Advertisement
E-Paper

‘বিধি তৈরি হলে ভালই হত’, বলছেন উপাচার্য

রাজ্যপাল তথা আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠী দ্রুত বিধি তৈরির কথা বলেছিলেন উপাচার্যকে। কিন্তু প্রায় দশ মাস হতে চলল, এখনও বিশ বাঁও জলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশোধনী স্ট্যাচুট বা বিধি। কমিটি গড়ে নতুন বিধি তৈরিতে উদ্যোগী হলেও এপ্রিল মাসেও তা করে উঠতে পারলেন না কর্তৃপক্ষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ১৮:২২

রাজ্যপাল তথা আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠী দ্রুত বিধি তৈরির কথা বলেছিলেন উপাচার্যকে। কিন্তু প্রায় দশ মাস হতে চলল, এখনও বিশ বাঁও জলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশোধনী স্ট্যাচুট বা বিধি। কমিটি গড়ে নতুন বিধি তৈরিতে উদ্যোগী হলেও এপ্রিল মাসেও তা করে উঠতে পারলেন না কর্তৃপক্ষ। আর তার জেরেই অচলাবস্থা শুরু হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এর পিছনেও অবশ্য রাজনীতির গন্ধই পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ।

উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ২০১১ সালের ডিসেম্বরে বিধানসভায় রাজ্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিতে কিছু সংশোধনীর জন্য বিল পাশ করে। সেই মতো ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর হয়। তার পর থেকেই পুরনো কমিটি ভেঙে নতুন ভাবে কাজ শুরু করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু চার বছর পার হয়ে গেলেও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধনি বিধিই তৈরি করতে পারল না! এপ্রিলের ২৪ তারিখ সিন্ডিকেটেরও মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। তার আগে বিধি সংশোধন না হওয়ায় সেখানে মনোনীত ও পদাধিকার বলে থাকা সদস্যরাই কেবল থাকতে পারবেন। নির্বাচিত হতে পারবেন না কোনও সদস্যই। তা নিয়েই গুঞ্জন শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে।

বিধি সংশোধন না হওয়ার ফলে কী কা অসুবিধা হচ্ছে?

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষার মনোন্নয়ন ও গণতন্ত্র ব্যহত হচ্ছে। কী রকম? বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস, পরীক্ষা পদ্ধতি সহ পড়াশুনার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ের পথ ঠিক করার জন্যে প্রয়োজন ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের। এ ছাড়াও রয়েছে বোর্ড অফ স্টাডিজ। তাঁরাই সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে মানোন্নয়নের নির্দিষ্ট পথ বাতলে দেয়। ওই কাউন্সিলেই থাকেন প্রায় সমস্ত বিভাগের শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের নেওয়া সিদ্ধান্ত তাঁরাই সিন্ডিকেটে পেশ করেন। কারণ নির্বাচনে জিতে ওই কাউন্সিলের সদস্যদের একাংশকে আসতে হয় সিন্ডিকেটে। কিন্তু বর্তমানে সেই কাউন্সিলই নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে। কেন?

কী ভাবে সেই কাউন্সিল এবং বোর্ড অফ স্টাডিজ তৈরি হবে তা বিধিতে উল্লেখ থাকে। ফলে আগে নির্দিষ্ট করতে হয় বিধি। যে হেতু চার বছর ধরে বিধি সংশোধন হয়নি, ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোনও ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল! পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন হবে কি না, বা স্নাতক বা স্নাতকোস্তরে প্রশ্নের মধ্যেও কোনও পরিবর্তন হবে কি না তা নির্ণয় করার জন্যে রয়েছে বোর্ড অফ স্টাডিজ। বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটাও নেই! যে কারণে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের একাংশের।

সিন্ডিকেটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে রাজ্য সরকারের সংশোধনীতে। কিন্তু, বর্তমানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে কোনও শিক্ষক প্রতিনিধি নেই। ২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত চার বছর মনোনিত ও পদাধিকার বলে থাকা সদস্যরাই সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলেন। ফের সেই পথেই চলেছেন কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে এক কর্তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বিধিই তো তৈরি হল না। সে কারণে নির্বাচিত সদস্যদেরও সিন্ডিকেটে অংশ গ্রহণ করানো গেল না।’’ কিন্তু কেন বিধি তৈরি হয়নি? উত্তরে ওই কর্তার জবাব, ‘‘যাঁদের ওপর দায়িত্ব ছিল, তাঁরাই তো রিপোর্ট দেয়নি।’’ সে ক্ষেত্রে গণতন্ত্র বিঘ্নিত হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষক সংগঠন কুটার।

গত বছর ১ জুলাই তৎকালীন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস থাকার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই ছাত্রদের হাতে প্রহৃত হন শিক্ষকরা। এর পরে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন আচার্য তথা রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। ওই মাসেই অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হন সুগত মারজিত। তখনই রাজ্যপাল দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি করার কথা বলেন বলে জানিয়েছিলেন উপাচার্য। শিক্ষক সংগঠন কুটার প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক দিব্যেন্দু পাল বলেন, ‘‘আমরা যখন আচার্যের সঙ্গে দেখা করেছিলাম তখন উনিও আশ্বাস দিয়েছিলেন যে তিনি বিশ্ববিদ্যালের উপাচার্যকে দ্রুত বিধি তৈরির কথা বলেছেন। কিন্তু দশ মাস পার হলেও সেটা হল না।’’

তবে একাংশের অভিযোগ, বিধি না হলেও যে ভাবে অন্য সব কাজ চলছে সেই ভাবেই সিন্ডিকেটে নির্বাচন ও ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল গঠন করা যেত। কিন্তু ইচ্ছা করেই তা করেননি কর্তৃপক্ষ। কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বড় অংশের ব্যখ্যা, এতেও সরকারের হাত রয়েছে। কারণ সরকারের এটা অজানা নয় যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলের সংগঠন মজবুত নয়। সে ক্ষেত্রে সমস্ত ক্ষেত্রেই কোনও প্রতিনিধি নির্বাচিত হলে সেটি সিপিএমের সংগঠনই হবে। তাই বিধির অজুহাতে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন-ফেল করে উটকো দাবি, সুগতকে নিগ্রহ ছাত্রীদের

কিন্তু বিধি তৈরির কমিটিতে থাকা এক সদস্য কী বলেন?

এক সদস্যের কথায়, ‘‘আমাদের কাছে কোনও রকম সময় সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। কাজ চলছে। কবে শেষ হবে বলা যাচ্ছে না। সময় তো লাগবেই।’’ রাজ্যপালের কথা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজ্যপাল দ্রুত বিধি করার কথা বলেছেন সেটা আমি সংবাদমাধ্যমে জেনেছি। আমার কাছে এরকম কোনও নির্দেশ আসেনি।’’ অর্থাৎ তাঁর কথাতেই স্পষ্ট কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি তৈরির কাজ এখনও বিশ বাঁও জলে।

কী বলছেন উপাচার্য?

উপাচার্য সুগত মারজিতের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘বিধি তৈরি হলে ভালই হত।’’

Jus sugata marjit CU
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy