স্বাস্থ্য ভবনের কাছে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন স্থলে নানা পোস্টার। নিজস্ব চিত্র।
টিপটিপ করে বৃষ্টি হচ্ছে। মাথার উপরে ত্রিপল থাকলেও তাতে কয়েক জায়গায় ছিদ্র। সেখান দিয়ে বৃষ্টির জল ঢুকে ভিজিয়ে দিচ্ছিল ত্রিপলের নীচে থাকা আন্দোলনকারীদের। তাঁদের দেখতে আসা কয়েক জন এ বার নিজেদের ছাতা এগিয়ে দিলেন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের দিকে। ত্রিপলের নীচে ছাতা হাতে ফের জোর গলায় শুরু হল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান।
শুক্রবার বেলা ১২টা থেকে কখনও মুষলধারে, কখনও বা টিপটিপ করে বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেই বৃষ্টি আন্দোলনকে দমাতে পারেনি। বরং সেখানে উপস্থিত জুনিয়র চিকিৎসকেরা দাবি করেছেন, আন্দোলন দিন দিন আরও বেশি করে সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছে। আরও বেশি মানুষ সমর্থনের হাত বাড়িয়েছেন। দুপুর গড়াতেই দেখা গেল, আন্দোলন দেখতে ভিড় জমিয়েছেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ। অফিসের কাজ সেরে কলেজ মোড় থেকে আন্দোলন দেখতে একাই এসেছিলেন স্বাতীলেখা রায়। তিনি বললেন, ‘‘এত দিন খবরের কাগজে, টিভিতে দেখেছি এই আন্দোলন। আজ চাক্ষুষ করতে চলে এলাম। চিকিৎসকদের এই আন্দোলনে আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’’ লক্ষ্মী দাস তাঁর আট বছরের ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন বাগুইআটি থেকে। লক্ষ্মী বলেন, ‘‘ছেলেও দেখুক ও জানুক প্রতিবাদের ভাষা। নির্যাতিতার
বিচার চাই।’’
এক দিকে খুলেছে খাবারের কাউন্টার। নাম দেওয়া হয়েছে ‘জনগণের ভালবাসা।’ সেখানে সাধারণ মানুষের দিয়ে যাওয়া খাবার উপচে পড়ছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক পড়ুয়া-চিকিৎসক বললেন, ‘‘শুক্রবারই সব থেকে বেশি খাবার এসেছে। চিন্তা হচ্ছে, নষ্ট না হয়ে যায়। তাই আমরা বলছি, কেউ খাবার নিয়ে এলে আমাদের যেন জানিয়ে আসেন। কোন সময়ে খাবার আনতে হবে, সেটা বলে দেব।’’
পাঠভবন স্কুলের প্রাক্তনীরা মিলে খুলেছেন খাবারের স্টল। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ভাত, ডাল, আলু-পোস্ত, ডিমের ঝোল। সেই স্টলে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঐশী পাল। পাশে তাঁর মা মিঠু পাল। তাঁরা এসেছেন ভোজেরহাট থেকে। ঐশী বললেন, ‘‘আমরা পাঠভবনের প্রাক্তনীরা মিলে চাঁদা তুলে এই খাবারের স্টল করেছি। সকালে উঠে আমরা বাজার করে দিয়েছি। মা রান্না করেছেন। ৩০০ জনের মতো রান্না করা হয়েছে।’’ ওই স্টলের পাশেই আবার খিচুড়ি, আলুর দম আর ডিম সেদ্ধ পাওয়া যাচ্ছে। কেউ স্টলে দিয়ে গিয়েছেন আপেল, কলা, পেয়ারা-সহ নানা ধরনের ফল। চকলেট, লজেন্স, কোল্ড ড্রিঙ্ক, বিস্কুট, চানাচুর— যে যা পেরেছেন, দিয়েছেন। কোনও কিছুরই কমতি নেই। চিলি চিকেন, ফ্রায়েড রাইসও রয়েছে পর্যাপ্ত। এক চিকিৎসক বললেন, ‘‘শুধু আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরাই নন, যাঁরা খাবার চাইছেন, সকলকেই দেওয়া হচ্ছে।’’ দেখা গেল, অনেকে আবার নিজেরা আসতে না পারায় খাবার সরবরাহকারী সংস্থার মাধ্যমে সেখানে খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সল্টলেকের এ কে ব্লক থেকে এক দল মহিলা এসেছিলেন থার্মোকলের থালা-বাটি নিয়ে। এ দিন দেখা যায়, স্বাস্থ্য ভবনের আশপাশের কয়েকটি বাড়ির দেওয়ালে আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে লেখা হয়েছে। ওই বাড়িগুলির মালিকেরা এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন।
এ দিকে, ধর্না মঞ্চে চালু হয়েছে ‘অভয়া ক্লিনিক’। চিকিৎসকেরা জানালেন, মানুষ যত ক্ষণ আসবেন, তত ক্ষণ এই ক্লিনিক খোলা থাকবে। কার্ডিয়োলজি থেকে শুরু করে নিউরোসার্জারি, প্রায় সব বিভাগের চিকিৎসকেরাই রয়েছেন। রোগীদের দেখে প্রেসক্রিপশন দেওয়া হচ্ছে।
রাতে দেখা গেল, নতুন কিছু ত্রিপল লাগানো হয়েছে। স্লোগানের ঝাঁঝ আরও তীব্র হয়েছে। সেই স্লোগানে, হাততালিতে যোগ দিচ্ছেন বহু সাধারণ মানুষ। চিকিৎসক সৌরভ রায় বলেন, ‘‘এত মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। নির্যাতিতা বিচার পাবেনই। সব প্রশ্নের জবাবও এক দিন পাবই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy