পাঠ: চলছে প্রশিক্ষণ। শনিবার, কলকাতা পুলিশের অ্যাথলেটিক ক্যাম্পে। ছবি: সুমন বল্লভ
হাতের মোবাইল, কাঁধের ব্যাগ কিংবা মাথার ক্লিপটাও হতে পারে আত্মরক্ষার অস্ত্র! রান্নাঘরের খুন্তিটুকু থাকলেও যথেষ্ট। হাতের নাগালে থাকা সামান্য কিছু জিনিস দিয়েই কুপোকাত করে ফেলা যায় দুষ্কৃতীকে।
বাড়িতে একা। হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠেছে। দরজা খুলতেই আততায়ী এসে মুখ চেপে ধরে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে, লুঠপাট কিংবা অসৎ কাজের উদ্দেশে। হাতের কাছে কিছু নেই। এমনকি, মোবাইল কিংবা মাথার ক্লিপও নেই। কী করে আত্মরক্ষা করবেন তখন? তার উপায়ও রয়েছে। শরীরের এমন কিছু জায়গা আছে, যেখানে দু’টি কিংবা একটি আঙুল দিয়েই সাময়িক ভাবে কুপোকাত করে দেওয়া যায় আততায়ীকে।
রাস্তায় হঠাৎ কেউ ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলেই, ‘বাড়িতে মা-বোন নেই’ প্রশ্ন তুলে চিৎকার না করে বরং ভেঙে দিতে হবে হেনস্থাকারীর মনের জোরটাই। কারণ, হেনস্থার প্রতিবাদে উত্তেজিত হলে, হেনস্থাকারীর মনের জোর বাড়ে। এ চেয়ে পাল্টা প্রশ্ন করা যায়, ‘দাদা, ভাল লেগেছে তো ধাক্কা দিয়ে?’
এমনই নানা উপায় প্রয়োগ করে মেয়েদের আত্মরক্ষার পাঠ দিতে শনিবার কলকাতা পুলিশের অ্যাথলেটিক ক্লাবে শুরু হল ‘তেজস্বিনী’ ক্যাম্প। প্রথম দিনেই ‘তেজস্বিনী’ হয়ে উঠতে সেখানে হাজির ছিলেন চল্লিশের মহিলা থেকে স্কুলপড়ুয়া কিশোরীও। পেশায় চিকিৎসক থেকে শুরু করে স্কুল শিক্ষিকা, ব্যবসায়ী, পড়ুয়া, গৃহবধূ— আত্মরক্ষার পাঠ নিতে হাজির হলেন সকলেই।
পরিসংখ্যান বলছে, এ শহরে মেয়েদের হেনস্থার ঘটনার হার বাড়ছে দিন দিন। তেমন বহু ঘটনা নিত্যই উঠে আসছে খবরের শিরোনামেও। যার জেরে কাজে বেরোলে কিংবা বাড়িতে একা থাকলে অনেক সময়েই মেয়েদের নিয়ে চিন্তায় থাকেন পরিজনেরা। সব দিক খতিয়ে দেখে তাই কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ সার্জেন্টদের উদ্যোগে কলকাতা পুলিশের তরফে পাঁচ দিনের আত্মরক্ষার পাঠ শুরু হয়েছে কলকাতা অ্যাথলেটিক ক্লাবে।
নানা রকম ঘুষি, শরীরের দুর্বল অংশ চিনিয়ে দেওয়া, হাতের নাগালে থাকা জিনিসপত্র দিয়ে আততায়ীকে কুপোকাত করাই শুধু নয়, তাঁদের শেখানো হচ্ছে উপস্থিত বুদ্ধির ব্যবহারও। পুলিশ জানাচ্ছে, পাঁচ দিনের এই কর্মশালায় সবই মেয়েদের আত্মরক্ষার নানা দিকই শেখানো হচ্ছে। তবে জোর দেওয়া হচ্ছে মানসিক বল তৈরি করা ও উপস্থিত বুদ্ধি প্রয়োগের দিকেই। কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের সহকারী কমিশনার কৃষ্ণেন্দু পাল বলেন, ‘‘প্রতিটি মেয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘরে-বাইরে এত ধরনের কাজ সামলান, তাঁরা যেন প্রত্যেকেই এক এক জন দুর্গা। কিন্তু তাঁদের অনেকেই জানেন না কোথায়, কী উপায়ে মারলে প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করা যায়। আমরা সেটুকুই প্রশিক্ষণ দেওয়ারই চেষ্টা করছি। যাতে সব নারীর ভিতরের দুর্গা সম্পূর্ণ ভাবে জেগে ওঠে।’’ কৃষ্ণেন্দুবাবুর পাশাপাশি এই কাজে যুক্ত রয়েছেন সহকারী পুলিশ কমিশনার শোভেন বন্দ্যোপাধ্যায়, ইনস্পেক্টর অভিজ্ঞান মুখোপাধ্যায়, বেদপ্রকাশ রাই ও ক্লাবের সম্পাদক চণ্ডীচরণ পাণ্ডা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy