Advertisement
০১ মে ২০২৪
KMC Election 2021

KMC Election 2021: মশা মেরে জলবন্দি বরোয় প্রচারে শুকনো ডাঙার খোঁজ

সমস্যা রয়েছে আরও অনেক। এই এলাকারই অংশ ডায়মন্ড হারবার রোডের উপরে ম্যানেজমেন্ট কলেজের কাছাকাছি শেষ হচ্ছে কলকাতা পুরসভার সীমা।

শোচনীয়: ১৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে রাস্তার হাল এমনই।

শোচনীয়: ১৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে রাস্তার হাল এমনই। ছবি: রণজিৎ নন্দী

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় ও নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:২৫
Share: Save:

‘‘ডাঙা শুকোলে ওই দিকটায় যাব। এখন অন্য কোথাও দেখো। ওই দিকে হাঁটু পর্যন্ত জল।’’— প্রার্থীর এমন আকস্মিক মন্তব্যে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন মিছিলের উদ্যোক্তারা। অগত্যা ওয়ার্ডের অঞ্চল ধরে ধরে শুরু হল শুকনো এলাকার খোঁজ। হাতে গোনা যে ক’টি জায়গার নাম পাওয়া গেল, তাতে হয় সামান্য বৃষ্টি হলেই জল জমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, নয় তো প্রার্থীর ঘোরা হয়ে গিয়েছে। শেষে মিছিলের উদ্যোক্তাদের মধ্যে এক জন খানিকটা বিরক্তি সহকারেই বলে উঠলেন, ‘‘জল জমার কী হবে না ভেবেই এ ভাবে তড়িঘড়ি চড়িয়াল খাল বোজাতে কে বলেছিল? এ ভাবে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায়? তার মানে ভোট পর্যন্ত বৃষ্টি হলে এলাকা
ঘোরা বন্ধ?’’

সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় জ়ওয়াদ নিয়ে চর্চার মধ্যে কয়েক পশলা বৃষ্টি হতেই এমন দৃশ্য তৈরি হয়েছিল কলকাতা পুরসভার ১২৬ নম্বর ওয়ার্ডে শাসকদলের একটি কার্যালয়ের সামনে। ওই ওয়ার্ডটি পুরসভার ১৬ নম্বর বরোর অন্তর্গত। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, এই সমস্যা একটি মাত্র ওয়ার্ডের নয়। অল্প বৃষ্টি হলেও ওই বরোর প্রায় সব রাস্তাতেই জল জমে যায়। ১২৩, ১২৪, ১২৫, ১২৬, ১৪৩ এবং ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু কিছু এলাকা আবার এমন যে, সেখানে জল দাঁড়িয়ে থাকে দু’সপ্তাহেরও বেশি। সেই সময়ে না বসে বাজার, না আসে পানীয় জলের গাড়ি। এলাকার পুর প্রতিনিধিদের খোঁজ করেও সাড়া পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ। দিনকয়েক এমন জলবন্দি থাকার পরে অনেককেই এলাকা ছেড়ে গিয়ে উঠতে হয় আত্মীয়ের বাড়িতে।

জল নামলে শুরু হয় আর এক সমস্যা। এই বরোর অন্তর্গত বেহালা শীলপাড়ার বাসিন্দা, পেশায় স্কুলশিক্ষিকা সুমেধা গুপ্ত বললেন, ‘‘গত বর্ষায় দিনের পর দিন জলবন্দি থাকতে হয়েছে। কোনও মতে জল যদি বা নামল, শুরু হল মশার উপদ্রব। এলাকার খোলা নর্দমাগুলো এমন অবস্থায় পড়ে থাকে যে, সেখানেই বংশবৃদ্ধি করে মশা। ভাঙা কাচের পাত্র, প্লাস্টিক, থার্মোকলের উপরে গিজগিজ করে মশার লার্ভা। বর্ষার পরে প্রায় ঘরে ঘরে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া বাড়ে। পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছেড়ে দিন, এলাকার একমাত্র সরকারি হাসপাতালে গিয়েও পরিষেবা পাওয়া যায় না।’’ ১২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিদ্যাসাগর পল্লির বাসিন্দা, পেশায় মুদির দোকানি রতন মালাকার তাঁর দোকানের পাশেই নর্দমা দেখিয়ে বলেন, ‘‘সন্ধ্যাবেলায় এক মুহূর্ত বসার জো নেই। মশায় তুলে নিয়ে যাবে। যে প্রার্থীই আসছেন, তাঁকে এই দোকানের কাছে মিনিট পাঁচেক বসে যাওয়ার অনুরোধ করছি।’’

