Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিলি করা গাছের চারা বাঁচছে ক’টি, জানে না শহর

বিলি করা চারাগাছ বা যে চারাগুলি পোঁতা হয় বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচিতে, তার মধ্যে কতগুলি বাঁচে, তাদের আয়ুই বা কত দিন, সে সম্পর্কে ধারণা নেই কারও।

ছবি সংগৃহীত।

ছবি সংগৃহীত।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:০৪
Share: Save:

কেরল পারল। অথচ কলকাতা ভাবলই না! প্রশ্নটা উঠছে বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে বিলি করা গাছের চারার মধ্যে ক’টি শেষ পর্যন্ত বাঁচছে, সেই প্রসঙ্গে। কেরল সরকার ইতিমধ্যেই এ নিয়ে সমীক্ষা চালু করেছে। সেখানকার বন দফতর বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে পোঁতা চারাগাছের ‘সার্ভাইভাল রেট’ অর্থাৎ আয়ু কত দিন, সেই সমীক্ষা করে দেখে।

রাজ্যে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাছের চারা বিলি, ছবি তোলা, হাসি মুখে সেই চারা বিতরণ— রয়েছে সব। কিন্তু বিলি করা চারাগাছ বা যে চারাগুলি পোঁতা হয় বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচিতে, তার মধ্যে কতগুলি বাঁচে, তাদের আয়ুই বা কত দিন, সে সম্পর্কে ধারণা নেই কারও। কারণ, সেই সমীক্ষারই ব্যবস্থা নেই! ফলে চারাগাছ বিলি হয় নিয়মমাফিক। অথচ সেগুলি বাঁচে কি বাঁচে না, জানেন না কেউ।

প্রসঙ্গত, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি-অভ্যাগতদের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানানোর যে রেওয়াজ ছিল তা ইতিমধ্যেই তুলে দিয়েছে কলকাতা পুরসভা। তার পরিবর্তে গাছের চারা দিয়ে অভ্যর্থনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন যেখানে উঠছে তা হল, যে গাছের চারাগুলি দেওয়া হচ্ছে, সেগুলির ভবিষ্যৎ কী? অর্থাৎ ঘটা করে গাছের চারা দেওয়া হল। কিন্তু কতগুলি চারা বাঁচল, সেগুলির ভবিষ্যৎ কী, ওই গাছগুলি কোথাও পোঁতা হল না কি সেগুলি মরে গেল, সে সম্পর্কে কী ভাবে জানা যাবে— এই সব বিষয় নিয়ে কারও কাছেই কোনও সদুত্তর নেই। ফলে রাজ্য সরকারের ‘সেভ গ্রিন, স্টে ক্লিন’ কর্মসূচি চালু হলেও তার সাফল্য নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে।

অতীতে এমন নিদর্শন রয়েছে যে, চারাগাছের ‘বিপুল অপচয়’ দেখে এক সময়ে পরিবেশ দিবসের দিনে চারা বিতরণ বন্ধই করে দিয়েছিলেন কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ। কারণ দেখা গিয়েছিল, যে চারাগাছগুলি বিতরণ করা হচ্ছে সেগুলির অধিকাংশই নষ্ট হচ্ছে। পুরসভার অন্তর্বর্তী সমীক্ষা আরও বলেছিল, অনেকে সেই চারাগাছ বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে যে দশ-পনেরো হাজার চারাগাছ নিয়ম করে বিলি করা হত পরিবেশ দিবসে, সেই রীতি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে পুরকর্তাদের একাংশ মনে করছেন, চারাগাছ দেওয়ার পাশাপাশি কতগুলি চারা বাঁচে, সে সম্পর্কেও পৃথক ব্যবস্থা থাকা দরকার। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘এত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হয়, কিন্তু আদৌ কতগুলি চারাগাছ বাঁচে সেটা তো দেখতে হবে। না হলে চারা পোঁতাও যা, না পোঁতাও তাই। শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা বজায় রাখার জন্য চারাগাছ বিলি বা পোঁতার কোনও অর্থ হয় না।’’

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বিধানসভায় এক প্রশ্নের জবাবে বনমন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, ২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষে বন দফতরের তরফে ১ কোটি ৮ লক্ষ ২৮ হাজার চারাগাছ বিলি করা হয়। কিন্তু সেখানেও একই প্রশ্ন উঠেছে যে, তার মধ্যে কতগুলি বাঁচে, তা কি সমীক্ষা করে দেখা হয়? বনকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, তেমন সমীক্ষা করা হয়নি। দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘সব সময়েই প্রশাসন নজরদারি করবে, তা-ও গাছ পোঁতার মতো বিষয়ে, তা তো হয় না। যাঁরা চারা নিচ্ছেন, দায়িত্ব তো তাঁদেরও থেকে যায়।’’

কিন্তু ক’জন সেই দায়িত্ব নিচ্ছেন, প্রশ্নটা সেখানে। ফলে গাছের চারা শেষ পর্যন্ত বাঁচছে ক’টা, সেই উত্তর কেরল জানলেও জানে না কলকাতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Survey Tree Plantation Kolkata Kerala Saplings
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE