নির্মীয়মাণ সেই বাড়ি। সোমবার, একবালপুরে। — নিজস্ব চিত্র
বন্দর এলাকায় বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ নতুন নয়। নতুন নয় সব জেনেশুনে প্রশাসনের নির্বিকার থাকার অভিযোগও। কিন্তু সোমবার দুপুরে একবালপুরে একটি বাড়ির নির্মীয়মাণ ‘বেআইনি’ অংশ ভেঙে পড়ে পাঁচ জনের আহত হওয়া এবং তা নিয়ে গণ্ডগোলের সময়ে লাগোয়া আর একটি ‘বেআইনি’ নির্মাণের প্রোমোটারেরা হুমকি দেওয়ার পরে ফের নতুন করে নাড়াচাড়া পড়ল বিষয়টা নিয়ে। ফের অভিযোগ উঠল ‘দাদাগিরি’র। সামনে এল এই নির্মাণে পুলিশ ও পুরসভার একাংশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতের অভিযোগও।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেআইনি নির্মাণের এই প্রোমোটার-রাজের সঙ্গে জুড়েছে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। রাজনীতির কারবারিরা, তাদের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরা, পুলিশ-প্রশাসনের একাংশ এই বেআইনি কারবার থেকে মুনাফা লুটছে। বিপন্ন হচ্ছে সাধারণ মানুষদের জীবন। এলাকাবাসীর দাবি, পুলিশে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয় না। বহু ক্ষেত্রে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া হয় প্রতিবাদীকেই।
সোমবার দুপুরে একবালপুরের ব্রাউনফিল্ড রো-এর ওই নির্মীয়মাণ ছ’তলা বাড়ির দোতলার একাংশ ভেঙে পড়ে। পুলিশ জানায়, ওই সময়ে বাড়িটির সামনে ফুটপাথ লাগোয়া একটি কলে স্নান করছিলেন পাঁচ জন। জখম হন তাঁরাই। সকলকেই প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, ওই বাড়িটির তিনতলা পর্যন্ত নির্মাণের অনুমতি ছিল। এত দিন তিনতলাই ছিল বাড়িটি। আচমকা তার উপরে আরও তিনটি তলার নির্মাণ শুরু হয়েছিল। সেই নির্মাণ চলাকালীনই এই ঘটনা।
দুর্ঘটনার পরে এলাকায় গোলমাল শুরু হয়। ওই বাড়ির প্রোমোটার হরি শ্রীরাজের নামে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়। অভিযোগ, স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ আহতদের উদ্ধার করতে গেলে বাধা দেন এলাকারই কিছু যুবক। বাসিন্দাদের সন্দেহ, স্থানীয় ‘দাদা’রই লোক ওই যুবকেরা। উদ্ধারকারীদের ওই যুবকেরা মারধরও করেন বলে অভিযোগ ওঠে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশকে লাঠিচার্জও করতে হয়। তাতেও কয়েক জন আহত হন।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের সামনেই ‘বেআইনি নির্মাণে পুলিশি মদত’ নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগ, সেই বিক্ষোভ চলাকালীনই ফের ‘পুলিশকে জানালে দেখে নেওয়া’র হুমকি দিতে শুরু করেন পাশের আর একটি বেআইনি নির্মীয়মাণ বহুতলের দুই প্রোমোটার। বাসিন্দারা তাদের পুলিশে দেন। পরে সরফরাজ আলি এবং ওয়াসিম আলি নামে ওই দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ব্রাউনফিল্ড রো-এর ঘটনাস্থলের পাশেই থাকেন অনন্ত পাল। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সকলে মিলে পুরসভার ডিজি (বিল্ডিং) থেকে মেয়র, থানা থেকে ডেপুটি কমিশনার, সকলের কাছেই কাজ বন্ধ করার আবেদন জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু সব জায়গা থেকেই সেই সব চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার ছাড়া কিছুই পাইনি। এখন তো দুষ্কৃতীরাই হুমকি দিচ্ছে।’’
কী বলছে পুরসভা ও পুলিশ?
৭৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের রাম পিয়ারি রাম বলেন, ‘‘পুরসভাকে আমি জানিয়েছি। কিন্তু আজকাল স্থানীয় ভাবে বারণ করলেও কেউ কথা শুনতে চায় না।”
কলকাতা পুলিশের ডিসি সুদীপ সরকার অবশ্য বলেন, ‘‘পুলিশি মদতে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। শাসক-বিরোধী যেই অভিযোগ করুক না কেন, আমরা সব সময়েই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিই।’’
যদিও পুলিশের একাংশই জানিয়েছে, কলকাতা পুরসভার ৭৭, ৭৮ এবং ৭৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ২০০টি-র মতো বেআইনি নির্মাণ চলছে। এর মধ্যে একবালপুরের এম এম আলি রোড, একবালপুর লেন, ডাঃ সুধীর বসু রোড, ইব্রাহিম রোড, দক্ষিণ বন্দরের কার্ল মার্কস সরণি-সহ একাধিক এলাকা রয়েছে। কোথাও দোতলা পর্যন্ত নির্মাণের অনুমতি থাকলে সেখানে চারতলার উপরে ঢালাই হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এক মাসের মধ্যেই চার-পাঁচটি তলা নির্মাণ হয়ে যাচ্ছে বহু ক্ষেত্রেই। প্রতিবাদ করলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy