Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বৃদ্ধাকে ঘরে ফেরাতে আগ্রহী ভাই-বোনেরা

আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সেই খবর পড়েই শনিবার অরণ্যের সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ করেন শান্তশীলা হালদার নামে এক মহিলা। তিনি জানান, ওই বৃদ্ধার নাম মালা দত্ত। সম্পর্কে তাঁর দিদি।

এই অবস্থাতেই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেন অরণ্য। —নিজস্ব চিত্র।

এই অবস্থাতেই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেন অরণ্য। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৮ ০১:২৪
Share: Save:

স্ত্রী স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। তবুও সংসার চালাতে সেই স্ত্রী-কেই ভিক্ষা করতে পাঠাতেন স্বামী। এক দিন ভিক্ষা করতে বেরিয়ে আর ফেরেননি প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধা। বৃহস্পতিবার যশোর রোড থেকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করেন অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি। পাভলভ হয়ে আপাতত তিনি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। যদিও বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে গিয়ে দিনভর নাজেহাল হতে হয় অরণ্যকে। পুলিশও সে ভাবে সাহায্য করেনি বলে অভিযোগ।

আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সেই খবর পড়েই শনিবার অরণ্যের সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ করেন শান্তশীলা হালদার নামে এক মহিলা। তিনি জানান, ওই বৃদ্ধার নাম মালা দত্ত। সম্পর্কে তাঁর দিদি। জানা যায়, গত ৮ মার্চ থেকে নিখোঁজ ছিলেন মালা। লেক থানায় নিখোঁজ ডায়েরিও করেছিলেন তাঁরা।

বৃহস্পতিবার যশোর রোড ধরে বাসে করে যাওয়ার পথে এয়ারপোর্টের কাছে একটি ডিভাইডারে ওই বৃদ্ধাকে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে দেখেন অরণ্য। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করাতে গিয়ে বেলা ১২টা থেকে রাত ২টো পর্যন্ত ভোগান্তি পোহাতে হয় অরণ্যকে। তবে রাতের দিকে ওই বৃদ্ধাকে ব্যারাকপুর মহিলা থানায় আশ্রয় দিতে রাজি হয় পুলিশ। শুক্রবার ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক বৃদ্ধাকে পাভলভে রাখার নির্দেশ দেন। তবে শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় পাভলভ থেকে তাঁকে পাঠানো হয়েছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

শান্তশীলা জানান, ছয় ভাইবোনের মধ্যে মালাদেবী বাবা-মায়ের তৃতীয় সন্তান। ৩৯ বছর আগে তাঁর বিয়ে হয় শ্যামল চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। ছোটবেলা থেকেই তাঁদের প্রেম ছিল। তবে মালাদেবীর রোগ ধরা পড়ার পর থেকেই সম্পর্কে শীতলতার শুরু। মালাদেবীর এক মেয়েও রয়েছেন। শান্তশীলা বলেন, ‘‘জামাইবাবু বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। কিন্তু, সব টাকা উড়িয়ে দিয়েছেন। শেষ দিকে দিদিকে দিয়ে ভিক্ষা করাতেন। দিদিকে খোঁজার কোনও চেষ্টাই করেননি। আমরা প্রশ্ন করায় বলেছিলেন, চার দিন ধরে ও ফেরেনি।’’ শ্যামলবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কে কোথায় গিয়েছে, কিছুই জানতে চাই না।’’

মনোরোগ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, স্কিৎজোফ্রেনিয়ার বড় চিকিৎসা সঠিক পরিচর্যা আর সঙ্গ দেওয়া। এই বৃদ্ধার ক্ষেত্রে সেই পরিচর্যারই সবচেয়ে অভাব ছিল। তাই রোগ সারার বদলে তা চরম আকার নিয়েছিল।

দিদিকে কেন নিজেদের কাছে নিয়ে গিয়ে রাখলেন না তাঁরা?

শান্তশীলার দাবি, ‘‘মেজদা কিছু দিন দিদিকে নিয়ে গিয়ে রেখেছিলেন। তবে ও খুব হিংস্র হয়ে উঠত।’’ এখন দিদিকে সুস্থ করে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান ওঁরা। বললেন, ‘‘কাগজ পড়ে দিদিকে খুঁজে পেলাম। সুস্থ হলে আমরাই নিয়ে আসব। যিনি ওকে বাঁচিয়েছেন তাঁকে ধন্যবাদ।’’ অরণ্য শনিবার বলেন, ‘‘বৃদ্ধা পরিবারের কাছে ফিরতে পারছেন, এটাই বড় পাওনা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE