E-Paper

সিবিআইয়ের উপরে ‘চাপ’ তৈরি করতে ফের পথে নেমে আন্দোলন

সিজিও-র মূল গেটে প্রতীকী তালা ঝোলানোর পরে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা হলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি বাধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:১৫
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি।

বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি। —নিজস্ব চিত্র।

ন্যায় বিচার মিলবে কবে? উত্তর অজানা। তাই সিবিআইয়ের উপরে ‘চাপ’ তৈরি করতে মঙ্গলবারও রাস্তায় নামল চিকিৎসকদের দু’টি এবং নার্সদের একটি সংগঠন। তাদের যৌথ উদ্যোগে প্রথমে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে অভিযান করে গিয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি থাকলেও পরে তা বদলায়। সিজিও-র মূল গেটে প্রতীকী তালা ঝোলানোর পরে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা হলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি বাধে। তার পরেই সিবিআই দফতরের সামনে অবস্থানে বসেন বিক্ষোভকারীরা।

আর জি কর-কাণ্ডে বিচার প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে। কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই তদন্তকারী সংস্থা মিলে তদন্তকে শীতঘুমে পাঠানোর চক্রান্ত করছে। অভিযুক্তদের আড়ালের চেষ্টাও করা হচ্ছে। এ সমস্ত অভিযোগ তুলে এ দিন সেন্ট্রাল পার্ক মেট্রো স্টেশন থেকে সিজিও পর্যন্ত অভিযানের ডাক দিয়েছিল ‘মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার’, ‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম’ এবং ‘নার্সেস ইউনিটি’। দুপুর ২টো নাগাদ ওই তিন সংগঠনের প্রতিবাদ-অভিযান শুরু হয়। যোগ দেয় বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনও। আর জি কর আন্দোলনের প্রথম সারিতে থাকা জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো মিছিলে এসে জানালেন, সেন্ট্রাল ফরেন্সিক অ্যান্ড সায়েন্স ল্যাবরেটরি (সিএফএসএল) থেকে আসা রিপোর্টে অনেক তথ্য উঠে এসেছে। সেই প্রশ্ন তাঁরাও আন্দোলনের প্রথম থেকে তুলেছেন। অনিকেত বলেন, ‘‘ওই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেতে কলকাতা পুলিশকে প্রতীকী মেরুদণ্ড দিয়েছিলাম। দেশের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থার তদন্তের যা অবস্থা, তাতে তাদেরও মেরুদণ্ড দেওয়া প্রয়োজন।’’

তদন্তে পুলিশ ও সিবিআইয়ের ব্যর্থতার অভিযোগ ওঠে অবস্থান-বিক্ষোভ থেকে। মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের রাজ্য সম্পাদক বিপ্লব চন্দ্র বলেন, ‘‘কাকে আড়ালের এত চেষ্টা? নির্ধারিত সময়ে চার্জশিট জমা না দেওয়ায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটে অভিযুক্ত দু’জন জামিন পেয়ে গেলেন। তদন্ত নিয়ে ছিনিমিনি চলছে। যে কারণে কলকাতা পুলিশে অনাস্থা ছিল, সেই পথেই হাঁটছে সিবিআই।’’ পুলিশ ও সিবিআই এত দিন ধরে আর জি করের সেমিনার কক্ষকেই ঘটনাস্থল হিসাবে দেখাচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে ‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘সিএফএসএল যা রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে স্পষ্ট, মূল অপরাধীদের আড়াল করতেই তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হয়েছে।’’ এ দিন সন্ধ্যায় ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাংবাদিক বৈঠক করে ‘জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’। তারা জানায়, রিপোর্টে কাঠের পোডিয়াম ও গদিতে মাত্র দু’টি জায়গায় (মাথা ও শরীরের নীচের দিকে) রক্তের চিহ্ন মিললেও আর কোথাও ধস্তাধস্তির চিহ্ন নেই। সেমিনার কক্ষের অন্য কোনও জায়গা থেকেও রক্তচিহ্ন বা শরীরের কোনও অংশ পাওয়া যায়নি। রিপোর্টে এ-ও বলা হয়েছে, নিরাপত্তারক্ষী, চিকিৎসক ও নার্সদের কাজের জায়গা পেরিয়ে ওই সেমিনার কক্ষে অজ্ঞাতপরিচয় কারও ঢোকার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। ফ্রন্টের প্রশ্ন, ‘‘তা হলে কি ঘটনাস্থল আদৌ সেমিনার কক্ষ? যদি অন্যত্র কিছু হয়ে থাকে, তা হলে সকলের চোখ এড়িয়ে দেহ স্থানান্তরিত হল কী ভাবে? সিবিআইয়ের চার্জশিটে এ সব নেই কেন?’’

সেমিনার কক্ষ যে ভবনে, সেটির আটতলায় অস্থি বিভাগের ওটি-র উল্টো দিকের ঘরের একটি ভিডিয়ো (আনন্দবাজার সত্যতা যাচাই করেনি) এ দিন প্রকাশ্যে এসেছে। ঘরটি সেপ্টেম্বর থেকে সিল করে রেখেছে সিবিআই। সেটির আগে করা ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, ওই ঘরের মেঝেতে রক্তের মতো লাল ছোপ, ছড়িয়ে পড়ে গ্লাভস, অস্ত্রোপচারের কয়েকটি সরঞ্জাম। ফ্রন্টের প্রশ্ন, কেন ওই ঘরের বিষয়টি তদন্তে আনছে না সিবিআই? এ দিন হাই কোর্ট থেকে ধর্মতলার অবস্থান মঞ্চে এসেছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। মা বলেন, ‘‘৯ অগস্ট আর জি করে গিয়ে ভেবেছিলাম, পুলিশ ভিতরে তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করছে। বুঝতে পারিনি যে, আমাদের বাইরে বসিয়ে রেখে সব তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হচ্ছে। এটা কেন হল, জানি না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CBI RG Kar Protest

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy