Advertisement
E-Paper

৩৯ লক্ষ কি জলেই, প্রশ্ন পরিবেশকর্মীদের

হলনামায় কেএমডিএ জানিয়েছিল, রবীন্দ্র সরোবরের বিকল্প হিসেবে একাধিক জলাশয় চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই ঘাটগুলিতে পুজোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার জন্য যে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে, তা-ও হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছিল।

দেবাশিস ঘড়াই ও কৌশিক ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৯ ০২:২৭
বিকল্প: রবীন্দ্র সরোবরের বদলে ছটপুজোর জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছিল যোধপুর পার্ক-সহ (ছবিেত) বিভিন্ন জায়গার একাধিক জলাশয়। তবে সেখানে যাননি বেশি সংখ্যক পুণ্যার্থী। নিজস্ব চিত্র

বিকল্প: রবীন্দ্র সরোবরের বদলে ছটপুজোর জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছিল যোধপুর পার্ক-সহ (ছবিেত) বিভিন্ন জায়গার একাধিক জলাশয়। তবে সেখানে যাননি বেশি সংখ্যক পুণ্যার্থী। নিজস্ব চিত্র

ছটপুজোর জন্য রবীন্দ্র সরোবরের বিকল্প জলাশয়ের ব্যবস্থা করতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৩৯ লক্ষ টাকা। জাতীয় পরিবেশ আদালতে হলফনামা দিয়ে এমনই জানিয়েছিল কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)। কিন্তু এত টাকা কি জলে গেল? ছটপুজো ঘিরে বিতর্কের পরে উঠছে সেই প্রশ্ন। কারণ, পরিবেশ আদালতের নিষেধ অগ্রাহ্য করে এ বারও ছটপুজোয় রবীন্দ্র সরোবরে প্রায় ২০ হাজার লোক হয়েছে।

হলনামায় কেএমডিএ জানিয়েছিল, রবীন্দ্র সরোবরের বিকল্প হিসেবে একাধিক জলাশয় চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই ঘাটগুলিতে পুজোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার জন্য যে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে, তা-ও হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রামাণ্য তথ্য হিসেবে হলফনামার সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল ওয়ার্ক অর্ডারের প্রতিলিপিও। তা থেকে দেখা যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল ৫ সেপ্টেম্বর। কেএমডিএ-র

‘এস্টেট অ্যান্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সেক্টর’-এর সিআরএস সার্কলের অধীনে ওই দরপত্র ডাকা হয়েছিল। ২৪ সেপ্টেম্বর নিউ ব্যারাকপুরের একটি সংস্থাকে কাজের বরাত দেওয়া হয়। পুরো প্রকল্পের প্রস্তাবিত খরচ ধরা হয়েছিল ৩৯ লক্ষ ৭৫ হাজার ১২৫ টাকা। দরপত্রের মূল্য ছিল ৩১ লক্ষ ৮০ হাজার ১০২ টাকা। বিষয়ের জায়গায় লেখা হয়েছিল, উৎসবের জন্য ওই চারটি ঘাট তৈরি করা হচ্ছে।

কিন্তু এত টাকা খরচ করে আদৌ লাভ কি হল, সেই প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশকর্মীদের একটা বড় অংশ। তাঁদের বক্তব্য, যত ভিড় তো সেই রবীন্দ্র সরোবরেই হয়েছে। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘এই টাকা তো সাধারণ মানুষের করের টাকা। বিকল্প ব্যবস্থা করা হল, অথচ রবীন্দ্র সরোবরও দূষিত হল।’’ পরিবেশকর্মী নব দত্তের কথায়, ‘‘বিকল্প ব্যবস্থা কোথায় করা হয়েছে, তার জন্য ম্যাপ ও লিফলেট ছাপানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুরো টাকাই জলে গেল।’’ আর এক পরিবেশকর্মী সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘পরিবেশ আদালতের নির্দেশের পরেও অনেকে বলেছিলেন, সরোবরেই ছটপুজো করবেন। সেটাই তো হল।’’

কেএমডিএ সূত্রের খবর, চারটি স্থায়ী ঘাটের পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছিল ১২টি অস্থায়ী ঘাটও। সংস্থার এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘চারটি ঘাট সারা বছর থাকবে। কোনও অনুষ্ঠানে তা ব্যবহার করা যাবে। বাকিগুলি কাঠ পেতে অস্থায়ী ভাবে তৈরি হয়েছিল। সেগুলি খোলার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ কিন্তু শুধু রবীন্দ্র সরোবরেই যেখানে প্রায় ২০ হাজার পুণ্যার্থী জড়ো হয়েছিলেন, সেখানে বাকি সব ঘাট মিলিয়ে পুণ্যার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫ হাজার। তার মধ্যে সব থেকে বেশি পুণ্যার্থী সমাগম হয়েছিল নোনাডাঙা ঘাটে, প্রায় আট হাজার। সর্বনিম্ন ছিল রুবি হাসপাতাল সংলগ্ন জলাশয়ে। কেএমডিএ সূত্রের খবর, ওই জলাশয়ে পুণ্যার্থী এসেছিলেন মাত্র ৮০০ জন। যোধপুর পার্ক ও পাটুলিতে সেই সংখ্যা ছিল প্রায় তিন হাজার।

ওই সমস্ত জলাশয়ে জলের মান কেমন, তা পরীক্ষা করার জন্য কলকাতা পুরসভার কাছে আবেদন করার কথা ভাবছে কেএমডিএ। সংস্থা জানাচ্ছে, ওই জলাশয়গুলি তারা নিয়ন্ত্রণ করে না। পুরসভার উদ্যান দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘ঘাটগুলি সবই পরিষ্কার হয়েছে। জনস্বার্থে পুরসভা ওই জলের নমুনা পরীক্ষা করাতেই পারে। তবে সে ক্ষেত্রে আমাদের রাজ্য পরিবেশ দফতরের দ্বারস্থ হতে হবে।’’

National Green Tribunal KMDA Chhath puja Rabindra Sarobar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy