গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বেআইনি বহুতল ভেঙে ১২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় পুর প্রশাসনের ভূমিকার সমালোচনায় সরব হলেন ‘ইনস্টিটিউট অব টাউন প্ল্যানার্স, ইন্ডিয়া’ (আইটিপিআই)-র রাজ্য শাখার নগর পরিকল্পনাবিদেরা। মঙ্গলবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক বৈঠকে তাঁরা সাফ বলেন, ‘‘আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রশাসনিক বিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে নিয়ম-বহির্ভূত অতিরিক্ত নির্মাণে অনুমোদন একটি বিপজ্জনক ইঙ্গিত। স্রেফ অর্থের বিনিময়ে অবৈধ নির্মাণকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে অবৈধ নির্মাণের দিকে ঝোঁক বাড়ছে। অসাধু নির্মাণ ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত হচ্ছেন। এই অনিয়ম অবিলম্বে বন্ধ করতেই হবে।’’
কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন ডিজি (টাউন প্ল্যানিং) দীপঙ্কর সিংহের অভিযোগ, ‘‘২০১৪ সালে পুরসভা থেকে আমি চাকরি ছাড়ার পরে ডিজি (টাউন প্ল্যানিং) পদটিই অবলুপ্ত হয়েছে। অথচ, শহরে নির্মাণকাজ নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব ডিজি (টাউন প্ল্যানিং)-র উপরেই ন্যস্ত ছিল। সেই সঙ্গে অন্তত ১০টি ডেপুটি সিটি আর্কিটেক্ট পদ ছিল। চার জন অ্যাসিস্ট্যান্ট টাউন প্ল্যানার ছিলেন। অথচ, বর্তমানে এই সমস্ত পদ বিলুপ্ত। স্থাপত্য ও পরিকল্পনার বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ আধিকারিকেরা এই কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন।’’ তাঁর বক্তব্য, নিয়ম-বহির্ভূত নির্মাণ কোনও ভাবেই বৈধতা পেতে পারে না।
শিবপুর আইআইইএসটি-র প্রাক্তন রেজিস্ট্রার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘বিল্ডিং আইন অনুযায়ী, নির্মাণের অনুমোদনের জন্য গঠিত কমিটিতে (এমবিসি) ইনস্টিটিউট অব টাউন প্ল্যানার্সের এক জন প্রতিনিধি থাকার কথা। কিন্তু আইটিপিআই-এর প্রতিনিধিকে মিউনিসিপ্যাল বিল্ডিং কমিটিতে আমন্ত্রণ জানানো বন্ধ হয়েছে। শহরের নির্মাণকাজ বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ও পরিবেশ রক্ষা করে পরিচালনার জন্য পরিকল্পনাবিদদের নাম দিয়েছিলাম, যাঁরা স্বেচ্ছায় পুরসভাকে সাহায্য করতে পারেন। কিন্তু ওই সব প্রস্তাব পুর কর্তৃপক্ষ এড়িয়ে গিয়েছেন।’’
গার্ডেনরিচের ঘটনার পরে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, বেআইনি নির্মাণের খবর পুরপ্রতিনিধিদের জানার কথা নয়। এ দিন নগর পরিকল্পনাবিদেরা মেয়রের বক্তব্যের প্রতিবাদ করে জানান, নিজের ওয়ার্ডে বেআইনি নির্মাণ হলে পুরপ্রতিনিধি যদি সেই খবর না রাখেন, তা হলে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। এ দিন আইটিপিআই-এর রাজ্য শাখার তরফে রাজ্যের প্রতিটি পুরসভা, মিউনিসিপ্যালিটি এবং ডেভেলপমেন্ট অথরিটির জন্য একাধিক প্রস্তাব জরুরি ভিত্তিতে বিবেচনার জন্য আনা হয়। যেমন, ১) শহরের জমিকে নির্মাণকাজে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আগামী দিনের জমির প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিতে হবে। ২) শহরের পুকুর, খাল, নদীর পাড়, গাছ-গাছালি, মাঠ ও খোলা জমির সামঞ্জস্যপূর্ণ সংরক্ষণ করত হবে। ৩) বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে অবৈধ নির্মাণ অর্থের বিনিময়ে বৈধ করা যাবে না। ভেঙে ফেলতে হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)