মা, বাবা, দুই দিদি মারা গিয়েছেন আগেই। মেজদাও বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। সার্ভে পার্কের বাড়িতে একাই থাকতেন বড়দা। বহু বছর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ নেই। সম্প্রতি সেই বড়দার খোঁজ করতে সার্ভে পার্কের বাড়িতে গিয়ে হতভম্ব ছোট বোন!
বড়দা বাড়িতে নেই। ওই ঠিকানায় এখন অন্য কেউ থাকেন। তাঁরাও বড়দার খোঁজ দিতে পারলেন না। পাড়াপড়শিদের জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে ছোট বোনের। শুনলেন, দাদা মারা গিয়েছেন! অথচ তিনি কিছুই জানেন না। ৬৩ বছরের সেই বৃদ্ধা তখন ছুটলেন কলকাতা পুরসভায়। দাদা মারা গিয়েছেন যখন, তখন তাঁর মৃত্যুর শংসাপত্র তো থাকবে! মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন বৃদ্ধা। কিন্তু মেয়রের কথামতো সংশ্লিষ্ট দফতরে গিয়ে জানতে পারলেন, তাঁর বড়দার মৃত্যুর শংসাপত্র পুরসভার কাছে নেই। তা হলে দাদা গেলেন কোথায়? দাদা সত্যিই মারা গিয়েছেন, না কি বেঁচে আছেন? উত্তর পেতে এ বার কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ সেই বৃদ্ধা।
বৃদ্ধা আদালতে জানিয়েছেন, তাঁরা পাঁচ ভাইবোন। দুই দাদা এবং তিন বোন। বাবার মৃত্যু হয়েছে ২০০২ সালে। মা মারা যান ২০১১ সালে। মায়ের মৃত্যুর পরেই মেজদা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। পরে জানা গিয়েছিল, তিনি দিল্লিতে রয়েছেন। সেখানে স্থায়ী ভাবে বসবাস করা শুরু করেছেন। কিন্তু বড়দা, বড়দি এবং মেজদি তিন জনের কেউই বিয়ে করেননি। তাঁরা একসঙ্গে সার্ভে পার্কের বাড়িতে থাকতেন।
মামলাকারী জানিয়েছেন, মেজদা বাড়ি ছাড়ার পর বড়দিও ২০১৫ সালে মারা যান। তার পর থেকে বড়দা আর মেজদির সঙ্গে তাঁর সেই ভাবে কোনও যোগাযোগ ছিল না। বিয়ের পর তিনিও অন্য জায়গায় থাকছিলেন। নানা কারণে সার্ভে পার্কের বাড়িতে যাতায়াতই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এর পর ২০২২ সালে হঠাৎ বৃদ্ধা জানতে পারেন, কোনও এক অজ্ঞাত কারণে মেজদিও মারা গিয়েছেন। কিন্তু তখন বড়দার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি। সম্প্রতিই তিনি জানতে পারেন, বড়দা বাড়ি বিক্রির তোড়জোড় করছেন। সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে কথা বলতেই সার্ভে পার্কের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তখনই জানতে পারেন, দাদা নাকি মারা গিয়েছেন!
বৃদ্ধা জানান, দাদার মৃত্যুর খবর শুনে তিনি স্থানীয় লোকেদের সঙ্গেও কথা বলেছিলেন। তাঁরা জানিয়েছেন, গত বছর ডিসেম্বর মাসে তাঁর দাদাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। সেখানে ২০ ডিসেম্বর তারিখে তাঁর দাদার মৃত্যু হয়। বৃদ্ধার প্রশ্ন, যদি তা-ই হয়, তা হলে দাদার মৃত্যুর শংসাপত্র কেন মিলছে না? কেউ কেন কোনও জবাব দিতে পারছেন না?
উচ্চ আদালত মামলাটি গ্রহণ করেছে। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের বেঞ্চে মামলাটি উঠেছে। আগামী ১৩ জুন মামলার শুনানি।