Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

জার্সি বিকোতে ভরসা এখন পাড়ার ম্যাচই

প্রৌঢ় বললেন, ‘‘বিশ্বকাপ শুরুর প্রথম দিকে জার্সির দাম যা চেয়েছি, লোকে তাই দিয়েছে। আর এখন ফাইনালের আগে বাজারই নেই।’’

পরখ: ফ্রান্সের জার্সি পরে দেখছেন শহরে পড়তে আসা এক যুবক। ধর্মতলায়। ছবি: সুদীপ ঘোষ

পরখ: ফ্রান্সের জার্সি পরে দেখছেন শহরে পড়তে আসা এক যুবক। ধর্মতলায়। ছবি: সুদীপ ঘোষ

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৮ ০২:৪৩
Share: Save:

‘কয়েক দিন আগেই বাজার এত চাঙ্গা ছিল! আর এখন...’

গাঢ় নীল, লাল-সাদা ছক কাটা জার্সি হ্যাঙারে টাঙিয়ে রাখতে রাখতে পাশের দোকানির দিকে এমনই মন্তব্য ছুড়ে দিলেন বছর পঞ্চাশের আলাউদ্দিন খান।

তখনই সেখানে হাজির কলকাতায় পড়তে আসা তিন যুবক। ফ্রান্স আর ক্রোয়েশিয়ার জার্সি হাতে নিয়ে নাড়চাড়া করে, গায়ে পরে দেখে নিলেন ঠিক ফিট হয় কি না। কিন্তু দাম পছন্দ না হওয়ায় হাঁটা দিলেন অন্য দোকানের দিকে। তাতেই আরও রাগ বাড়ল দোকানি আলাউদ্দিনের।

প্রৌঢ় বললেন, ‘‘বিশ্বকাপ শুরুর প্রথম দিকে জার্সির দাম যা চেয়েছি, লোকে তাই দিয়েছে। আর এখন ফাইনালের আগে বাজারই নেই।’’ বিশ্বকাপের বাজারে এটাই এখন খাঁটি কথা ধর্মতলার বিধান মার্কেটে। আর দু’দিন পরেই বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল। অথচ ভাটার টান জার্সির বাজারে। বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই প্রতিটি জার্সির দোকান ছেয়ে গিয়েছিল হলুদ-সবুজ, আকাশি-সাদা জার্সিতে। সঙ্গে ছিল আরও কিছু দেশের জার্সিও। কিন্তু রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের বিদায় ঘণ্টা বাজতেই তার আঁচ এসে পড়েছে কলকাতার এই বাজারে।

আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলের জার্সি বান্ডিল করে তুলে রেখে ইউরোপের চারটি দেশ— ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ক্রো‌য়েশিয়া এবং ইংল্যান্ডের হাতেগোনা কয়েকটি জার্সি দোকানের বাইরে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বাজার তেমন জমেনি বলেই দাবি দোকানি মহম্মদ রাজুর। বললেন, ‘‘ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার জার্সি অনেক এনেছিলাম। কিন্তু এই সব দেশের জার্সি ততটা তুলিনি। কে জানত এই দলগুলো ফাইনালে উঠবে!’’

একই দাবি পতাকা তৈরির কারিগর শেখ নজরুলেরও। বিধান মার্কেটের ভিতরে ছোট্ট একটা ঘরে ঘরঘর শব্দে সেলাই মেশিন চালাচ্ছিলেন ওই বৃদ্ধ কারিগর। ‘কোন দেশের পতাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে?’ প্রশ্নটা শুনে মুখ তুলে তিনি বললেন, ‘‘ফ্রান্সের পতাকা একটা বানিয়ে রেখেছিলাম। সেটাও পড়ে আছে। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলের হাল দেখে আর নতুন করে বানাইনি।’’ আর এক কারিগর মহম্মদ ওয়াকিল আবার এখন সময় দিচ্ছেন ভারতের জাতীয় পতাকা তৈরিতে।

বিশ্বকাপ জ্বর কাটিয়ে নিজের ছন্দে ফেরার চেষ্টায় এখন বিধান মার্কেট। বিক্রির আশার সামনের দিকে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়ার জার্সি ঝোলানো। ইতিউতি এখনও উঁকি দিচ্ছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, জার্মানি, ইংল্যান্ড। এক দোকানি জানালেন, নেমার এবং মেসির দেশ ছাড়া অন্য দেশের জার্সি তেমন পরিমাণে তৈরি হয় না। আর ব্যবসায়ীরাও ওই দুই দেশ ছাড়া অন্য দেশের জার্সি দোকানে বেশি রাখেন না।

দু’দিন পরে ফাইনালের ভেঁপু বাজলেও বিধান মার্কেটে কিন্তু ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়ার জার্সি নিয়ে দরদাম বা হাঁকাহাঁকি নেই। জার্সি কিনতে খদ্দের আসছেন দিনে এক জন কিংবা মেরেকেটে তিন জন— এমনই দাবি করে রাজু দে নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘এ বারে মহা ক্ষতি হয়ে গেল। কলকাতার বিশ্বকাপের বাজারে পুরো জল ঢেলে দিল আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল আর জার্মানি।’’ বিধান মার্কেটে ঘুরছিলেন কলকাতায় পড়তে আসা দার্জিলিংয়ের বাসিন্দা পরাগ, শিবরাজ এবং নেপালের মণীশ। পরাগ ও মণীশের বিশ্বাস ছিল, বিশ্বকাপ পাবে বেলজিয়াম। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভাঙতেই তাঁরা শিবরাজের দলে নাম লিখিয়েছেন। এখন তাঁদের প্রার্থনা, ফ্রান্স যেন কাপ পায়।

বিধান মার্কেটের দোকানিদের অবশ্য প্রার্থনা অন্য। তাঁরা চাইছেন আকাশ ভাঙা বৃষ্টি হোক। কাদা মেখে পাড়ার মাঠে পায়ে বল নিয়ে দাপিয়ে বেড়াক ছেলেরা। গায়ে থাকুক আর্জেন্টিনা কিংবা ব্রাজিলের জার্সি। এক দোকানির কথায়, ‘‘রাশিয়ার মাঠে না হোক, ১৫ অগস্ট পর্যন্ত যদি পাড়ার মাঠে মাঠে টুর্নামেন্ট হয় তাহলেই কিছুটা রক্ষে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

France Jersey FIFA World Cup 2018 Local Matches
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE