Advertisement
E-Paper

ভাড়াটে খুনিকে ৬০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন শম্পার স্বামী!

দেড় বছর আগে চিড়িয়াবাগানের বাড়িতে সাফাইয়ের কাজে রশিদের যাতায়াত শুরু হয়। সে সুপ্রতিমকে মালিশও করে দিত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৮ ০২:৪৫
শম্পা দাস

শম্পা দাস

খুনের ছ’মাস আগে থেকেই যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল কৈখালি-কাণ্ডে নিহত সিভিক ভলান্টিয়ারের স্বামী ও শাশুড়ি। সেই মতো ভাড়াটে খুনিদের ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে কিছু গয়না দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও। এমনই অভিযোগ পুলিশের। তবে শেষরক্ষা হয়নি। সোমবার বিধাননগর কমিশনারেটের ডিসি (সদর) অমিত জাভালগি জানান, শম্পা দাসকে ষড়যন্ত্র করে খুনের অভিযোগে তাঁর স্বামী সুপ্রতিম দাস ও শাশুড়ি মীরা দাসকে সোমবার সকালে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে এই ঘটনায় অভিযুক্ত ভাড়াটে খুনিদের পাণ্ডা রশিদ মোল্লাকেও। রশিদ আবার বিধাননগর পুর নিগমের সাফাইকর্মী!

শুক্রবার রাতে কৈখালির চিড়িয়াবাগানের বাড়িতে একতলায় সিঁড়ির ঘরের সামনে শম্পার দেহ উদ্ধার হয়। স্বামীকে দোতলায় চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়। তার শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। সুপ্রতিম দাবি করেছিল, চার ডাকাত লুঠপাটের উদ্দেশ্যে ঘরে ঢুকে শম্পাকে খুন করার পরে তার ওই অবস্থা করে।

বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রের খবর, শম্পার বাড়ি ঢোকার আগে দুষ্কৃতীরা ঘরের ভিতরে ছিল ঠিকই, তবে তা ছিল খুনের চিত্রনাট্যের অঙ্গ। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ রশিদ এবং তার দুই সঙ্গী বাড়িতে ঢোকার পরেই নাতি এবং পরিচারিকাকে নিয়ে বেরিয়ে যায় মীরা। দোতলায় শোয়ার ঘরে লুকিয়ে ছিল রশিদেরা। সাড়ে ৮টা নাগাদ শম্পা সেই ঘরে ঢোকা মাত্র শাবল জাতীয় কিছু দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করে খুনিরা। রক্তাক্ত অবস্থায় সিঁড়ি দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন শম্পা। কিন্তু কোনও কিছুতে মাথায় আঘাত লেগে সিঁড়ির দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বসে পড়েন। এর পরে ছুরি দিয়ে একের পর এক কোপ বসানো হয় শম্পার বুকে। ময়না-তদন্ত বলছে, মোট ১৯ বার কোপানো হয় শম্পাকে। তাতেও আশ না মেটায় শ্বাসরোধ করার জন্য বালিশ এবং সোফার কুশন দিয়ে শম্পার মুখ চেপে ধরা হয়।

পুলিশ সূত্রের খবর, এক সময়ে দুষ্কৃতীরা সুপ্রতিমকে ‘কাজ’ হয়েছে কি না, দেখে নিতে বলে। দোতলা থেকে উঁকি মেরে শম্পার দেহ দেখে নিশ্চিত হয় সুপ্রতিম। এর পরে চিত্রনাট্য মেনে সুপ্রতিমকে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে ব্লেড দিয়ে হাতে-কাঁধে আঘাত করা হয়। এ দিন ডিসি বলেন, ‘‘সুপ্রতিমের শরীরে কিছু আঘাত করা হয়েছে। কিছু আঘাত সে নিজে করেছে।’’ কাজ শেষে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় রশিদ ও তার দুই সঙ্গী। আর সুপ্রতিম ঘাড় এলিয়ে চেয়ারে বসে থেকে সংজ্ঞাহীনের নিখুঁত অভিনয় করে যায়।

শম্পাকে খুনের পিছনে সম্পত্তিজনিত কারণই প্রধান বলে বক্তব্য পুলিশের। তদন্তকারীরা জানান, চিড়িয়াবাগানের বাড়িটি সুপ্রতিমের মায়ের নামে। তার দাবি, শম্পা তাঁর নামে বাড়ি লিখে দিতে চাপ দিচ্ছিলেন। তার জন্য শাশুড়ি এবং স্বামীর উপরে তিনি অত্যাচারও করতেন বলে অভিযোগ। মেরুদণ্ডের সমস্যার কারণে সুপ্রতিমের স্বাভাবিক শারীরিক সক্ষমতা ছিল না। দাম্পত্য জীবনে সেই রোগও প্রভাব ফেলেছিল।

দেড় বছর আগে চিড়িয়াবাগানের বাড়িতে সাফাইয়ের কাজে রশিদের যাতায়াত শুরু হয়। সে সুপ্রতিমকে মালিশও করে দিত। পুলিশ সূত্রের খবর, স্ত্রীর আচরণে ‘বীতশ্রদ্ধ’ সুপ্রতিম তাঁকে খুনের চক্রান্ত করে। টাকার বিনিময়ে রাজি হয় রশিদ। তার অন্য দুই সঙ্গীর মধ্যে এক জনের বিরুদ্ধে ২০টি অপরাধমূলক কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

এ দিন তদন্তকারীরা জানান, প্রাথমিক ভাবে ওই ঘটনায় বেশ কিছু অসঙ্গতি ছিল। ওই বাড়িতে কার কার যাতায়াত ছিল, তা জানতে পরিচারিকাকে চেপে ধরা হয়। সেই নামের তালিকায় রশিদও ছিল। এর পরে রহস্যের জট খুলতে আর বেশি দেরি হয়নি। পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ঘটনার সবটাই এখন আমাদের কাছে পরিষ্কার। তবে তদন্তের স্বার্থে কিছু তথ্য গোপন রাখতে হচ্ছে।’’

Civic Volunteer Shampa Das Murder Contract Killer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy