Advertisement
০২ মে ২০২৪

ঘরে বধূর ঝুলন্ত মৃতদেহ, বিছানায় দুই নিথর সন্তান

রোজ সকালে সাতটার মধ্যেই ঘুম থেকে উঠে পড়ে নাতি-নাতনি এবং বৌমা। আটটার মধ্যে চলে আসে নাতি-নাতনির স্কুলগাড়ি। কিন্তু শুক্রবার সকালে সাড়ে সাতটা বেজে গেলেও বৌমা দরজা খোলেননি। তাঁর ঘরের দরজায় গিয়ে ধাক্কাধাক্কি করা সত্ত্বেও কোনও সাড়া আসেনি ভিতর থেকে। কিছুক্ষণ পরে প্রতিবেশীদের ডাকেন শাশুড়ি মায়াদেবী যাদব।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৫২
Share: Save:

রোজ সকালে সাতটার মধ্যেই ঘুম থেকে উঠে পড়ে নাতি-নাতনি এবং বৌমা। আটটার মধ্যে চলে আসে নাতি-নাতনির স্কুলগাড়ি। কিন্তু শুক্রবার সকালে সাড়ে সাতটা বেজে গেলেও বৌমা দরজা খোলেননি। তাঁর ঘরের দরজায় গিয়ে ধাক্কাধাক্কি করা সত্ত্বেও কোনও সাড়া আসেনি ভিতর থেকে। কিছুক্ষণ পরে প্রতিবেশীদের ডাকেন শাশুড়ি মায়াদেবী যাদব। তাঁরা এসে বন্ধ দরজা ভেঙে দেখেন, ঘরের সিলিং থেকে ঝুলছে বধূর দেহ। বিছানায় নিথর হয়ে পড়ে রয়েছে তাঁর দুই সন্তান।

পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে ঘটনাটি ঘটেছে কাশীপুর থানা এলাকার গোপাল চ্যাটার্জি লেনের এফসিআই বস্তিতে। মৃতার নাম সুমিত্রাদেবী যাদব (৩৫)। তাঁর দুই সন্তানের নাম আদর্শ যাদব (১১) এবং ঐশ্বর্যা যাদব (৭)। বড়বাজার এলাকার একটি স্কুলে আদর্শ সপ্তম এবং ঐশ্বর্যা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। সুমিত্রার স্বামী উমাশঙ্কর যাদব পেশায় লরিচালক। দিন পনেরো আগে তিনি নাসিকে লরি নিয়ে যান বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

এ দিন সুমিত্রার ঘর থেকে একটি হাতে লেখা চিরকুট উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। তাঁদের দাবি, ওই চিরকুটে পারিবারিক অশান্তির কথা লেখা রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও জানান, সংসারের আর্থিক অনটন নিয়ে সুমিত্রা এবং উমাশঙ্করের মধ্যে অশান্তি লেগেই থাকত। উমাশঙ্কর এবং সুমিত্রারা আদতে উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদ এলাকার বাসিন্দা। বছর পনেরো আগে তাঁদের বিয়ে হয়। পারিবারিক সূত্রের খবর, দাম্পত্যে অশান্তির জেরে সন্তানদের ফেলে এক বার দু’বছরের জন্য ফৈজাবাদ চলে গিয়েছিলেন সুমিত্রা। পরে উমাশঙ্করই তাঁকে বুঝিয়ে নিয়ে আসেন।

প্রাথমিক তদন্তের পরে গোয়েন্দাদের অনুমান, প্রথমে সন্তানদের মৃত্যু নিশ্চিত করে তার পরে আত্মঘাতী হন সুমিত্রাদেবী। বৃহস্পতিবার মাঝরাতে ওই ঘটনা ঘটেছে বলেই ধারণা পুলিশের।

পুলিশের অনুমান, পারিবারিক গণ্ডগোলের জেরেই ওই ঘটনা। পাশাপাশি অন্য সম্ভাবনার কথাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। গোপাল চ্যাটার্জি লেনের এফসিআই বস্তিতে একটি ঘরে দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন সুমিত্রাদেবী এবং তাঁর স্বামী উমাশঙ্কর। স্বামী কাজে বাইরে গেলে সন্তানদের নিয়ে রাতে ওই ঘরেই সুমিত্রাদেবী ঘুমোতেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে। এ দিন উমাশঙ্করের ভাই গৌরীশঙ্কর যাদব বলেন, “আমাদের মতো সব পরিবারেই কমবেশি অশান্তি রয়েছে। তার জেরে এমন পরিণতি হবে, তা কোনও দিন ভাবিনি।”

তদন্তে মায়াদেবীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, বৃহস্পতিবার রাতে খাওয়াদাওয়া শেষ করে সন্তানদের নিয়ে নিজের ঘরে ঘুমোতে যান সুমিত্রা। মায়াদেবী পুলিশকে জানান, স্কুলগাড়ি আসার কথা আটটা নাগাদ। দেরি দেখে পৌনে আটটা নাগাদ তিনি সুমিত্রার ঘরের দরজায় ধাক্কা দেন। তাঁর দাবি, সুমিত্রার ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীদের ডাকেন তিনি। তার পরে তাঁদের উপস্থিতিতেই ভাঙা হয় দরজা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে কাশীপুর থানা এবং পুলিশের গোয়েন্দারা।

কিন্তু দু’টি শিশুকে খুন করা হলেও পাশের ঘরে থাকা মায়াদেবী তা টের পেলেন না কেন? বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE