শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে ৩৩৩৪টি বস্তিতে বাস করেন প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ। কলকাতার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ ভাগ। কলকাতা পুরসভার পরিসংখ্যানেই তা রয়েছে। অথচ বস্তিতে অগ্নি-সুরক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেই। বস্তিবাসীদের অভিযোগ, ভোটের ঢাকে কাঠি পড়লেই তাঁদের জন্য জন্য প্রাণ উচাটন হয় প্রায় সব দলেরই। ভোট মিটলেই ফের যে-কে সেই।
মধ্য কলকাতার এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘বস্তির মানুষের কাছে এ বার অনেক সাড়া পেয়েছি। কিন্তু ওদের জন্য ততটা কাজ করা হয়নি।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, বস্তির উন্নয়নে বেশি মাথা ঘামানো ‘না পসন্দ’ ছিল গত পুরবোর্ডের কোনও কোনও প্রশাসকের। কারণ অত টাকা নাকি নেই। তবে ফের ক্ষমতায় এসে তাঁরা বস্তির কল্যাণে কাজ করছেন বলে দাবি তৃণমূল বোর্ডের। দফতরের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার জানান, বস্তিগুলোকে আগুন থেকে বাঁচাতে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। শীঘ্রই তা বাস্তবায়িত হবে বলেও জানান তিনি। বিরোধীরা অবশ্য একে বিধানসভা ভোটের আগে বস্তিবাসীদের মন জয়ের আর এক প্রচেষ্টা বলেই দাবি করছেন।
শহরের বস্তি অঞ্চলে পরিকাঠামোগত সমস্যা থাকায় অগ্নিকাণ্ড রোধে যে তেমন কোনও কাজ হয়নি, তা মানছেন পুরকর্তারাও। অগ্নি-সুরক্ষায় কী করণীয়, তা জানতে এক সমীক্ষা শুরু হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর। পুরসভা, সিইএসসি এবং দমকল যৌথ ভাবে সেই কাজ চালাচ্ছে।
স্বপনবাবু জানান, আপাতত পাঁচটি বস্তি নিয়ে সমীক্ষা করা হচ্ছে। পুরসভার আলো দফতরের ৫টি জোন থেকে একটি করে বস্তি বাছা হয়েছে। সেগুলি হল— বেলেঘাটার মিঞাবাগান, রাজাবাজারের ধরবাগান, ঢাকুরিয়ার পঞ্চাননতলা, টালিগঞ্জের ঝড়ো বস্তি এবং বেহালার কাকোলা বস্তি। স্বপনবাবু জানান, প্রথমে বস্তির সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে তার পরে পরিকল্পনা করা হবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের টাকা দেবে পুরসভা।
পুরসভা সূত্রে খবর, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বস্তিতে যত্রতত্র বৈদ্যুতিক তার ঝুলে রয়েছে। কোথাও আবার মিটার বক্স বসানো হয়েছে বস্তিতে ঢোকা-বেরোনোর পথ ঘেঁষে। উত্তরের একাধিক বস্তির বাসিন্দাদের কথায়, ওই সব জায়গা থেকেই শট সার্কিট হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। অতীতে বেশির ভাগ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে সে ভাবেই।
পুরসভার এক আধিকারিক জানান, বেশির ভাগ বস্তিতে বৈদ্যুতিক তারগুলি অনেক পুরনো। কোথাও কোথাও জলের সংস্থানই নেই। আগুন লাগলে বাইরে থেকে জল টেনে আনতে হয়। দমকল দফতরের এক আধিকারিক জানান, পুরনো তার পাল্টাতে পারলেই সমস্যার অনেক সমাধান করা সম্ভব। সেই প্রস্তাবও থাকছে সমীক্ষা রিপোর্টে।
পানীয় জল, আলো এবং জঞ্জাল অপসারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা দেওয়ার পাশাপাশি বস্তির ভিতরে অগ্নিসুরক্ষা বলয় তৈরি করাটাও জরুরি বলে মনে করছেন স্বপনবাবুরা। তিনি জানান, এ বিষয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। মেয়র জানিয়েছেন, টাকার অভাব হবে না। এই প্রকল্পের জন্য পুরসভাও ছাড়াও অন্যান্য দফতরের থেকে অর্থ চাওয়া হয়েছে বলে স্বপনবাবু জানান।
রাজ্যের দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, ‘‘সম্প্রতি কলকাতা পুরসভা, দমকল এবং সিইএসসি শহর জুড়ে যে সমীক্ষা করেছে, তাতে বলা হয়েছে ওভারহেড তার না রেখে ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক তারের ব্যবস্থা করতে হবে। তা বস্তিতেও করা জরুরি। সিইএসসি-কেও এ ব্যাপারে জানানো হয়েছে।’’
মন্ত্রী জানান, বেশ কয়েক বছর আগেই তপসিয়ায় একটি বস্তিতে এ ধরনের কাজের চেষ্টা হয়েছিল। কিছুটা কাজ এগোনোর পরে পরিকাঠামোগত সমস্যা থাকায় তা বন্ধ হয়ে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy