Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভালুকের পাতে দই-ভাত, সাপের জন্য টেবিল ফ্যান

গরম পড়লেই শরীরের কথা ভেবে মানুষের খাবারে বদলের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। একই ভাবে আলিপুর চিড়িয়াখানার অন্দরে ‘অ-মানুষ’দের খাবারেও বদল এসেছে।

আরাম: ফ্যানের সামনে সাপ। সোমবার, চিড়িয়াখানায়। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

আরাম: ফ্যানের সামনে সাপ। সোমবার, চিড়িয়াখানায়। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৮ ১৬:২৮
Share: Save:

চড়া রোদে রসালো তরমুজ পেলেই মেজাজ ফুরফুরে হয়ে যায় শিম্পাঞ্জি বাবুর। স্বাস্থ্যরক্ষায় গরমের দুপুরে চেটেপুটে দই-ভাতে পেট ভরাচ্ছে ভালুকেরা!

গরম পড়লেই শরীরের কথা ভেবে মানুষের খাবারে বদলের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। একই ভাবে আলিপুর চিড়িয়াখানার অন্দরে ‘অ-মানুষ’দের খাবারেও বদল এসেছে। শুধু তা-ই নয়, খাবার, জলের উপরে বে়ড়েছে কিপারদের নজরদারিও।

চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত জানাচ্ছেন, পশুশালায় নিরামিষাশীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। শতকরা হিসেবে আলিপুর পরিবারের প্রায় ৯০ শতাংশই ফলমূল, ঘাসপাতার উপরে নির্ভরশীল। তবে গরমের কথা ভেবে সকলের ডায়েটেই বদল আনা হয়েছে। শিম্পাঞ্জি, বানর, পাখিদের পাতে বেশি করে শসা, তরমুজের মতো রসালো ফল দেওয়া হচ্ছে। জলে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে ‘ওআরএস’। দেওয়া হচ্ছে ‘এ’, ‘ডি’-র মতো নানা রকমের ভিটামিনও। ভালুকদের শরীর ঠান্ডা রাখতে দই-ভাত দেওয়া হচ্ছে।

চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, বাঘ, সিংহের মতো আমিশাষীদের খাদ্যতালিকায় বদলের উপায় কম। তবে এ সময়ে খাবার কিছুটা কম দেওয়া হয় তাদেরও। সাধারণত এক-একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘ, সিংহের দিনে ৭-৮ কিলোগ্রাম মাংস লাগে। এ সময়ে গড়ে দেড় থেকে দু’কিলোগ্রাম কমিয়ে দেওয়া হয়। মুরগির মতো হাল্কা মাংসও দেওয়া হয়। জলে যাতে কোনও ঘাটতি না পরে, সে দিকেও নজর রাখেন অভিজ্ঞ কিপার কিংবা পালক-পিতারা। ‘‘গরমে বাঘ-সিংহদেরও মাংসে কিছুটা অরুচি তৈরি হয়,’’ বলছেন অধিকর্তা।

তবে শুধু খাবারে নয়, মানুষের মতো এ সময়ে চিড়িয়াখানার বাসিন্দাদের বাসস্থানও কিন্তু বদলানো হয়। পাখিদের খাঁচার উপরে দরমার বেড়ার ছাউনি দেওয়া হয়েছে। সকালে বাসা ঠান্ডা রাখতে জল ছিটোনো হচ্ছে। বাঘ, সিংহ, হাতি, অ্যালডেবরা কচ্ছপদের জল ছিটিয়ে স্নানও করান কিপারেরা। হাতিদের খাঁচায় তো স্নানের জন্য ফোয়ারা বসানো হয়েছে! খাঁচায় লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে ফ্যান। ‘‘সাপেদের খাঁচাতেও ফ্যান লাগানো হয়েছে,’’ বলছেন আলিপুরের এক কর্তা।

সম্প্রতি আলিপুরে ক্যাঙারু এসেছে। গরমে তাদের ক্ষেত্রেও বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। চিড়িয়াখানার একটি সূত্র বলছে, রোদে, গরমে, আর্দ্রতায় ওরা চট করে অসুস্থ হয়ে প়়ড়তে পারে। তাই খাঁচার উপরে টিন এবং তার নীচে প্লাইউডের ছাউনি লাগানো হয়েছে। টিনের উপরে রয়েছে খড়ের আস্তরণ। দরজা, জানলায় ঝুলছে খসখস। শরীর জুড়োতে পাতে বেশি করে পড়ছে গাজর, রাঙা আলু, কচি ঘাসের মতো খাবার। গরম ঠেকাতে খাঁচার ভিতরে মাটির দেওয়ালও দেওয়া হয়েছে।

আশিসবাবু বলছেন, ‘‘আমজনতার কাছে ওরা মানুষ নয়, কিন্তু আমাদের কাছে ওরা মানুষের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Alipur Zoo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE