Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মেয়রের হাতেই প্লাস্টিক! প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে

পরিবেশকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন, কলকাতার পুর-প্রশাসনের শীর্ষ পদাধিকারীই যদি ক্যারিব্যাগে বাজার করেন, তা হলে প্লাস্টিক বিরোধী অভিযান আদৌ সফল হবে কি?

বিতর্ক: প্লাস্টিক হাতে বাজারে মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পাশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ছবিই ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

বিতর্ক: প্লাস্টিক হাতে বাজারে মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পাশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ছবিই ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৯ ০০:৩৪
Share: Save:

প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে প্রচার করে কলকাতা পুরসভা। কিন্তু সেই পুরসভার শীর্ষ পদাধিকারীকেই দেখা গেল, প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে বাজার করতে। বুধবার রাতে চেতলায় কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম যখন ক্যারিব্যাগে আনাজ কিনছিলেন, সে সময় পাশে ছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

এই ছবি সংবাদমাধ্যমে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ার পরেই পরিবেশকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন, কলকাতার পুর-প্রশাসনের শীর্ষ পদাধিকারীই যদি ক্যারিব্যাগে বাজার করেন, তা হলে প্লাস্টিক বিরোধী অভিযান আদৌ সফল হবে কি? রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলির প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণে সদিচ্ছার অভাবের প্রমাণ এই ছবি।’’

ফিরহাদ অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি তো প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করিনি। ৫০ মাইক্রনের বেশি পুরু প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ নয়। ওই ক্যারিব্যাগ ৫০ মাইক্রনের থেকে বেশি পুরু ছিল। তাই ব্যবহার করেছি।’’

ক্যারিব্যাগ কতটা পুরু ছিল, সেই তথ্যের কচকচিতে যেতে নারাজ পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের মতে, গোটা বিশ্বে ‘এক বার ব্যবহারযোগ্য’ প্লাস্টিক বর্জনের কথা বলা হচ্ছে। ক্যারিব্যাগ সেই গোত্রেই পড়ে। তাই ক্যারিব্যাগ বর্জন করাই শ্রেয়। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘ক্যারিব্যাগ ৫০ মাইক্রনের থেকে পুরু কি না, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। মুখ্যমন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়রকে ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করতে দেখে আমি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছি। ওঁদের ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের প্রভাব পরোক্ষে আমজনতার উপরেও পড়বে।’’

পরিবেশকর্মীদের একাংশের মন্তব্য, এই ছবি দেখে আম-জনতা প্লাস্টিকবিরোধী বিধিনিষেধ মানতে চাইবে তো? এক পরিবেশকর্মী মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সিকিম, মহারাষ্ট্র, ওড়িশায় খোদ মুখ্যমন্ত্রীরা প্লাস্টিক বিরোধী প্রচার করেন। এ রাজ্যে তার উল্টো ছবি দেখা গিয়েছে।

পরিবেশবিদদের বক্তব্য, বিশ্বে জল এবং জীববৈচিত্রের ক্ষতির পিছনে অন্যতম কারণ প্লাস্টিক। কারণ, প্লাস্টিক কোনও ভাবেই সাধারণ উপায়ে নষ্ট হয়ে প্রকৃতিতে মিশে যায় না। তাই এর কুপ্রভাব দীর্ঘস্থায়ী। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের দাপট কী তা প্রতি বছর বর্ষায় হাড়ে হাড়ে টের পায় কলকাতা। পরিবেশকর্মীদের যৌথ সংগঠন সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্ত বলছেন, ‘‘কলকাতায় নিকাশির বেহাল দশার পিছনেও এই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ দায়ী। ফি বছর জল জমলে নালা থেকে রাশি রাশি ক্যারিব্যাগ বার করা হয়। সেই ক্যারিব্যাগ বাজার থেকে নিয়ে গর্হিত কাজ করেছেন মেয়র।’’ তাঁর মতে, যাঁরা আইন তৈরি করেন, তাঁরাই যদি আইন না মানেন, তা হলে আমজনতা নিষেধাজ্ঞা মানবেন কেন?

সুভাষবাবু বলছেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী ক্যারিব্যাগ দেওয়া যেমন অপরাধ, তা নেওয়াও অপরাধ। এ ক্ষেত্রে তা হলে তো মেয়র সেই দোষে অপরাধী!’’ এ প্রসঙ্গে পরিবেশ দফতরের কর্তারাও কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

এ-ও প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে শহরের বিভিন্ন বাজারে যে ক্যারিব্যাগ বিরোধী প্রচার চলে তার অর্থ কী? নববাবুর দাবি, ‘‘ওই সব প্রচার করা হলেও তা শীর্ষকর্তারা মন থেকে করেন না।’’ পুর কর্তারা বলছেন, ৫০ মাইক্রনের নীচে ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ। ফলে সেই প্রচারের সঙ্গে মেয়রের ক্যারিব্যাগে বাজার করার কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু পরিবেশকর্মীরা বলছেন, ৫০ মাইক্রনের পুরু ক্যারিব্যাগ বাজারে আদৌ মেলে তো? আমজনতা আদৌ ৫০ মাইক্রনের পাতলা এবং ৫০ মাইক্রনের থেকে পুরু ক্যারিব্যাগের ফারাক বোঝেন কি না, সে প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Mayor Plastic pollution KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE