Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Child Health

Child health: কম ওজনের শিশুদের চিকিৎসায় দিশা দেখাচ্ছে হাসপাতাল

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রতিনিধিদল সরেজমিন দেখে গিয়েছে এই মহকুমা হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ ও সংলগ্ন সিক নিয়োনেটাল কেয়ার ইউনিটটি।

বি এন বসু মহকুমা হাসপাতালের সিক নিয়োনেটাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসা চলছে এক শিশুর।

বি এন বসু মহকুমা হাসপাতালের সিক নিয়োনেটাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসা চলছে এক শিশুর। —নিজস্ব চিত্র

বিতান ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২২ ০৯:০৮
Share: Save:

রাস্তাতেই সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক মহিলা। ব্যারাকপুরের বি এন বসু মহকুমা হাসপাতালের কর্মীদেরই কেউ দেখতে পেয়ে সদ্যোজাত এবং মাকে নিয়ে এসেছিলেন হাসপাতালে। মাত্রাতিরিক্ত কম ওজনের সেই সদ্যোজাতের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের জন্য ও মায়ের ওম পেতে ক্যাঙারু মাদার কেয়ারে ওই মহিলাকে অভ্যস্ত করাচ্ছেন সিক নিয়োনেটাল কেয়ার ইউনিটের চিকিৎসাকর্মীরা।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রতিনিধিদল সরেজমিন দেখে গিয়েছে এই মহকুমা হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ ও সংলগ্ন সিক নিয়োনেটাল কেয়ার ইউনিটটি। এই অত্যাধুনিক ইউনিটটি রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলির মধ্যে ‘রোল মডেল’ তকমার দাবি রাখে বলেও দরাজ শংসাপত্র দিয়েছেন তাঁরা। শুধু সরঞ্জামের দিক থেকে নয়, ইউনিটের চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের কম ওজনের শিশুদের সুস্থ রাখার জন্য যত্নের প্রক্রিয়াকেও সাধুবাদ জানান তাঁরা। ওই প্রতিনিধিদলে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্ম অধিকর্তা সুনীল গুপ্ত। তাঁর কথায়, ‘‘এই মহকুমা হাসপাতালের সিক নিয়োনেটাল কেয়ার ইউনিট সব দিক থেকেই উন্নত। রাজ্যের মধ্যে এটি রোল মডেল হওয়ার দাবি রাখে।’’

কী আছে এই ইউনিটে? হাসপাতালের তেতলায় প্রসূতি বিভাগের পাশেই রয়েছে সিক নিয়োনেটাল কেয়ার ইউনিট। কাচের দরজা পেরিয়ে ভিতরে ঢুকলেই সদ্যোজাতকে নিয়ে মায়েদের বসার জায়গা। সেখানেই চিকিৎসক প্রাথমিক পরীক্ষা করেন ও শিশুদের ওজন মাপা হয়। কান্না বা শারীরিক কষ্ট ভোলাতে আছে নানা রকমের খেলনা, টেডি বেয়ার। আর গান, গল্প শোনানোর জন্য হাসিখুশি চেহারার চিকিৎসাকর্মীরা তো আছেনই। করোনার জন্য বাড়তি সতর্কতা পোশাক থেকে হাত ধোয়ায়। বেসিন, সাবান, সবই আছে পাশেই খোলা প্যাসেজে। এর পরেই সিক নিয়োনেটাল কেয়ার ইউনিটটির মূল কক্ষ। সেখানে অবশ্য একমাত্র চিকিৎসক ও ভর্তি থাকা শিশু এবং তাদের মায়েদেরই প্রবেশের অনুমতি মেলে।

২৩ শয্যার এই ইউনিটে মোট সাত জন চিকিৎসককে নেতৃত্ব দেন বিভাগীয় প্রধান অর্পিতা দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘এই ইউনিটটি আমাদের কাছে মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ। প্রথম শিশুটি এসেছিল মাত্র ৬৫০ গ্রাম ওজনের। তাকে বাঁচানোই কঠিন ছিল। এখন তার দু’বছর বয়স। সম্পূর্ণ সুস্থ।’’ এখন এক কেজি ওজনের বেশ কয়েকটি শিশু সেখানে চিকিৎসাধীন। ২০১৩ সালে শুরু হওয়া এই ইউনিটে আপাতত ১৬ জন সদ্যোজাতের চিকিৎসা চলছে। তাদের কাউকে কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ, কাউকে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ, কাউকে আবার কলকাতার কোনও হাসপাতাল থেকে এনে ভর্তি করানো হয়েছে।

ইছাপুরের বাসিন্দা রুম্পা ঘোষ সদ্য মা হয়েছেন। তাঁর সন্তানও ওজন কম ও নানা সমস্যার কারণে এই ইউনিটে ভর্তি। রুম্পা বলেন, ‘‘আমরা প্রথমে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা করাচ্ছিলাম। কিন্তু সেখানে তেমন ভাল ফল মিলছিল না। এখানে আসার পরে ক্যাঙারু মাদার কেয়ার প্রক্রিয়ায় অনেকটা ভাল আছি আমি ও আমার সন্তান।’’ চিকিৎসকেরা জানান, এই ইউনিটে ফোটোথেরাপি মেশিন আছে। যার সাহায্যে জন্ডিস আক্রান্ত শিশুদের বিলিরুবিনের মাত্রা কমিয়ে দেওয়া যায়।

হাসপাতালের সুপার সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা আমাদের মতো করে চেষ্টা করছি। নতুন যন্ত্রপাতির পাশাপাশি এই ইউনিটে পারদর্শী এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের রাখার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। সেটাও এই সাফল্যের বড় কারণ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Health Hospitals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE