Advertisement
E-Paper

শিয়ালদহ সেতুর নীচে পুরসভাকে ভাড়া দিয়েই কারবার, মেরামতি কী ভাবে?

বাপি পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, “চাকরি পাইনি বলেই তো এখানে হকারি করছি। ব্রিজের স্বাস্থ্য খারাপ হলে নিশ্চয়ই ঠিক করতে হবে। কিন্তু আমার উপর অনেকেই এখন নির্ভরশীল। এখান থেকে চলে গেলে খাব কী? সব দিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।”

সোমনাথ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৮:২১

হুঁশ ফিরল মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর। এত দিন ‘বিপজ্জনক’ শিয়ালদহ উড়ালপুলের নীচেই দিব্যি জমিয়ে ব্যবসা করছিলেন কারবারীরা। এবার তাঁদের বুক কাঁপছে। তা সত্ত্বেও পেটের দায়ে সেতুর তলা থেকে সরতে চাইছেন না অধিকাংশ ব্যবসায়ী।

ইংরেজিতে স্নাতক হয়েও চাকরি পাননি বাপি নাথ। বাবার হাত ধরেই ছোটবেলা থেকে বিছানার চাদর বিক্রি করেনতিনি। এখন তাঁর দোকানে তিন জন কর্মচারী। বাপি পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, “চাকরি পাইনি বলেই তো এখানে হকারি করছি। ব্রিজের স্বাস্থ্য খারাপ হলে নিশ্চয়ই ঠিক করতে হবে। কিন্তু আমার উপর অনেকেই এখন নির্ভরশীল। এখান থেকে চলে গেলে খাব কী? সব দিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।”

এখানকার হকাররা প্রশাসনের উদাসীনতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। অভিযোগ, মানুষের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করছে সরকার। আর হবে নাই বা কেন? পুরসভার কোষাগারে তো টাকাও ঢুকছে। ভাড়া দিয়ে শিশির মার্কেটের প্রায় ১ হাজার ব্যবসায়ী পাকা দোকান করে রয়েছেন। আমাদের কোনও ভবিষ্যৎ নেই।

শিয়ালদহ উড়ালপুলে ফাটল। -নিজস্ব চিত্র।

মাঝেরহাট দুর্ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০টি উড়ালপুলের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত। তার মধ্যে অন্যতম এই শিয়ালদহ উড়ালপুল বা বিদ্যাপতি সেতু। কিন্তু এর আগে কেন মেরামতির কথা ভাবা গেল না, তা নিয়ে সরব সব মহলই। শিশির মার্কেটের ব্যবসায়ী এবং হকার মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার ব্যবসায়ীকে পুর্নবাসন দিয়ে কী ভাবে শিয়ালদহ বা বিদ্যাপতি সেতুর স্বাস্থ্য সারিয়ে তোলা হবে? বুঝতে পারছেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিকেরা।

শিয়ালদহ উড়ালপুলের হালহকিকত: দেখুন ভিডিয়ো

আরও পড়ুন- ফের ভাঙল সেতু, এ বার শিলিগুড়ির ফাঁসিদেওয়ায়​

আরও পড়ুন- ‘এ ভাবে ব্রিজ পড়লে তৃণমূল তো ছিঁড়ে খেত’

শিয়ালদহ উড়ালপুলে রাস্তার হাল। -নিজস্ব চিত্র।

তাই সময় নষ্ট না করে শনিবার ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুর ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন, ওরা কী ব্রিজের তলা থেকে সরতে চাইবেন? না সরলে কোনও ভাবেই মেরামতি সম্ভব নয়। এর আগেও কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ সংস্থা রাইটস-এর তরফ থেকে উড়ালপুল পরিদর্শন করা হয়েছে। তখন এই উড়ালপুলের দৈনদশা নিয়ে আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু এত দোকান থাকায় সেই সময় ব্রিজের পরীক্ষা করতে গিয়ে সমস্যা হয়েছিল।

শিয়ালদহ উড়ালপুলের এই রাস্তা কি ‘ফিট সার্টিফিকেট’ পাওয়ার যোগ্য? -নিজস্ব চিত্র।

শিশির মার্কেটের ‘শিয়ালদহ ফ্লাইওভার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরির বক্তব্য, “আমরা তো চিন্তাতেই রয়েছে। পুরসভা বৈঠক ডেকেছে। ১৯৮৪ সাল থেকে এখানে মার্কেট হয়েছে। এক হাজার দোকান রয়েছে। ৬ থেকে ৪২ বর্গফুটের মধ্যে বিভিন্ন মাপের দোকান রয়েছে। সেখানে বহু কর্মচারী কাজ করেন। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রায় ১৫ হাজার লোকের ভাতের ব্যবস্থা হয়।”

শিয়ালদহ উড়ালপুল নাকি কোনও ‘জঙ্গল’? -নিজস্ব চিত্র।

শুধু কী ব্যবসা? শিয়ালদহ উড়ালপুলের আশপাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি সরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম। স্টেশন দিয়ে লাখো লাখো লোক যাতায়াত করেন। কাছেই কোলে মার্কেট। বেলাঘাটা হয়ে বাইপাস, রাজাবাজার, কলেজস্ট্রিট হয়ে উত্তর কলকাতা, এদিকে মৌলালি, বেকবাগান, ধর্মতলা হয়ে দক্ষিণ কলকাতাতে যাওয়ার জন্যেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উড়ালপুল। হঠাৎ করে যদি মাঝেরহাটের মতো কোনও অঘটন ঘটে! কোন যাদু বলে এই উড়াপুল সারানো হবে? সরকারও জানে কি!

Sealdah Bridge majerhat bridge bridge mishap শিয়ালদহ উড়ালপুল Sealdah Flyover
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy