মালগাড়ির ধাক্কাতেই বছর পঞ্চান্নের মহিলা ছিটকে পড়েছিলেন রেললাইন ঘেঁষা আবর্জনার স্তূপে।আর তাতেই তাঁর শরীরের উপরের অংশ ঢুকে গিয়েছিল নালার মধ্যে। বেলঘরিয়ায় রেললাইনের পাশের নালা ও আবর্জনার স্তূপ থেকেমহিলার দেহ উদ্ধারের ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তের পরে এমনই দাবি পুলিশের। ওই মহিলার পরিচয়ও জানা গিয়েছে। পুলিশজানাচ্ছে, মৃতার নাম আপুরা শিকারি (৫৫)। তাঁর বাড়ি হাড়োয়ার কুলটি লকগেট এলাকায়।
পুলিশ জানিয়েছে, ঠিকাদারের অধীনে জলাশয়, নালা সাফাইয়ের কাজ করতেন আপুরা। সোমবার সকালে ঠিকাদারের ভাড়াগাড়িতে করেই অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে বেলঘরিয়ায় কাজে এসেছিলেন। এর পরে সকাল ১০টা নাগাদস্থানীয়েরা রেললাইন ঘেঁষা আবর্জনার স্তূপের পাশে নালায় অর্ধনগ্ন একটি মাথা ও হাত ঢুকে থাকতে দেখেন। দেহের একটি পাআবর্জনার নীচে মুড়ে ছিল, আর একটি পা উপরের দিকে ছিল। সেই পায়ে গামছা বাঁধা ছিল। সেইদেহ উদ্ধার নিয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে টানাপড়েন চলে রেল পুলিশ ও বেলঘরিয়া থানার মধ্যে।শেষে বেলঘরিয়া পুলিশ উদ্ধার করলে দেখা যায়, সেটি এক জন মহিলার দেহ।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, ওই দিন সকালে নালারআবর্জনা সাফ করার সময়ে মালগাড়ির ধাক্কায় আপুরা ছিটকে যান। এর পরে রেল পুলিশ তদন্তভার নেয়। খোঁজ মেলে ঠিকাদার আলিম মোল্লারও। তিনিতদন্তকারীদের জানান, সকালে তাঁরা বেলঘরিয়ায় কাজে এসেছিলেন। চার জন করে এক-একটি দলে ভাগ হয়ে কাজ করছিলেন।বার বার করে আপুরাকে সতর্ক করা হয়েছিল রেললাইনের ধার থেকে সরে দাঁড়াতে। কিন্তুতার পরেও তিনি অসতর্ক ভাবে রেললাইনে উঠে যান। এর পরে আচমকাই মালগাড়ির ধাক্কায় ছিটকে পড়েন।
পুলিশের দাবি, অন্য সাফাইকর্মীরা দাবি করেছেন, আচমকা এইঘটনায় তাঁরা হতবাক হয়ে যান। পায়ে গামছা বেঁধে আপুরাকে টেনে তোলার চেষ্টা করেওপারেননি। শেষে ভয় পেয়ে ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যান সকলে। তদন্তকারীদের আরও দাবি, ছিটকে পড়ার সময়ে মহিলারপোশাক গুটিয়ে গিয়েছিল। নালার ভিতরে শরীর ঢুকে যাওয়ায় তা উপর থেকে দেখা যায়নি। ময়না তদন্তেও ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যুবলে জানানো হয়েছে। অন্য দিকে, ওই মহিলার পরিজনদের তরফেকোনও অভিযোগ করা হয়নি।
মঙ্গলবার ময়না তদন্তের পরে বিকেলে দেহ নিয়ে বাড়ি যানআপুরার পরিজনেরা। তাঁর ছেলে শুকুর আলি শিকারি জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে আপুরাঠিকাদারের অধীনে সাফাইয়ের কাজ করতেন। শুকুর বলেন, ‘‘মায়ের উপার্জনেই কোনও মতে সংসার চলত। এখন কীহবে, বুঝতে পারছি না। রাজ্য সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন করছি।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)