Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Kalighat Temple

Kalighat Temple: ভোর থেকেই বাঁধভাঙা ভিড়ে বিধির জলাঞ্জলি কালীঘাটে

গত দু’বছরে নানা পার্বণ উপলক্ষে প্রসাদী মিষ্টি তৈরি করেও বিক্রি না হওয়ায় লোকসানে পড়েছিলেন মন্দির সংলগ্ন দোকানগুলির মালিকেরা।

কালীঘাট মন্দির।

কালীঘাট মন্দির। —ফাইল চিত্র

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:০৮
Share: Save:

এক দিকে, করোনা সংক্রমণের ভয়ে বছরের প্রথম দিনে দরজা বন্ধ রাখল দক্ষিণেশ্বর মন্দির। আর অন্য দিকে, শনিবার ভোর চারটে থেকে রাত আটটা পর্যন্ত বেলাগাম ভিড়ে উপচে পড়ল কালীঘাট মন্দির। সেখানে সকাল আটটার পরে পরিস্থিতি

এমনই হয় যে, ভিড় আটকাতে এক ও তিন নম্বর গেট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। শুধু তা-ই নয়, মন্দিরের চার দিকে লোহার ব্যারিকেড বসিয়েও ভিড় আটকানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোনও ভাবেই দর্শনার্থীদের

ঢল নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কার্যত হিমশিম খেয়েছে পুলিশ। দর্শনার্থীদের অধিকাংশের মুখেই ছিল না মাস্ক। আর দূরত্ব-বিধির কথা যত কম বলা যায়, ততই ভাল। ঠেলাঠেলির ভিড়ে তা শিকেয় উঠেছিল ভোর থেকেই।

ভিড় যে হতে পারে, তা আন্দাজ করেছিল মন্দির কমিটি। সেই কারণে এ দিন গর্ভগৃহে সাধারণ দর্শকদের প্রবেশাধিকার ছিল না। কিন্তু তাতেও ভিড়ে লাগাম পরানো যায়নি। এমনটাই জানাচ্ছেন সেবায়েতরা।

এ দিন মন্দির খুলেছে সকাল ৬টায়। কিন্তু ভোর চারটে থেকেই লাইন পড়ে গিয়েছিল দু’নম্বর গেটের

সামনে। ভোর থেকেই মন্দিরের সমস্ত গেট-সহ আশপাশের এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছিল পুলিশ। দর্শনার্থীদের সচেতন করতে পুলিশ লাগাতার মাইকে ঘোষণা করলেও তাতে লাভ হয়নি। কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা এক সময়ে তাই বলেই ফেলেন, ‘‘আমাদের আর কিছু করার নেই। সামনে গিয়ে মাস্ক পরতে

বললে অনেকে তখন পরছেন। কিন্তু একটু সরে গেলেই সেটা থুতনির

নীচে নেমে যাচ্ছে।’’ আর এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘আমাদের মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। দর্শনার্থী থেকে পান্ডা, সকলের একটাই কথা— সংক্রমণ নিয়ে ভাববেন না। মায়ের কাছে এসেছি। তিনি সবাইকে

বিপদ থেকে বাঁচান। তাই আমাদের কিছু হবে না। এর পরে আর কী বলব বলুন।’’ মূল মন্দিরের সামনে দাঁড়ানো আর এক পুলিশকর্মীর সখেদ উক্তি, ‘‘শিয়ালদহ-বনগাঁ লোকালে কোনও দিন উঠেছেন? আমি ওই ট্রেনে যাতায়াত করি। আজ মন্দিরের ভিতরে যা অবস্থা, তাতে বনগাঁ লোকালের ভিড়ও হার মানবে।’’

গত দু’বছরে নানা পার্বণ উপলক্ষে প্রসাদী মিষ্টি তৈরি করেও বিক্রি না হওয়ায় লোকসানে পড়েছিলেন মন্দির সংলগ্ন দোকানগুলির মালিকেরা। কারণ, সংক্রমণের ভয়ে দর্শনার্থীদের সংখ্যা খানিকটা হলেও কম ছিল। কিন্তু এ দিন দেখা গেল একেবারে উল্টো চিত্র। সমস্ত মিষ্টি বেলা ১২টার মধ্যেই শেষ। তখন কোনও মতে আশপাশের এলাকা থেকে দুধ-ক্ষীর জোগাড় করে মিষ্টি তৈরি করা হয়।

এ দিন রাত আটটার সময়ে দেখা যায়, তখনও দু’নম্বর গেটের সামনে লম্বা লাইন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই গেট বন্ধ করা হবে বলে পুলিশকর্মীরা ঘোষণা করছেন। দর্শনার্থীদের অনেকেই তখন পুলিশকে

হাতজোড় করে বলেন, ‘স্যর, একটু দেখুন। অনেক দূর থেকে এসেছি। এ বার দক্ষিণেশ্বরও বন্ধ। নববর্ষে মায়ের মুখটা একটু দেখতে দিন।’’

কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা সাফ জানিয়ে দেন, মন্দির আটটাতেই বন্ধ হবে।

তখন কাছাকাছি দাঁড়ানো পুলিশকর্তাদের অনুরোধ করেন তাঁরা। যদিও তাতে লাভ হয়নি। তবে রাত সাড়ে আটটা নাগাদও মন্দিরের সামনে লাইন দেখা গিয়েছে।

প্রসাদী মিষ্টি বিক্রেতাদের কথায়, ‘‘আজ তো পুরো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। করোনা আবহে তিন বছর আমরা মাছি মারছিলাম। আজ লাভের মুখ দেখেছি। সংক্রমণ তো ছড়াবেই, তাই ওটা ভেবে লাভ নেই। অনেক দিন পরে একটু টাকার মুখ দেখেছি, এটাই স্বস্তির। করোনা হলে চিকিৎসা করাতেও তো টাকা লাগবে।’’

কালীঘাট মন্দিরের এক পান্ডা মঙ্গল ঘোষাল বললেন, ‘‘ভাবতেই পারিনি যে, এতটা ভিড় হবে! ভোর চারটে থেকে মানুষ

আসতে শুরু করেছিলেন। আমি সোজা মন্দিরে পৌঁছে গিয়েছিলাম। এখন রাত আটটা। শুধু জল আর মিষ্টি ছাড়া কিছু খাওয়াও হয়নি। খুব আনন্দ হচ্ছে, এত দিন পরে এ রকম ভিড় দেখে।’’

ভিড় এড়াতে মন্দির কমিটি কেন এ দিন মন্দির বন্ধ রাখল না, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন উঠেছে। সেবায়েত কাউন্সিলের সম্পাদক দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সংক্রমণ এড়াতে দক্ষিণেশ্বর মন্দির বন্ধ রাখা হল। কিন্তু এখানকার মন্দির কমিটি পরিস্থিতির গুরুত্বটাই বুঝতে পারেনি। তাই এমন বেলাগাম ভিড় হল।’’

অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে নিয়ে মন্দির কমিটির তরফে কোষাধ্যক্ষ কল্যাণ হালদার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘পরিস্থিতি যে এমন হবে, তা হয়তো আমরা, মন্দির কমিটির কর্তাব্যক্তিরা আন্দাজ করতে পারিনি। সেখানে গাফিলতি থাকতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kalighat Temple Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE