Advertisement
০৮ মে ২০২৪

ভরসায় জল ঢেলে জীবাণু বোতলেও

এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘ই বি যে সব তথ্য জানতে চেয়েছে, সেগুলির কাগজপত্র শীঘ্রই পাঠানো হবে।’’ 

বাজেয়াপ্ত হয়েছে এমনই বহু বোতল। নিজস্ব চিত্র

বাজেয়াপ্ত হয়েছে এমনই বহু বোতল। নিজস্ব চিত্র

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৮ ০২:৪৩
Share: Save:

মাস তিনেক আগে দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন ওয়ার্ডে আন্ত্রিকের প্রকোপ বাড়ায় বোতলবন্দি জলের চাহিদা বেড়েছিল হু হু করে। ওই সব এলাকায় বোতলবন্দি জলের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করার পরে চক্ষু চড়কগাছ পুর স্বাস্থ্যকর্তাদের। গুণমানের তোয়াক্কা না করার পাশাপাশি বেআইনি ভাবে ব্যবসা করায় আটটি বোতলবন্দি জল প্রস্তুতকারক সংস্থার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছে কলকাতা পুরসভা। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা অভিযুক্ত সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে শীঘ্রই আইনি ব্যবস্থা নিতে চলেছি।’’

গত মার্চে এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ (ইবি) ও পুরসভা শহরের বিভিন্ন স্থানে হানা দিয়ে ৫৭টি সংস্থার বোতলবন্দি জলের নমুনা সংগ্রহ করেছিল। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘মাত্র সাতটি সংস্থা জলের গুণমানের সার্টিফিকেট পেয়েছে। বাকি নমুনার কোনওটি পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি, তো কোনওটি লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করছে বলে নজরে এসেছে।’’ অভিযোগ, লাইসেন্সপ্রাপ্ত কিছু সংস্থার নাম ভাঁড়িয়েও ব্যবসা করছে বহু সংস্থা। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘শহরজুড়ে বোতলবন্দি জল বিক্রিতে অসাধু চক্র কাজ করছে। আমরা পুরোটাই খতিয়ে দেখছি।’’

পুরসভা সূত্রে খবর, ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বাঘা যতীন, নোনাডাঙা, পাটুলি ছাড়াও মধ্য ও উত্তর কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় ই বি ও কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের খাদ্য দফতরের ফুড ইনস্পেক্টরেরা হানা দিয়ে বোতলবন্দি জল বাজেয়াপ্ত করেছেন। সেই জল পুরসভার পরীক্ষাগারে পরীক্ষার পরে দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়ার মাত্রা বেশি। কিছু ক্ষেত্রে ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস-এর (বিআইএস) লাইসেন্স নেই, আবার কোনওটির ক্ষেত্রে নেই ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া-র (এফএসএসএআই) ছাড়পত্রও নেই।

গত ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা পুরসভার ১০১, ১০২, ১০৫, ১০৬, ১০৭, ১০৮, ১০৯ ও ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় আন্ত্রিকের প্রকোপ দেখা গিয়েছিল। সেই সব এলাকার বোতলবন্দি জলের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, বহু বোতলের জলে জীবাণু আছে। ই বি সূত্রে খবর, কসবা, আনন্দপুর, পূর্ব যাদবপুর, যাদবপুর, টালিগঞ্জ ছাড়াও উল্টোডাঙা, চিৎপুর, নিউ মার্কেট থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কলকাতা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘এ সংক্রান্ত আরও কিছু তথ্য পেতে পুরসভাকে চিঠি পাঠিয়েছি। সেগুলি পেলেই আমরা অভিযুক্ত সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’’ এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘ই বি যে সব তথ্য জানতে চেয়েছে, সেগুলির কাগজপত্র শীঘ্রই পাঠানো হবে।’’

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বোতলবন্দি জলে অত্যধিক মাত্রায় কলিফর্ম ব্যাকটিরিয়া থাকলে তা মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরীর পর্যবেক্ষণ, ‘‘জলে কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া বেশি থাকলে ডায়েরিয়া, আন্ত্রিক হতে পারে।’’ গ্যাসট্রোইন্টেস্টিনাল ও হেপাটো বিলিয়ারি প্যানক্রিয়াটিক সার্জন শুদ্ধসত্ত্ব সেন বলেন, ‘‘জলে কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়ার মাত্রা বেশি থাকলে খাদ্যনালির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। পেটে ঘা হতে পারে। সংক্রমণও হতে পারে। জলের সংক্রমণজনিত কারণে পেটে নানা উপসর্গ থেকে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Municipality Kolka Water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE