Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পরিচারিকাদের ইউনিয়নে জুজু দেখছেন গৃহস্থ

এক ধরনের বদলেরই সাক্ষী হল কলকাতা। যখন পঞ্চাননতলার সবিতা জানা, বনগাঁর বিলাসী বিশ্বাস, শোভাবাজারের মিঠু সাহা, আনন্দপুরের টুম্পা দাসেরা পরস্পরের গালে আবির মাখিয়ে দিলেন।

দাবি: অধিকার বুঝে নিতে রাজপথে পরিচারিকারা। শুক্রবার। ছবি: সুমন বল্লভ

দাবি: অধিকার বুঝে নিতে রাজপথে পরিচারিকারা। শুক্রবার। ছবি: সুমন বল্লভ

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৮ ০২:৫৩
Share: Save:

গেরস্ত কত্তা-গিন্নি আর বাড়ির কাজের মেয়ের সম্পর্কটাও আগের মতো নেই! শুক্রবার দুপুরে ফোনে আক্ষেপ করছিলেন সাহিত্যিক বাণী বসু।
ঠিক তখনই শিয়ালদহ থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের দিকে এগোচ্ছেন এক ঝাঁক গৃহপরিচারিকা। স্লোগান উঠছে, ‘আমরা ছাড়া চলবে না। বাসন মাজা হবে না’!

বলা যায়, এক ধরনের বদলেরই সাক্ষী হল কলকাতা। যখন পঞ্চাননতলার সবিতা জানা, বনগাঁর বিলাসী বিশ্বাস, শোভাবাজারের মিঠু সাহা, আনন্দপুরের টুম্পা দাসেরা পরস্পরের গালে আবির মাখিয়ে দিলেন। সদ্য গঠিত ট্রেড ইউনিয়নের স্বীকৃতি ছিনিয়ে নেওয়ার উদ্‌যাপন হল এই হোলিখেলাতেই। ঘণ্টায় ৫৪ টাকা ন্যূনতম মজুরি থেকে মাসে চার-পাঁচ দিন ছুটির দাবিতে গৃহস্থের জন্য সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বাণী। তাঁর কথায়, ‘‘এত টাকা ক’জন দিতে পারবেন? কাজের মেয়েরাও অন্যায় ভাবে ছুটি নিয়ে গৃহস্থকে ফ্যাসাদে ফেলেন।’’ পরিচারিকাদের কাজের শর্ত বিষয়ক আইনের দাবি মানলেও নৃত্যশিল্পী অলকানন্দা রায়ও সতর্ক— ‘‘ইউনিয়ন যেন গৃহস্থকে ব্ল্যাকমেল করার যন্ত্র না-হয়ে ওঠে!’’ এ দিন পরিচারিকারা রাজ্য সরকারকে স্মারকলিপি দিয়ে বলেছেন, সরকার, গৃহকর্তা ও পরিচারিকাদের ইউনিয়নকে নিয়ে গৃহশ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ গড়তে হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান শ্রম কমিশনার জাভেদ আখতার। তবে তাঁর দাবি, সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে পরিচারিকাদের চিকিৎসা, ছেলেমেয়ের পড়াশোনা ইত্যাদি খাতে নানা সুবিধা আছে।

পথে নামা ২৫০০-৩০০০ পরিচারিকার পিছনে রয়েছে কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। রাজনৈতিক দলের ট্রেড ইউনিয়নগুলিও এই আন্দোলনকে সাহায্য করছে। নারী অধিকার রক্ষা কর্মীরা পরিচারিকাদের অধিকারের লড়াইকেও তাঁদের কাজের অঙ্গ বলে মনে করেন। এ দিন সেই সব ট্রেড ইউনিয়নের নেতা ও সমাজকর্মীরাও পরিচারিকাদের মঞ্চে জড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু পরিচারিকাদেরও কাজের তালিম, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন বাণী ও অলকানন্দারা। আন্দোলনকারীদের সহায়ক মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মী অনিব্রত প্রামাণিকের কথায়, ‘‘জেলায় জেলায় শ্রম কমিশনারের দফতরে কিছু দক্ষতা বাড়ানোর তালিমের বন্দোবস্ত আছে। ইউনিয়নের সদস্যদের তাতে যুক্ত করতে চাই।’’

সল্টলেক, বালিগঞ্জ, নিউ আলিপুরে সক্রিয় একটি আয়া সেন্টারের কর্ণধার শর্মিলা চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘এখন ঢের বেশি শিক্ষিত মেয়েরা আয়ার কাজ করেন। তা-ও বাচ্চার কাজ করতে যাওয়ার আগে সপ্তাহখানেকের তালিম দেওয়া হয়।’’ কিন্তু সেন্টারের আয়াদের নিয়েও অভিযোগ কানে আসে! কয়েক মাসের মেয়ের মা, কেষ্টপুরের অদিতি বসু রায় বললেন, ‘‘দিনে ১২ ঘণ্টা করে আয়া বেশির ভাগ পরিবারই ক’মাসের বেশি রাখতে পারবে না। আগের দাইমাদের সঙ্গে বাচ্চা বা তার বাড়ির যে টান তৈরি হত, তা এখন গড়ে ওঠে না।’’ আয়াদের নিয়ে নানা অভিযোগও শোনা যায়। তাই বাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসিয়েছিলেন অদিতি।

পরিচারিকাদের আন্দোলনের যুক্তি মানলেও পারস্পরিক বিশ্বাসে চি়ড় ধরেছে বলেই অনেকের অভিমত। বাড়ির অভিভাবক হয়ে ওঠা সে কালের ‘গীতা মাসি’ বা ‘রেণুর মা’য়েদের জন্য আক্ষেপটাও অতএব ভেসে উঠছে এই নাগরিক রোজনামচায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Housemaids Protest Rally Agitation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE