাজির আওয়াজের প্রভাব বেশি হলে পরে যে বাচ্চা জন্মায় তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কম হয়। ডিস্টেম্পারের মতো ভাইরাল রোগ ধরে যায় সহজে। সুকিয়া স্ট্রিটের বাসিন্দা কমলিকা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘কুকুরদের থেকেও বেড়ালের শ্রবণ ক্ষমতা অনেক বেশি। ফলে শব্দবাজির প্রভাব বেড়ালের উপরে বহু গুণ বেশি হয়। চোখের সামনে এক পরিচিতের বেড়ালকে এই শব্দের ভয়ে হৃদ্রোগে মারা যেতে দেখেছি। শত আলোচনাতেও কোনও বারই বাজি বন্ধ হয় না।’’

পশু চিকিৎসক দীপককুমার দে-ও সমান নিরুপায় ভাবে বললেন, ‘‘বাজির ভয় কাটানোর কোনও ওষুধ হয় না। পোষ্যের ঘন ঘন খিঁচুনি হচ্ছে জানিয়ে কত লোক যে এই সময়ে ফোন করেন! নার্ভ ঠান্ডা রাখার কয়েকটি ওষুধ বলে দেওয়া ছাড়া কোনও কিছু করার থাকে না।’’ পশু চিকিৎসক সুভাষ সরকারেরও বক্তব্য, ‘‘শ্রবণশক্তি যার যত বেশি, এই বাজিতে তার ততই বিপদ। তবে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ওদের সামলানোটা কোনও সমাধান হতে পারে না।’’

তা হলে উপায়? অভিনেতা তথাগত মুখোপাধ্যায় নিজের পোষ্যের যন্ত্রণার কথা জানিয়ে বললেন, ‘‘শব্দবাজি বন্ধের দাবিতে আমরা শিল্পীরা ভিডিয়ো বানাব ঠিক করেছিলাম। কোর্টের নির্দেশের উপরে ভরসা রেখে আপাতত সেটা স্থগিত রেখেছি। কিন্তু বাজি ফাটিয়ে অন্যকে অতিষ্ঠ করে তোলার প্রবণতার মধ্যে যে কোনও আনন্দই নেই, তা না বোঝা পর্যন্ত এই সমস্যার সমাধান হওয়া কঠিন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pet Court Verdict crackers Fireworks
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE