Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Debanjan Deb

পুর অনুষ্ঠানে ‘অতিথি’ নয় দেবাঞ্জন, প্রমাণে নির্দেশিকার উল্লেখ

অতিমারির সময়ে পুর কর্তৃপক্ষের হাতে দেবাঞ্জনের মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার তুলে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই সরব বিরোধীরা।

দেবাঞ্জন দেব

দেবাঞ্জন দেব ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২১ ০৬:৫৫
Share: Save:

ভুয়ো পরিচয় দিয়ে অন্য অনেকের সঙ্গে কসবা-কাণ্ডের দেবাঞ্জন দেব ফাঁকতালে কলকাতা পুরসভায় ঢুকে পড়েছিল। সাক্ষাৎ করেছিল পুরসভার শীর্ষ নেতৃত্ব, আধিকারিকদের সঙ্গে। তার মানে এই নয় যে দেবাঞ্জন পুরসভার কোনও অনুষ্ঠানে ‘অতিথি’ হিসেবে আমন্ত্রিত ছিল। কারণ, পুরসভার অনুষ্ঠানে অতিথি আমন্ত্রণের নির্দিষ্ট নিয়মবিধি রয়েছে। ধৃত দেবাঞ্জনের পুরসভার অনুষ্ঠানে উপস্থিতি নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে এমনটাই জানাচ্ছেন পুর কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে আমন্ত্রণবিধি সংক্রান্ত একটি পুর-নির্দেশিকার প্রসঙ্গও টেনে আনছেন তাঁরা।

পুরসভার সমস্ত দফতরের উদ্দেশে জারি করা পুর কর্তৃপক্ষের ওই নির্দেশিকা জানাচ্ছে, পুর প্রকল্পের শিলান্যাসের সময়ে বা কোনও উদ্বোধন বা অন্য অনুষ্ঠানে স্থানীয় সাংসদ, বিধায়ক, বরো চেয়ারম্যান (বরো কোঅর্ডিনেটর), কাউন্সিলর (ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর) এবং বিশিষ্টজনেদের আমন্ত্রণ করতে হবে। তাঁদের প্রত্যেকের নাম আমন্ত্রণপত্রে উল্লেখ করতে হবে। সেই সঙ্গে যাবতীয় উদ্বোধন, অনুষ্ঠান সংক্রান্ত বিষয় পাঁচ দিন আগে সংশ্লিষ্ট দফতরকে পুর সচিবের মাধ্যমে পুর কমিশনারকে জানাতে হবে। পুরসভার অনুষ্ঠানে অতিথি আমন্ত্রণের এটাই রেওয়াজ। সেই সূত্রেই প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা জানাচ্ছেন, পুরসভার কোনও অনুষ্ঠানে ধৃত ব্যক্তি উপস্থিত থাকলে তার নাম নিশ্চয়ই আমন্ত্রণপত্রে উল্লেখ থাকত। পুরসভার লিখিত নথিতে কিন্তু এমন নিয়মই স্পষ্ট করে বলা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তার নাম কোথাও নেই। ওই শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘তা ছাড়া অতিমারি পরিস্থিতিতে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার নেওয়া নিশ্চয়ই কোনও অনুষ্ঠানের মধ্যে পড়ে না! ফলে এই বিষয়ে পুরসভাকে জড়ানো অযৌক্তিক।’’

করোনা অতিমারির সময়ে পুর কর্তৃপক্ষের হাতে দেবাঞ্জনের মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার তুলে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, এক দিন-দু’দিন নয়। বরং ধারাবাহিক ভাবে রাজ্যের শাসকদলের শীর্ষ নেতা, পুরসভার শীর্ষ নেতৃত্ব, আধিকারিকদের সঙ্গে দেবাঞ্জনকে দেখা গিয়েছে। পুরসভার অনুষ্ঠানেও অতিথি হিসেবে হাজির সে! ফলে পুরসভা কোনও ভাবেই দায় এড়িয়ে যেতে পারে না।

পুরসভার অনুষ্ঠানে অতিথি আমন্ত্রণের নিয়মবিধির প্রতিলিপি।

পুরসভার অনুষ্ঠানে অতিথি আমন্ত্রণের নিয়মবিধির প্রতিলিপি।

পুরসভার প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘পুরসভা বলছে ওদের কোনও অনুষ্ঠানে ধৃত ব্যক্তি অতিথি হিসেবে হাজির ছিল না। ওরা চেনেও না এই ব্যক্তিকে (দেবাঞ্জন)। যদি তাই হয়, তা হলে পুর-প্রশাসক থেকে শুরু করে শীর্ষ কর্তারা যেখানে উপস্থিত, সেখানে ওই ব্যক্তি থাকছে কী করে? আমাদের সময়েও অনেক অনুষ্ঠান হয়েছে। আমন্ত্রিত ব্যক্তি ছাড়া সেখানে কেউ উপস্থিত থাকতে পারতেন না।’’ পুরসভার বিজেপি নেত্রী মীনা দেবী পুরোহিত বলছেন, ‘‘সব কিছুই পুরসভা করাচ্ছে। সব কিছুর সঙ্গেই তাদের যোগ রয়েছে। আর এখন বললে হবে, তারা কিছু জানত না? তাদের অনুষ্ঠানে ওই ব্যক্তি অতিথি হিসেবে যায়নি!’’

বিরোধীদের এই অভিযোগ অস্বীকার করে পুর কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ধৃত দেবাঞ্জনকে কখনওই পুরসভার কোনও অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যতই সে পুর-প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম-সহ পুর প্রশাসকমণ্ডলীর অন্য সদস্য, ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরের সঙ্গে নিজের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিক না কেন! পুরসভার অনুষ্ঠানে সাংসদ, বিধায়ক, পুর প্রতিনিধি-সহ অন্যান্য ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনেদের নির্দেশিকায় উল্লিখিত নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

শাসকদলের তরফে বাম আমলের কয়লা মাফিয়া কালে সিংহের ঘটনা এবং বিজেপির ক্ষমতাকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আর্থিক তছরূপে অভিযুক্ত নীরব মোদী, ললিত মোদীর একসঙ্গে ছবির প্রসঙ্গও টেনে আনা হচ্ছে। বিকাশবাবুর অভিযোগ প্রসঙ্গে এক পুরকর্তা আবার বলছেন, ‘‘বিকাশবাবু বলছেন, তাঁদের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ব্যক্তি ছাড়া কেউ উপস্থিত থাকতে পারতেন না। তা হলে কি কয়লা-মাফিয়া কালে সিংহকেও তাঁরাই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন?’’ এই একই প্রশ্ন ফিরহাদও শনিবার তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘বুদ্ধবাবু (বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য) কালে সিংহের কাছ থেকে চেক নিলে কোনও কেলেঙ্কারি হয় না? নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যখন নীরব মোদী বসে থাকেন, তখন কেলেঙ্কারি হয় না? আর কেউ এক জন এলে তাকে নমস্কার করায় বিরাট কেলেঙ্কারি হয়ে গেল?’’

ফলে সব মিলিয়ে ধৃত দেবাঞ্জনের কার্যকলাপ নিয়ে যতটা আলোড়নের সূত্রপাত হয়েছে, সেই একই আলোড়ন চলছে দেবাঞ্জন-পুরসভার ‘যোগাযোগ’-এর অভিযোগকে কেন্দ্র করেও। সেই আলোড়নের এখনই থিতু হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE