দশটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের ডাকে আগামী ৯ জুলাই দেশব্যাপী শিল্প ধর্মঘট হলে তার গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে পরিবহণ ক্ষেত্রে। কলকাতায় ওই দিন হলুদ ট্যাক্সি, অ্যাপ-ক্যাব, বাইক ট্যাক্সির পরিষেবা ব্যাহত হতে পারে। এআইটিইউসি, সিটু, এআইইউটিইউসি-সহ বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের অনুমোদিত পরিবহণ শ্রমিকদের সংগঠন ওই দিন পরিষেবা বন্ধ রেখে ধর্মঘটে শামিল হবে বলে সূত্রের খবর। এ ছাড়া, বিভিন্ন ব্যবসায়িক কাজে পণ্য পরিবহণের কাজ করেন, এমন ছোট গাড়ির চালক ও কর্মীদের পাশাপাশি অ্যাপ-নির্ভর ডেলিভারি কর্মীদের একাংশও ওই দিন ধর্মঘটে শামিল হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাম শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি-র ‘ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান রোড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর সহ-সভাপতি নওলকিশোর শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, কেন্দ্রের শ্রম কোডের প্রতিবাদ ছাড়াও পরিবহণ ক্ষেত্রে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরোধিতা করে তাঁরা ওই দিনের ধর্মঘটে শামিল হচ্ছেন। ওই দিন হলুদ ট্যাক্সি, অ্যাপ-ক্যাব-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁরা পরিষেবা বন্ধ রাখার ডাক দিয়েছেন। পরিবহণ শিল্পের ওই দিনের ধর্মঘটের কথা জানিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে চিঠি দিয়েছেন তাঁরা।
পুরনো ২৯টি শ্রম আইন বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাতিল অথবা পরিমার্জন করে কেন্দ্র চারটি ভাগে বিভক্ত নতুন শ্রম কোড চালুর কথা আগেই জানিয়েছে। নতুন ওই কোডে শিল্প-বিরোধ সংক্রান্ত আইন এবং সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত ক্ষেত্রগুলিতে শ্রমিকদের অধিকার খর্ব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে অভিযোগ কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনগুলির। পরিবহণ শিল্পে বিভিন্ন অ্যাপ-নির্ভর পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত (গিগ) কর্মীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ারও আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এ শহরেই প্রায় তিন লক্ষ এমন কর্মী রয়েছেন বলে দাবি ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্বের। ওই পরিষেবা ক্ষেত্রে দিনে ১২ ঘণ্টা করে সপ্তাহে চার দিন কাজের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সদ্য প্রকাশিত কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের অ্যাপ-ক্যাব সংক্রান্ত নির্দেশিকাতেও চালকদের বিশ্রামের সময় এবং তাঁদের কাজের ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থার সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি সে ভাবে গুরুত্ব পায়নি বলে অভিযোগ।
এর পাশাপাশি, রাজ্যে নতুন পোর্টালের মাধ্যমে জরিমানা আদায়, রাস্তায় পুলিশি জুলুম, হলুদ ট্যাক্সির পরিষেবায় বেসরকারি সংস্থাকে প্রবেশের পথ খুলে দেওয়া-সহ একাধিক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ওই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে বলে জানান এআইটিইউসি-র নেতা নওলকিশোর। অপর এক বাম শ্রমিক সংগঠন এআইইউটিইউসি-র ‘কলকাতা সাবার্বান বাইক-ট্যাক্সি অপারেটর্স ইউনিয়ন’-এর সভাপতি শান্তি ঘোষ জানিয়েছেন, বাইক-ট্যাক্সি এবং অ্যাপ-নির্ভর অন্যান্য বাইক পরিষেবার কর্মীদের অধিকার খর্ব করার প্রতিবাদে ওই দিন তাঁরাও ধর্মঘটে শামিল হচ্ছেন।
সর্বভারতীয় ভাবে ১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ওই ধর্মঘটে পরিবহণ শিল্প বন্ধ রাখার উপরে বেশি জোর দেওয়ার কথা জানিয়েছে। কলকাতায় হলুদ ট্যাক্সি, অ্যাপ-ক্যাব এবং বাইক-ট্যাক্সি বন্ধ থাকলে বহু যাত্রীকে ভোগান্তির মুখে পড়তে হতে পারে। ব্যাহত হতে পারে খাবার ডেলিভারি এবং অন্যান্য ডেলিভারি পরিষেবাও। যদিও, পরিবহণ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, যে কোনও ধর্মঘটের বিরোধী তারা। পরিষেবা সচল রাখতে সরকার উদ্যোগী হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)