সমস্যা রয়েছে আরও অনেক। এই এলাকারই অংশ ডায়মন্ড হারবার রোডের উপরে ম্যানেজমেন্ট কলেজের কাছাকাছি শেষ হচ্ছে কলকাতা পুরসভার সীমা। ২০১৫ সালে জোকা (২) পঞ্চায়েতের বিভিন্ন অংশ কেটে কলকাতা পুরসভার অধীনে নিয়ে আসা হয়। আলোর ব্যবস্থা হলেও সেই সব সংযুক্ত এলাকার বহু রাস্তায় এখনও পিচ পড়েনি। তা পড়ে আছে ইটের মোরাম দিয়ে তৈরি করা অবস্থাতেই। পরিস্রুত পানীয় জল থেকেও বঞ্চিত বেশ কিছু এলাকা। অভিযোগ রয়েছে আর্সেনিক-যুক্ত জল সরবরাহ করার। স্থানীয়দের দাবি, গত পাঁচ বছরে তৈরি হয়নি পর্যাপ্ত শৌচাগার। উল্টে পুকুর বুজিয়ে তৈরি হয়েছে একের পর এক বহুতল। বেআইনি নির্মাণেরও অভিযোগ শোনা যাচ্ছে এলাকায় ঘুরলে।

এক সময়ের জোকা (২) পঞ্চায়েতের প্রধান তথা ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের এ বারের বাম প্রার্থী বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘কলকাতা পুরসভায় সংযুক্তিকরণের নামে যে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল, তার প্রায় কিছুই পূরণ হয়নি এখানে। উল্টে চড়িয়াল খাল বুজিয়ে অপরিকল্পিত নগরোন্নয়নে জীবন দুর্বিষহ করে তোলা হয়েছে।’’

১৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী ক্রিস্টিনা বিশ্বাস
থাকেন জোকার ডায়মন্ড পার্ক এলাকায়। সম্ভ্রান্ত ওই এলাকাও বর্ষায় জলবন্দি হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। ক্রিস্টিনা অবশ্য বলেন, ‘‘কিছু সমস্যা এখনও রয়েছে ঠিকই। সেই কাজ করতে হবে। তবে এই সব এলাকা আগে শালিজমি ছিল। বাম আমলে ইচ্ছে মতো মাটি ফেলে উঁচু করে জমি বিক্রি হয়েছে।’’ এই বরোর বিজেপি এবং কংগ্রেস প্রার্থীদের যদিও
দাবি, গত দু’বছরে উন্নয়ন তো হয়ইনি, উল্টে জল জমার জন্য বাম আমলকে দায়ী করা হয়। চড়িয়াল খালের পূর্ব দিকের একটি বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ এখনও পরিস্রুত পানীয় জল থেকে বঞ্চিত।

১২৪ নম্বরের তৃণমূল প্রার্থী রাজীবকুমার দাসের যদিও দাবি, ‘‘কেইআইআইপি-র অধীনে চলা চড়িয়াল খালের কাজ প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ। ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালের কাছে খালের
উপরে তৈরি হওয়া বুস্টার পাম্পিং স্টেশন আগামী এপ্রিল থেকেই কাজ শুরু করে দেবে। এই দু’টো হয়ে গেলেই ১৬ নম্বর বরো জল-সমস্যা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাবে।’’

‘‘কিন্তু, সমস্যা না মেটা পর্যন্ত? প্রশ্ন এড়াতে তো সেই জল জমার এলাকা বাদ দিয়েই প্রচার চালানো হবে!’’— মন্তব্য করেই
নিজের প্রচার ছেড়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার
হাতে একটি মোটরবাইকে বসে ছুটলেন রেড ভলান্টিয়ার থেকে ১২৩ নম্বর ওয়ার্ডে বামেদের প্রার্থী হওয়া প্রসেনজিৎ ঘোষ। কারণ তাঁর কাছে ফোন এসেছে, করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধার দ্রুত অক্সিজেনের প্রয়োজন। ব্যবস্থা করে দেওয়ার কেউ নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

KMC Election 2021 Mosquitos
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE