Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কম্পিউটার কিনে চলত নোট ছাপানো

দু’দিন আগে নকল নোট-কাণ্ডে এলাকার দুই যুবককে গ্রেফতারের পরে এমনটাই জেনেছেন তদন্তকারীরা। এমনকী, ধৃতদের জেরা করে শনিবার সকালে হদিস মিলেছে নকল নোট ছাপানোর কারখানার।

অর্ঘ্য সাহা ও কৃষ্ণ পোড়ে

অর্ঘ্য সাহা ও কৃষ্ণ পোড়ে

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৮ ০১:২৫
Share: Save:

হাত পাকানো শুরু হয়েছিল পঞ্চাশ টাকা দিয়ে। তাতে ধরা না পড়ায় সাহস বাড়ে। তার পরেই শুরু করেছিল ২০০ টাকার নোট ছাপানো। সবটাই নকল!

দু’দিন আগে নকল নোট-কাণ্ডে এলাকার দুই যুবককে গ্রেফতারের পরে এমনটাই জেনেছেন তদন্তকারীরা। এমনকী, ধৃতদের জেরা করে শনিবার সকালে হদিস মিলেছে নকল নোট ছাপানোর কারখানার। যা ওই যুবকদের এক জনের বাড়িতেই গত এক মাস ধরে রমরমিয়ে চলছিল। এ দিন সেখানে হানা দিয়ে কম্পিউটারের হার্ডডিক্স-সহ স্ক্যানার-প্রিন্টার, চারটি অর্ধসমাপ্ত ২০০ টাকার নোট ও নোট ছাপার কাগজ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে ২৬টি ২০০ টাকার নকল নোট নিয়ে ডানলপ মোড়ে একটি দোকানে ঠান্ডা পানীয় কিনতে ঢুকে ধরা পড়ে অর্ঘ্য সাহা নামে এক যুবক। তাকে জেরা করে ওই দিনই ধরা হয় কৃষ্ণ পোঁড়েকে। দু’জনই জেরায় বারবার দাবি করেছিল, নকল নোটগুলি তাদের এক ব্যক্তি দিয়েছেন। কিন্তু সন্দেহ হওয়ায় দফায় দফায় জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, বরাহনগরের শরৎচন্দ্র ধর রোডে কৃষ্ণর বাড়িতেই রয়েছে নকল নোট ছাপানোর কারখানা।

জেরায় তদন্তকারীরা জেনেছেন, ছোট থেকে কৃষ্ণ ও অর্ঘ্য একই স্কুলে পড়াশোনা করেছে। উচ্চমাধ্যমিক পাশের পরে পড়া আর এগোয়নি। মাস দুই আগে তারা ইন্টারনেট ঘেঁটে বিভিন্ন ভিডিয়ো দেখে নকল নোট বানানোর পরিকল্পনা করে। এর পরে ছেলে কৃষ্ণর চাপে পড়ে মাস দুই আগে কম্পিউটার, প্রিন্টার কাম স্ক্যানার কিনে দেন তার বাবা অনন্তবাবু। তিনি বলেন, ‘‘খুব কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে সব কিনে দিলাম। ছেলে বলেছিল, পড়ার কাজে লাগবে। এর থেকে বেশি কিছু জানি না।’’ কম্পিউটার পাওয়ার পরে গত এক মাস ধরে নকল নোট ছাপতে শুরু করে ওই দুই যুবক।

পুলিশ জেরায় জেনেছে, প্রথমে ৫০ টাকার নোট ছাপিয়ে তা কয়েক দিন বাজারে চালিয়েছিল তারা। কিন্তু কেউ নকল নোট বলে বুঝতে পারছে না দেখে ২০০ টাকার নোট ছাপতে শুরু করে দুই বন্ধু। জেরায় তাদের দাবি, ওই নকল নোট নিয়ে তারা কোনও দোকানে জিনিস কিনে টাকাটি ভাঙিয়ে কি‌ছু আসল টাকা পেত। এ ছাড়াও হাতে আসত কিছু জিনিস। সব মিলিয়ে দু’জনের রোজগার মন্দ হচ্ছিল না বলেই দাবি পুলিশের।

এ দিন শরৎচন্দ্র ধর রোডে গিয়ে দেখা গেল, ঘিঞ্জি গলির ভিতরে রয়েছে কৃষ্ণদের দোতলা বাড়ি। উপরের অংশ এখনও নির্মীয়মাণ। পিছনের অংশে থাকেন ভাড়াটেরা। বাড়িতে ঢুকেই সিঁড়ির কাছে কৃষ্ণর ঘর। সেখানেই চলত নকল নোট ছাপার কাজ। পুলিশ যাওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকে দরজায় খিল এঁটে বসে অনন্তবাবুরা। কৃষ্ণর ঠাকুরমা গীতাদেবী ভাড়াটের ঘরে বসে কেঁদে চলেছেন। ছোট থেকে চেনা ছেলেটা যে এমন কাজ করতে পারে, বিশ্বাস করতে পারছেন না প্রতিবেশী বিশ্বনাথ সাহা, স্বপন দাসেরা। খবর পেয়ে এলাকায় আসেন কাউন্সিলর অঞ্জন পাল। তিনি বলেন, ‘‘অনন্তবাবু খুবই ভাল মানুষ। মাথায় করে আনাজ নিয়ে টবিন রোড বাজারে বিক্রি করে সংসার চালিয়ে ছেলেকে বড় করেছেন। কিন্তু ছেলে এমন কেন করল, বোধগম্য হচ্ছে না।’’ তবে এক মাস ধরে কৃষ্ণর আচরণে কি‌ছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিলেন কয়েক জন প্রতিবেশী।

পুলিশকর্তারা জানান, নকল নোটগুলি পরীক্ষার জন্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। তবে এই নকল নোট-কাণ্ডে শুধু ওই দুই যুবকই জড়িত, না আরও কেউ রয়েছে, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fake note
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE