Advertisement
E-Paper

পাঁচ দিন পথে পড়ে, উদ্ধারে এগিয়ে এলেন শুধু এক জনই

ডিভাইডারের উপরে শুয়ে এক যুবক। গায়ে কম্বল। কেউ দেখেছেন, কেউ দেখেও দেখেননি, কেউ খেয়াল করেছেন, কেউ করেননি। এ ভাবেই কেটে গিয়েছে পাঁচ দিন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৩৫
হাসপাতালের পথে। — নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালের পথে। — নিজস্ব চিত্র

ডিভাইডারের উপরে শুয়ে এক যুবক। গায়ে কম্বল। কেউ দেখেছেন, কেউ দেখেও দেখেননি, কেউ খেয়াল করেছেন, কেউ করেননি। এ ভাবেই কেটে গিয়েছে পাঁচ দিন।

অবশেষে এক ব্যক্তি সেই যুবকের কাছে গেলেন। কম্বল তুলে দেখলেন যুবকের একটি পা ক্ষতবিক্ষত, গ্যাংগ্রিন হয়ে গিয়েছে। তিনিই যুবককে উদ্ধার করে প্রথমে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতাল ও পরে এনআরএসে ভর্তি করান। ঘটনাচক্রে উদ্ধারকারী ব্যক্তির আবার একটি হাত নেই। দুর্ঘটনায় তাঁর হাত কাটা পড়েছিল।

রবিবার সল্টলেকের ১২ নম্বর ট্যাঙ্ক এলাকার ঘটনা। সন্ধ্যায় এনআরএসে ওই যুবকের পা খতিয়ে দেখেন চিকিৎসকেরা। পা বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। চিকিৎসকদের কাছে ওই যুবক দাবি করেছেন, কিছু দিন আগে গাড়ির ধাক্কায় পায়ে আঘাত লেগেছিল তাঁর। প্রশাসনের কাছে এত দিনেও পৌঁছয়নি ঘটনাটি।

সল্টলেকের ১২ নম্বর ট্যাঙ্কের কাছে রবিবার সকালে একটি দোকানে চা খেতে গিয়েছিলেন সুকান্তনগরের বাসিন্দা পেশায় গৃহশিক্ষক অশোকদেব চৌধুরী। ঘটনাচক্রে তিনি আবার সল্টলেকে টাউন কংগ্রেসের (২) এর সভাপতিও।

দোকান থেকেই শুয়ে থাকা যুবকের দিকে চোখ চলে যায় তাঁর। দোকানদারের কাছে জানতে পারেন পাঁচ দিন ধরে ওভাবে শুয়ে ওই যুবক। তাঁর নাম বাপি মণ্ডল (৩৪)। চিকিৎসক ও অশোকবাবুকে নিজের পরিচিতি জানান বাপি। ছোটবেলায় জামশেদপুর থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে তিনি সল্টলেকের ১২ নম্বর ট্যাঙ্কের কাছে একটি ঝুপড়িতে উঠে এসেছিলেন। সেখানেই বড় হওয়া। রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতেন। এখন কাজ নেই।

প্রশ্ন উঠেছে, এক জন ব্যক্তি ৫ দিন ধরে পড়ে রইলেন, কেন প্রশাসনের চোখে পড়ল না। খোঁজ নিতে কেউ এগিয়ে গেলেন না? স্থানীয়েরা কেউ কেউ বলেছেন, অনেকেই হয়তো ‘নেশা’ করে পড়ে থাকে, চোখে পড়লেও কেউ এগিয়ে যেতে রাজি হন না। এগিয়ে গেলেও অনেক ক্ষেত্রে থানা-পুলিশের ঝামেলায় পড়তে হয়। যেমন, বাপিকে হাসপাতালে ভর্তি করা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতে হিমসিম খেতে হয়েছে বলে অভিযোগ খোদ অশোকবাবুরই।

সল্টলেকের বাসিন্দাদের একটি সংগঠনের নেতা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘ইঁদুর দৌড়ের এই জীবনে ভীষণ অমানবিক হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু প্রশাসন কেন জানতে পারল না?’’ স্থানীয় ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নীলাঞ্জনা মান্না বলেন, ‘‘আমাদের কাছে খবর এলে পদক্ষেপ করি। এমন খবর পাইনি। খোঁজ নেব।’’ স্থানীয় পুর প্রশাসনের কাছে খবর নাও যেতে পারে, কিন্তু যে রাস্তায় ২৪ ঘণ্টা নজরদারি থাকে, এক জন পাঁচ দিন ধরে সেখানে পড়ে রয়েছেন, অথচ টেরই পেল না পুলিশ? তাই নজরদারি নিয়েও জোরদার প্রশ্ন উঠেছে।

বিধাননগর এক পুলিশ কর্তা জানান, ঘটনাটি তাঁদের জানা নেই। নজরদারি আগের থেকে বেড়েছে। তার পরেও কেন নজরে এল না, খোঁজ করা হবে।

Youth Injured Road
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy