Advertisement
২০ মে ২০২৪

চাহিদা-জোগানের বিপুল ফাঁক, ফুলের দামও তাই তুঙ্গে

দুর্গাপুজোর বাজারে যাতে সরবরাহে টান না পড়ে, সে জন্য হিমঘরে পদ্ম মজুত করে রেখেছিলেন চাষিরা। পুজোর সময়ে তাই দাম বেশি হলেও পদ্মের জোগানে খামতি হয়নি। কিন্তু হিমঘরে সঞ্চিত সেই পদ্মে এখন পচন ধরতে শুরু করেছে।

পদ্মের বিকিকিনি। শুক্রবার, হাওড়ার জগন্নাথ ঘাটে। — দীপঙ্কর মজুমদার

পদ্মের বিকিকিনি। শুক্রবার, হাওড়ার জগন্নাথ ঘাটে। — দীপঙ্কর মজুমদার

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৪৪
Share: Save:

দুর্গাপুজোর বাজারে যাতে সরবরাহে টান না পড়ে, সে জন্য হিমঘরে পদ্ম মজুত করে রেখেছিলেন চাষিরা। পুজোর সময়ে তাই দাম বেশি হলেও পদ্মের জোগানে খামতি হয়নি। কিন্তু হিমঘরে সঞ্চিত সেই পদ্মে এখন পচন ধরতে শুরু করেছে। ফলে লক্ষ্মীপুজোর আগে বাজারে আকাল দেখা দিয়েছে পদ্মের। দামও আকাশছোঁয়া।

এমনিতেই পদ্মের ‘শত্রু’ শিশির। তাই আশ্বিন মাস পড়ার আগে থেকেই ফুলচাষিরা পদ্ম তুলে হিমঘরে মজুত করে রাখেন। তাঁরা জানান, যেহেতু এ রাজ্যে আলাদা করে ফুলের জন্য কোনও হিমঘর নেই, তাই প্রয়োজনীয় তাপমাত্রায় ফুল সংরক্ষণ করার ব্যবস্থাও নেই। হিমঘরের নির্দিষ্ট তাপমাত্রা মেনেই পদ্ম মজুত করে রাখতে হয়। প্রতি বছরই পুজোর পর থেকে তা পচতে শুরু করে। ফলে এ সময়ে বেশি নির্ভর করতে হয় টাটকা ফুলের উপরেই।

শুক্রবার মল্লিকঘাট ফুলবাজারে ‘দেড় সিঙ্গল’ এবং ‘সিঙ্গল’ পদ্মের দাম ছিল প্রতিটি ৩-৮ টাকা। পদ্মের কুঁড়ি বিক্রি হয়েছে ৫-৭ টাকা করে। তবে শুধু পদ্ম নয়। ঘূর্ণাবর্তের জেরে চলতি সপ্তাহেই বৃষ্টি হয়েছে রাজ্যে। ফলে পুজোর জন্য প্রয়োজনীয় ফুলের দাম বেড়েছে বলে দাবি করেছেন ফুল বিক্রেতারা। মল্লিকঘাট ফুলবাজার কমিটির সদস্য গৌতম সমাদ্দার জানান, হলুদ গাঁদার ২০টির মালা পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৩৫০-৪০০ টাকা করে। কমলা গাঁদার দাম ছিল তুলনায় কম। বিভিন্ন পাড়ার স্থানীয় ফুল বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ঝুরো হলুদ গাঁদা ও লাল গাঁদার দরও এ দিন ছিল অত্যন্ত চড়া, কেজি প্রতি ১২০-১৬০ টাকার মধ্যে।

চাষিরা আরও জানিয়েছেন, এ বার পুজোয় বৃষ্টির কারণে ক্ষতি হয়েছে গোলাপ, দোপাটির মতো পাপড়ি-যুক্ত ফুলেরও। এমনিতে দুর্গাপুজোর পরে ওই ধরনের ফুলের দাম কমার প্রবণতা থাকে। কিন্তু এ বার ক্ষতির কারণে সেই দামও নামেনি। এ দিন মল্লিকঘাটে প্রতি কিলো দোপাটির দাম ছিল ১২০ টাকা। অন্য দিকে, প্রতি কিলো অপরাজিতা বিক্রি হয়েছে ১০০-১২০ টাকা দরে।

কেন এই আকাশছোঁয়া দাম? মল্লিকঘাটের এক ফুল ব্যবসায়ী চণ্ডী সেনাপতি জানালেন, প্রতি বছরই পুজোর সংখ্যা বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পদ্ম-সহ বিভিন্ন ফুলের চাহিদাও। অন্য দিকে, গ্রামবাংলায় নগরায়ণ হওয়ার জেরে পদ্ম চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জলাভূমি কমছে। আগের তুলনায় কমছে পদ্মের উৎপাদন। ফলে চাহিদা ও জোগানের ফাঁক পূরণ করতে গিয়ে অনেকটাই নির্ভর করতে হচ্ছে ওড়িশার উপরে।

ফুলচাষিরা জানাচ্ছেন, কটক, সম্বলপুরের মতো জায়গা থেকে ছোট পদ্ম (সিঙ্গল কিংবা দেড় সিঙ্গল) কলকাতার বিভিন্ন বাজারে আসে। তবে ফুলপ্রেমীদের প্রথম পছন্দ পশ্চিমবঙ্গের গোল ‘ডবল’ পদ্ম। যা আসে মূলত সাঁকরাইল, পাঁশকুড়া, বোলপুর, উলুবেড়িয়া থেকে। সেই ফুলের দাম অবশ্য দুর্গাপুজোর সময় থেকেই তুঙ্গে রয়েছে। শুক্রবার মল্লিকঘাটে ‘ডবল’ পদ্মের দাম ঘোরাফেরা করেছে ১২ থেকে ১৫ টাকার মধ্যে। আজ, শনিবার লক্ষ্মীপুজোর দিনে সেই দাম ২০ টাকা ছুঁতে পারে বলে ধারণা চাষিদের। সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নারায়ণ নায়েক জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক কারণে যে জলাভূমিতে ২০০ পদ্ম ফোটে, সেখানে বর্তমানে ফুটছে মাত্র ২০টি পদ্ম। ফলে স্বভাবতই চাহিদার তুলনায় জোগান অনেক কম হচ্ছে। দামও তাই নামছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lotus flower demand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE