Advertisement
E-Paper

দশতলায় পড়ে দেহ, যুবকের মৃত্যু ঘিরে রহস্য সল্টলেকে

তদন্তে জানা যায়, বুধবার দুপুর দুটো নাগাদ অফিসে এসেছিলেন অভিষেক। সন্ধে সাতটার কিছু আগে টিফিনের সময়ে তিনি অফিসের ঘর থেকে বেরিয়ে ওই তলারই দমকলের জন্য তৈরি জায়গায় (ফায়ার অ্যাসেম্বলি পয়েন্ট) গিয়ে দাঁড়ান। খানিক পরেই ভারী কিছু পড়ার শব্দ শোনা যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৬
অঘটন: (বাঁ দিকে) এই বহুতলেরই চোদ্দোতলা থেকে দশতলার বারান্দায় পড়ে মৃত্যু হয় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীর। (ডান দিকে) যেখানে পড়ে দেহটি।
 বৃহস্পতিবার সল্টলেকে। ছবি: শৌভিক দে

অঘটন: (বাঁ দিকে) এই বহুতলেরই চোদ্দোতলা থেকে দশতলার বারান্দায় পড়ে মৃত্যু হয় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীর। (ডান দিকে) যেখানে পড়ে দেহটি। বৃহস্পতিবার সল্টলেকে। ছবি: শৌভিক দে

কেষ্টপুরে বিমানসেবিকার মৃত্যু-রহস্যের রেশ মিটতে না মিটতেই এ বার এক বিপিও কর্মীর মৃত্যু নিয়ে ধন্ধে পড়েছে পুলিশ।

বুধবার রাতে সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরের একটি বহুতল থেকে পড়ে মারা গিয়েছেন অভিষেক বাউড়ি (২৪) নামে ওই যুবক। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে
তাঁর পরিবার। পুলিশ জানায়, পাঁচ নম্বর সেক্টরের ‘গোদরেজ ওয়াটারসাইড’ নামের বহুতলে দু’নম্বর টাওয়ারের চোদ্দোতলায় একটি বিপিও সংস্থায় টেলিকলার এগজিকিউটিভ পদে কাজ করতেন অভিষেক।

তদন্তে জানা যায়, বুধবার দুপুর দুটো নাগাদ অফিসে এসেছিলেন অভিষেক। সন্ধে সাতটার কিছু আগে টিফিনের সময়ে তিনি অফিসের ঘর থেকে বেরিয়ে ওই তলারই দমকলের জন্য তৈরি জায়গায় (ফায়ার অ্যাসেম্বলি পয়েন্ট) গিয়ে দাঁড়ান। খানিক পরেই ভারী কিছু পড়ার শব্দ শোনা যায়। দেখা যায়, দশতলার ফায়ার অ্যাসেম্বলি পয়েন্টে অভিষেকের দেহ পড়ে রয়েছে। শরীর ভেসে যাচ্ছে রক্তে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। অভিষেকের মোবাইল থেকেই সতীর্থেরা তাঁর দাদা বিবেক বাউড়িকে ঘটনার কথা জানান। বিবেক ছুটে আসেন।

কী ভাবে পড়ে গেলেন অভিষেক?

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের দাবি, চোদ্দো তলা থেকে দশতলায় পড়েই মৃত্যু হয় অভিষেকের। ওই বহুতলের বিভিন্ন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ অভিষেকের পড়ে যাওয়া নিয়ে নিশ্চিত হয়েছে। তবে কেন তিনি পড়ে গেলেন, তা নিয়ে ধন্দ কাটেনি।

বৃহস্পতিবার সকালে ফরেন্সিক দফতরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেন। পুলিশ সূত্রের খবর, উপর থেকে পড়ায় অভিষেকের ডান হাত ও পা ভেঙে গিয়েছিল। কপালেও ছিল ক্ষত।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চোদ্দো, বারো ও দশতলায় ফায়ার অ্যাসেম্বলি পয়েন্ট রয়েছে। এটি আসলে তিরিশ ফুট দীর্ঘ, পাঁচ ফুট চওড়া ও তিন ফুট উচ্চতার একটি জায়গা, যা রাখা হয় দমকলের জন্য। আগুন লাগলে ভিতর থেকে বার করে এনে লোকজনকে সেখানে রাখা হয়, যাতে তাঁদের নিরাপদে নীচে নামিয়ে আনা যায়। যদিও ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, সেই জায়গা কার্যত স্মোকিং জোন-এ পরিণত হয়েছে।

অভিষেককে খুন করা হয়েছে বলেই তাঁর পরিবারের অভিযোগ। অভিষেকের দাদা বিবেকের দাবি, ভাইয়ের মোবাইলে ‘প্যাটার্ন লক’ ছিল। ফলে অন্য কারও পক্ষে সেই ফোন খুলতে পারার কথা নয়। অথচ, অভিষেকের মোবাইল থেকেই মৃত্যুর খবর জানানো হয়। তাঁর অভিযোগ, অভিষেককে কেউ বা কারা ধাক্কা দিয়ে নীচে ফেলে দিয়েছে।

বিবেকের প্রশ্ন, চোদ্দোতলা থেকে পড়লে একেবারে নীচে পড়ার কথা। তা হলে অভিষেকের দেহ দশতলায় পাওয়া গেল কেন?

পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই বিপিও সংস্থায় ঢোকার সময়ে ফ্লোর ম্যানেজারের কাছে মোবাইল জমা রাখতে হয়। অভিষেকের মোবাইলও সেখানেই জমা ছিল। তা-ও কী ভাবে তাঁর মোবাইল অন্য কেউ খুলে ফেলল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তবে পুলিশের দাবি, অনেক ক্ষেত্রে উপর থেকে পড়লেও নীচের কোনও একটি তলায় ধাক্কা লেগে সেখানেই দেহ আটকে থাকতে পারে। অভিষেকের ক্ষেত্রে তেমনটাও ঘটে থাকতে পারে।

তবে কি অভিষেকের সঙ্গে কারও শত্রুতা বা মনোমালিন্য হয়েছিল? পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে তেমন কোনও সূত্র মেলেনি।

তবে পুলিশ সূত্রের খবর, অফিসে তৈরি হওয়া কোনও সমস্যার জেরে অভিষেক কোনও মানসিক চাপে ছিলেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ দিন ওই বিপিও সংস্থায় এই মৃত্যু নিয়ে কেউ কথা বলতে চাননি।

বিধাননগর পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অভিষেক কী ভাবে পড়ে গেলেন, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা সব দিকই খতিয়ে দেখছি। অফিসে ওঁর সঙ্গে কারও কোনও সমস্যা ছিল কি না, অথবা কোনও বিষয় নিয়ে অভিষেক মানসিক চাপে ছিলেন কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে।’’

IT IT employee Failing from balcony
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy