Advertisement
০২ মে ২০২৪
বধূমৃত্যুর মিছিলে আরও এক সংযোজন, অভিযুক্ত শ্বশুরবাড়িই

‘টাকা না পেয়ে মেয়েটাকেই মেরে ফেলল’

গত ২৮ নভেম্বর বেহালার বুড়োশিবতলা মেন রোড এলাকার বাসিন্দা পূজা দাসের (২৪) সঙ্গে হরিদেবপুরের মতিলাল গুপ্ত রোড এলাকার বাসিন্দা স্বপন দাসের বিয়ে হয়।

ভাঙচুর করা হয়েছে পূজার (ইনসেটে) শ্বশুরবাড়িতে।

ভাঙচুর করা হয়েছে পূজার (ইনসেটে) শ্বশুরবাড়িতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:০৪
Share: Save:

বিয়ের ঠিক মাস দুয়েকের মাথায় এক তরুণীর রহস্যমৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল হরিদেবপুর থানার মতিলাল গুপ্ত রোড এলাকায়। রবিবার সকালে এই ঘটনায় মৃতার পরিজনেরা শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে হরিদেবপুর থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় মৃতার পরিবারের তরফে স্বামী, শাশুড়ি, ননদ ও ননদাইয়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুন এবং পণের দাবিতে বধূমৃত্যুর মামলা রুজু করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে মৃতার স্বামী স্বপন দাস ও ননদাই তাপস চন্দ্রকে। বাকিদের খোঁজ চলছে বলে জানায় পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৮ নভেম্বর বেহালার বুড়োশিবতলা মেন রোড এলাকার বাসিন্দা পূজা দাসের (২৪) সঙ্গে হরিদেবপুরের মতিলাল গুপ্ত রোড এলাকার বাসিন্দা স্বপন দাসের বিয়ে হয়। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই পণ চেয়ে পূজার উপরে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা অত্যাচার করতে থাকেন। পূজার মা নন্দিতা মাঝির অভিযোগ, ‘‘বিয়ের আগে কোনও পণের দাবি না করলেও বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আমার মেয়ের উপরে নানা ভাবে অত্যাচার শুরু করেন। মাস খানেক আগে চার লক্ষ টাকা দাবি করেছিল। দু’লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। বাকি দু’লক্ষ টাকা দিতে পারিনি বলে আমার মেয়েকে খুন করে দিল ওরা।’’ পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার সকাল আটটা নাগাদ পূজার স্বামী স্বপন দাস তার শাশুড়িকে ফোন করে জানান, পূজা অসুস্থ হয়ে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি। জামাইয়ের ফোন পেয়ে হাসপাতালে এসে জানতে পারেন, তাঁর মেয়ে মারা গিয়েছেন। হাসপাতালে মেয়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে বারবার জ্ঞান হারান পূজার বাবা বাপি মাঝি ও মা নন্দিতা মাঝি। নন্দিতাদেবীর অভিযোগ, ‘‘আমার মেয়ের কোনও রোগ ছিল না। আমার মেয়েকে শনিবার রাতে মেরে ফেলে শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছেন। ওর শাশুড়ি, স্বামী, ননদ ও ননদাইয়ের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নিক, এটুকুই চাই।’’

এক দিদিকে পূজা জানিয়েছিলেন শাশুড়ি তাঁর মেসেজ দেখেন। পূজার বাবা এবং মা (ডান দিকে)। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

বেহালার বুড়োশিবতলা মেন রোডে এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস পেশায় মাছ-ব্যবসায়ী বাপি মাঝির। মাত্র মাস দুই আগে অনেক ধারদেনা করে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। একমাত্র মেয়ের এই রহস্যমৃত্যুর জন্য তাঁর শ্বশুরবাড়িকেই বারবার দায়ী করছেন তিনি। বাপিবাবুর অভিযোগ, ‘‘হাসপাতালে যাওয়ার পরে জামাই আমাদের ফোনে জানান, রাতে আমার মেয়ে গলায় দড়ি দিয়েছে। কিন্তু আমার মেয়ে কখনও আত্মহত্যা করতে পারে না। আত্মহত্যাই যদি করে, তা হলে পুলিশকে না জানিয়ে তাঁর দেহ হাসপাতালে নিয়ে আসা হল কেন? তথ্য লুকোনো হচ্ছে।’’ মৃতার এক আত্মীয়া শুক্লা ঘোষালের প্রশ্ন, ‘‘শনিবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ পূজা মোবাইলে ওর ভাইয়ের সঙ্গে হোয়াটস্‌অ্যাপে অনেকক্ষণ কথা বলেছিল। তার পরে কী এমন ঘটল যে, রবিবার সকালেই তার মৃত্যু হল?’’ মৃতার ছোটমামি তামসী সর্দার বলেন, ‘‘পূজাকে যে মেরে ফেলা হয়েছে, তার ওর দেহ দেখেই বুঝতে পারি আমরা। ওর শরীরের একাধিক অংশে আঘাতের চিহ্ন ছিল। মুখ, গলা, হাতে রক্ত জমাট বেঁধে ছিল।’’ মৃতার আর এক আত্মীয় মঞ্জু সর্দারের অভিযোগ, ‘‘পূজাকে ওর শ্বশুরবাড়ি ভাল চোখে দেখত না, তা আমার মেয়েকে জানিয়েছে ও। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা শুনতে পাবে বলে আতঙ্কে ফোন করতে পারত না ও।’’

আরও পড়ুন: আত্মহত্যার ‘তত্ত্ব’ মানতে নারাজ মা

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন পূজার মৃত্যুর খবর পেয়ে বাঙুর হাসপাতালে মৃতার পরিজনেরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান। উত্তেজিত জনতা মৃতার স্বামী স্বপন দাসকে ধরে মারধর করেন। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে হরিদেবপুরে মৃতার শ্বশুরবাড়িতেও ভাঙচুর হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Housewife Dowry Murder Haridebpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE