Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

হ্যালোইনের হাওয়ায় ভেসে ভূতে ভর শহরের

বহু কষ্টে হাসি চেপে রেখেছিলেন শ্রীপর্ণা বর্মণ ভট্টাচার্য। কালো ঢলঢলে পোশাক, চোখে-মুখে রং মাখা কিংবা মজাদার শিংধারীদের মেক-আপ দেখে একটুও ভয় না পেলে কি চলে?

ভুতুড়ে: খুদের দল। দক্ষিণ কলকাতার এক আবাসনে। —নিজস্ব চিত্র।

ভুতুড়ে: খুদের দল। দক্ষিণ কলকাতার এক আবাসনে। —নিজস্ব চিত্র।

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৭ ০২:০১
Share: Save:

ভরসন্ধ্যায় কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে ঘরের দরজাটা খুলতেই ঘিরে ধরল খুদে উইচ, মনস্টার বা ভ্যাম্পায়ারের দল!

বহু কষ্টে হাসি চেপে রেখেছিলেন শ্রীপর্ণা বর্মণ ভট্টাচার্য। কালো ঢলঢলে পোশাক, চোখে-মুখে রং মাখা কিংবা মজাদার শিংধারীদের মেক-আপ দেখে একটুও ভয় না পেলে কি চলে? খুদেরা ‘ট্রিক’ অর ‘ট্রিট’ বলে কলকলিয়ে উঠতেই ফ্রিজে রাখা টফি-চকলেট উজাড় করে দিয়েছেন তিনি।

না, মার্কিন মুলুকের কোনও অচিন শহর নয়। এ ছবি মঙ্গলবার, খাস কলকাতার হ্যালোইন সন্ধ্যার। প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি আবাসনে হ্যালোইনের মজায় মেতেছে ক্লাস ওয়ানের রেয়াংশ ভট্টাচার্য, শতাক্ষি হোড়, চার বছরের শামিয়ানা বন্দ্যোপাধ্যায় বা ওদের থেকে অল্প বড় ঋত্বিকা সমাজদারেরা। বড়রা সক্কলেই এই মিষ্টি ভূতেদের খুব গাল টিপে দিয়েছেন। সন্ধে সাড়ে সাতটায় ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে ‘ক্যান্ডি-অভিযানে’ বেরিয়ে খুদে ভূতপেত্নিদের লজেন্স-চকলেট বোঝাই করে ফিরতে রাত দশটা। আবাসনের পুরনো বাসিন্দা তথা ইভেন্ট-কোঅর্ডিনেটর মৃগাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ছোট-বড় সক্কলে যা মজা পেয়েছেন, পরের বার আরও বড় করে হ্যালোইনে মাতব আমরা।’’

আমেরিকার ধাঁচে কলকাতারও পাড়ায় পাড়ায় ‘খুদে ভূতে’রা বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। বদলে প্রাপ্তি ক্যান্ডি-চকলেট।

কেষ্টপুরের শ্রেয়সী রায়দের ফ্ল্যাটেও ভারী জমেছিল হ্যালোইন সন্ধে। কন্যার হুকুম, তাই সব কাজ মিটিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরতে হয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষক মাকে। শুধু বাচ্চাদের সাজানো নয়, কালো পোশাকে মুখে লিপস্টিকের রক্তের দাগ এঁকে মাকেও ‘ভয়ঙ্করী’ সাজতে হয়েছে হ্যালোইন পার্টিতে। কয়েক জন পড়শি-বন্ধুবান্ধব মিলে হুল্লোড়। বেশির ভাগই তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের পেশাদার। মার্কিন বহুজাতিক সংস্থায় কাজের সূত্র ধরেই
হ্যালোইনের খুঁটিনাটি জেনেছেন তাঁরা। আর ইউটিউব-পাগল খুদেরা মা-বাপের এক কাঠি উপরে। হ্যালোইনে কী ভাবে ভূত সাজতে হয় বা কুমড়োর চোখমুখ এঁকে তাতে আলো জ্বেলে ‘জ্যাক-ও-ল্যানটার্ন’ সাজাতে হয়, সব তাদের জানা।

বোলপুরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ক্লাস সিক্সের ছাত্র উজান রায় ওরফে বাবুইয়ের মা তো ছেলের কাণ্ড দেখে ফেসবুকে স্টেটাস দিয়েছেন, ‘আমরা ভাই বাংলা মিডিয়াম। এ সব জানতাম না!’ একদা প্রাক্-খ্রিস্টীয় যুগের ইউরোপের শীতের ফসল উৎসব হ্যালোইন এ কালে মার্কিন মুলুকে সাহেব-মেমদের ‘ভূত চতুর্দশী’র আকার নিয়েছে। তাতে কী কী করতে হয়, সব ‘ডায়েরি অব আ উইম্পি কিড’ বলে মুখস্থ বাবুইয়ের। সারা দুপুর ধরে কুমড়ো নিয়ে কারিকুরি করেছে সে। শান্তিনিকেতনের অবন পল্লির বাড়িতে ফি-সন্ধ্যায় কুমড়োর লন্ঠন জ্বেলে হ্যালোইনের আমেজ।

বাঙালির ঘরে ঘরে আমেরিকা প্রবাসী বা প্রত্যাগত আত্মীয়দের সৌজন্যেও হ্যালোইন প্রায় ঘরোয়া উৎসব। ভূত চতুর্দশীর চোদ্দো শাক খাওয়া বা প্রদীপ জ্বালার থেকে ভূত সেজে হুল্লোড়ও অনেকের কাছে রোমাঞ্চকর। এ সব কালের হুজুগ এক রকম মেনেই নিচ্ছেন ভূত বিশেষজ্ঞ সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তবে তাঁর মৃদু আফশোস, ‘‘এ সব বিদেশি ভূতের ভিড়ে বাঙালির ঘরের ভূত বেহ্মদত্যি, একানড়ে, মামদোরা খানিক কোণঠাসা না হয়ে পড়েন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Halloween KOlkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE