Advertisement
০২ মে ২০২৪
Mysterious death

পাওনাদারদের থেকে বাঁচতেই আত্মঘাতী মা-মেয়ে, দাবি তদন্তে

যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা পুলিশি জেরায় জানিয়েছেন, গৌতম ও গোপা দালালির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ফ্ল্যাট, বাড়ির মিউটেশন কিংবা ট্রেড লাইসেন্স করিয়ে দিয়ে বিনিময়ে টাকা নিতেন ভাইবোন।

An image of the dead body

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৩ ০৭:১২
Share: Save:

দালালির টাকা নিয়েও কাজ করে দিতে পারেননি। ফলে পাওনাদারদের হুমকি আসছিল। সেই ধাক্কা সামলাতে না পেরেই আত্মঘাতী হয়েছেন কেষ্টপুরের প্রফুল্লকাননের বাসিন্দা গোপা রায় ও তাঁর মেয়ে সুদেষ্ণা রায়। আত্মহত্যার জন্য নরম পানীয়ের সঙ্গে কার্বলিক অ্যাসিড মিশিয়ে পান করেছিলেন তাঁরা। প্রফুল্লকাননের একটি ফ্ল্যাটে মা-মেয়ের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে এমনটাই জানাল বিধাননগর কমিশনারেট।

প্রফুল্লকাননের একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন গোপা ও সুদেষ্ণা। গোপার ভাই গৌতম রায় বিধাননগর পুরসভার অস্থায়ী কর্মী। তিনিই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, গোপার লেখা সুইসাইড নোট অনুযায়ী, যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা পুলিশি জেরায় জানিয়েছেন, গৌতম ও গোপা দালালির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জমির চরিত্র বদল, ফ্ল্যাট, বাড়ির মিউটেশন কিংবা ট্রেড লাইসেন্স করিয়ে দিয়ে বিনিময়ে টাকা নিতেন ভাইবোন। সেই মতো অগ্রিম নিয়েও বেশ কিছু কাজ করাতে না পারার অভিযোগ ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে। এ জন্য পাওনাদারেরা টাকা ফেরত দিতে চাপ দিচ্ছিলেন গোপা ও গৌতমকে।

পুলিশ জানায়, গোপার সুইসাইড নোটে সুব্রত ধর, আবদুল্লা, জিয়াউল, তপন বোধক ও রূপা বোধকের নাম পাওয়া যায়। তদন্তে জানা গিয়েছে, দালালি বাবদ তাঁরা গোপা ও গৌতমকে বিভিন্ন ভাবে ৩০-৪০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের কাজ গৌতম করে দিতে পারেননি। অভিযোগ, টাকা ফেরতের জন্য রবিবার সবাই মিলে প্রফুল্লকাননের ওই ফ্ল্যাটে যান। গৌতম ও গোপাদের শাসানি দেওয়া হয়। এমনকি, যাবতীয় ঘটনার স্বীকারোক্তি জোর করে কাগজে লিখিয়ে তাঁদের দিয়ে সই করিয়ে নেওয়া হয়। এতেই গোপারা সবাই ঘাবড়ে যান।

পুলিশের দাবি, গৌতম জানিয়েছেন, চাপের মুখে পড়ে দিদির পরামর্শে তিনি রবিবারই তারাপীঠে পুজো দিতে ছুটে যান। ফেরেন গভীর রাতে। কিন্তু অনেক ডাকাডাকি করেও গোপার সাড়া না পেয়ে গৌতম বিষয়টি আবাসনের কেয়ার টেকারকে জানান। কেয়ারটেকার এবং আবাসনের অন্য বাসিন্দারা মিলে ফ্ল্যাটের দরজায় ধাক্কা দেন। সবাই মিলে দরজা ভেঙে দেখেন, শৌচাগারে গোপার মেয়ে সুদেষ্ণা পড়ে রয়েছেন। তাঁর মুখে গ্যাঁজলা। পড়ে ছিলেন গোপাও। তাঁরও মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা উঠছিল। ঘর থেকেই কার্বলিক অ্যাসিড ও নরম পানীয়ের বোতল উদ্ধার হয়। পুলিশের দাবি, দরজা ভেঙে গোপাদের উদ্ধারপর্ব চলাকালীন গৌতম নিজেও কার্বলিক অ্যাসিডের বোতলে চুমুক দিয়েছিলেন। যদিও সেটিতে কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের তিন জনই বিধাননগর পুরসভার অস্থায়ী কর্মী। গৌতমও ওই পুরসভার অস্থায়ী কর্মী। দালালি তথা ফ্ল্যাটেরমিউটেশন ও ট্রেড লাইসেন্স বার করে দেওয়ার সঙ্গে তাঁদের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় নড়ে বসেছেন পুরসভার আধিকারিকেরাও। এক পদস্থ আধিকারিক জানান, পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। কী ভাবে ওই দালালি চলত, চক্রে কারা ছিল, সবটাই খোঁজ নেওয়া হবে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ দিকে, মঙ্গলবার ধৃত পাঁচ জনকে ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে জামিন পান তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mysterious death Debt police investigation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE