Advertisement
E-Paper

জীর্ণ বাড়ি ভাঙার প্রক্রিয়া শুরু কাল

পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, শহরে যে ভাবে ধারাবাহিক ঝড় হচ্ছে, আর তার জেরে গাছ ও বাড়ি ভেঙে পড়ছে, তাতে বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে এলাকাভিত্তিক সমীক্ষা শুরু হয়েছে।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৮ ০১:৫১
বেহাল: ‘বিপজ্জনক’ বোর্ড নিয়ে বিপদের দিন গুনছে শহরের এমনই অসংখ্য বাড়ি। শনিবার, লেনিন সরণিতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

বেহাল: ‘বিপজ্জনক’ বোর্ড নিয়ে বিপদের দিন গুনছে শহরের এমনই অসংখ্য বাড়ি। শনিবার, লেনিন সরণিতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

‘‘বোর্ডটা তো গত ২০-২৫ বছর ধরেই রয়েছে। নতুন কিছু নয়।’’ বাইরে ঝোলানো ‘বিপজ্জনক বাড়ি’ লেখা বোর্ডের দিকে তাকিয়ে কিছুটা নিরুৎসাহ গলাতেই বললেন দীনেশ রায়। তার পরে বললেন, ‘‘পুরসভার লোকেরা আসে তো! কিন্তু কিছুই হয় না। একই ভাবে তো কাটিয়ে দিলাম এতগুলো বছর।’’ রানি রাসমণি রোডে একশো বছরেরও বেশি পুরনো একটি বাড়ির ভিতরে বসে কথাগুলো বলছিলেন দীনেশবাবু। বাড়ির দেওয়ালে বটগাছের শিকড় দু’তলা পর্যন্ত উঠে গিয়েছে। বিপজ্জনক বাড়ি যেমন হয়, তেমনই এই বাড়িটিরও এক-একটি অংশ ভেঙে ভেঙে পড়ছে। তবু ওই বাড়িতে অন্তত ১৫টি পরিবার বাস করে!

গত মাসে কালবৈশাখী ঝড়ে লেনিন সরণিতে চলন্ত অটোর উপরে গাছ পড়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই গাছটি একটি বিপজ্জনক বাড়ির দেওয়াল ঘেঁষে উঠেছিল। শেষে দেওয়াল ভেঙেই গাছটি রাস্তায় পড়ে। পরে কলকাতা পুরসভার কর্মীরা গিয়ে বাড়িটির বিপজ্জনক অংশ ভেঙে দেন বটে, কিন্তু তত ক্ষণে যা বিপর্যয় ঘটার ঘটে গিয়েছে। এ বার আর ঝুঁকি নিতে নারাজ পুরসভা। তাই লেনিন সরণি, রানি রাসমণি রোড-সহ বিভিন্ন এলাকার অনেকগুলি বিপজ্জনক বাড়িকে নোটিস দিয়েছে তারা। যে সমস্ত বাড়ি ভাঙার আইনি প্রক্রিয়া কাল, সোমবার থেকে শুরু করা হবে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।

রানি রাসমণি রোডের ওই বাড়িতে বসে দীনেশবাবু জানান, সেখানেও বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে বিবাদের জেরে সংস্কার করা যাচ্ছে না বিপজ্জনক ওই বাড়ির। যার জেরে প্রায় এক যুগ আগে বিপজ্জনক বলে নোটিস ঝোলানো হলেও তা নিয়ে এক পা-ও এগোনো যায়নি।

তবে পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, শহরে যে ভাবে ধারাবাহিক ঝড় হচ্ছে, আর তার জেরে গাছ ও বাড়ি ভেঙে পড়ছে, তাতে বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে এলাকাভিত্তিক সমীক্ষা শুরু হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট এলাকায় কতগুলি বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে, তার তালিকা ‘আপডেট’ করা হচ্ছে। সেই সমীক্ষা অনুযায়ী, এ বার বাড়ি ভাঙার আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে চাইছে পুর প্রশাসন। ‘বিপজ্জনক’ বোর্ড দীর্ঘদিন ধরে থাকা সত্ত্বেও যে সব বাড়ির সংস্কার করা হয়নি, সেই বাড়িগুলিকেই এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এক পদস্থ পুরকর্তার কথায়, ‘‘আগে বিপজ্জনক বাড়ি বিক্ষিপ্ত ভাবে ভাঙা হত। কিন্তু এ বার এলাকাভিত্তিক সেগুলি ভাঙা বা ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’

যদিও পুর আধিকারিকেরা জানেন, ব্যাপারটি সহজ নয় মোটেই। কারণ, রানি রাসমণি রোডের ওই বিপজ্জনক বাড়ির মতো অন্য একাধিক বাড়ি নিয়ে আইনি জটিলতা রয়েছে। মালিক-ভাড়াটে তো বটেই, শরিকি ঝামেলাও রয়েছে। রানি রাসমণি রোডের ওই বাড়ির এক মালিকের কথায়, ‘‘ভাড়াটেরা তো ভাড়াই দেন না! ভাড়াটে না সরলে কী ভাবে বাড়ি সারাব?’’

যদিও পুরকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এ সব যুক্তি আর মানা হবে না। কারণ, মালিক বা ভাড়াটে কোনও পক্ষই বাড়ির সংস্কারে রাজি না হলে নতুন বিল্ডিং রুলে পুরসভার হাতে বাড়তি ক্ষমতা রয়েছে বাড়ির বিপজ্জনক অংশ ভেঙে দেওয়ার। তার পরে নির্মাণের কাজে অভিজ্ঞ কোনও সংস্থাকে দিয়ে বাড়িটির পুনর্নির্মাণ করার! এ বার সেই আইনই প্রয়োগ করতে চাইছে পুরসভা।

পুরসভা বাড়ি ভাঙার আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছে শুনে বাড়ির এক ভাড়াটের অম্লান বক্তব্য, ‘‘আমার দাদু, বাবা এখানেই থাকতেন। সকলেই মারা গিয়েছেন। এখন আমি আছি। কত দিন ধরে তো একই কথা শুনে আসছি। দেখা যাক, এ বার কী হয়!’’

KMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy