ভাগাড় থেকে মরা পশুর মাংস পৌঁছে যেত শহরেরই একটা অংশের পাইকারি বাজারে! জোরায় দাবি ধৃতদের।
ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া পশুদের দেহ তুলে এনে, তার মাংস কেটে চালানের চক্রের হদিশ মিলেছিল বৃহস্পতিবার। কিন্তু কোথায় যেত ওই মাংস। প্রাথমিক তদন্তের পর বজবজ থানার পুলিশ মোটামুটি নিশ্চিত, ওই মাংস প্রথমে পৌঁছত কলকাতা শহরেরই একটা অংশের পাইকারি বাজারে। আর সেখান থেকে তা চলে যেত বিভিন্ন রেস্তরাঁ এবং সাধারণ মানুষের বাড়িতে!
বজবজের সুভাষ উদ্যান এলাকার পাশের ভাগাড় থেকে মৃত পশুর মাংস ট্যাক্সি করে নিয়ে যাওয়ার সময় বৃহস্পতিবার স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে যান দুই যুবক। ধৃত সেই রাজা মল্লিক ও শ্যামলালকে জেরা করে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছিল, ওই মাংস তাঁরা শিয়ালদহ এলাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু, কাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হত ওই মাংস? এর পর তা কোথায় যেত? দফায় দফায় জেরার পর ধৃতদের বয়ানে মারাত্মক তথ্য উঠে এসেছে। তাঁরা জানিয়েছেন, শিয়ালদহ থেকে ওই মাংস যেত রাজাবাজারের পাইকারি মাংস বিক্রেতাদের একটা অংশের কাছে। কিছু মাংস যেত রাজাবাগানেও। টাটকা মাংসের সঙ্গে মৃত পশুর মাংস মিশিয়ে বিক্রি করা হত। এমনকী, ওই মাংস আলাদা করেও কম দামে বিক্রি হত বাজারে।
তদন্তকারীদের অনুমান, বাজার থেকে সেই মাংস এলাকার রেস্তরাঁ, পাইস হোটেল, রাস্তার ধারের হোটেল বা ফাস্ট ফুডের দোকানগুলো যেমন কিনত, তেমনই সাধারণ মানুষ বাড়িতে খাওয়ার জন্যও কিনতেন। কিন্তু, ক্রেতারা কি জেনেশুনেই কিনতেন ওই মাংস? তদন্তকারীরা বলছেন, সাধারণ মানুষ হয়তো না জেনেই কিনতেন। কিন্তু, হোটেল-রেস্তরাঁগুলো তা জানত কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভাগাড়ের মরা পশুর মাংসই দাম দিয়ে কিনে খাচ্ছি আমরা!
আরও পড়ুন: মা’ সাজিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে পেনসন তুলতেন শুভব্রত!
দেখুন ভিডিও
প্রাথমিক ভাবে ধৃতদের আলাদা আলাদা ভাবে জেরা করে পুলিশ। এবং বয়ানে অসঙ্গতি ধরা পড়ে। এক জন জানান, শিয়ালদহে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় মাংস পৌঁছে দেওয়া হত। তার পর সেখান থেকে কে বা কারা ওই মাংস সংগ্রহ করতেন, তা তাঁদের জানা নেই। আর এক জন বলেন, ওই মাংস পাঠানো হত হাইব্রিড মাগুর মাছের বিভিন্ন ভেড়িতে। পরস্পর বিরোধী এই কথাবার্তা থেকেই পুলিশের সন্দেহ আরও জোরালো হয়। নতুন করে জেরার চাপে উঠে আসে রাজাবাজার-রাজাবাগানের বাজারে ওই মাংস চালানের কথা।
অর্থাত্, ভাগাড় থেকে তুলে আনা মরা পশুর মাংস যে কলকাতা শহরেরই কোনও কোনও অংশে মানুষের খাবার পাতে উঠত এ নিয়ে পুলিশ এখন নিঃসন্দেহ। কতটা বিপজ্জনক এই মাংস খাওয়া? চিকিত্সকদের মতে, কঠিন অসুখ তো বটেই, মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। চিকিত্সক রাহুল জৈন জানাচ্ছেন, “এ ধরণের মাংস খেলে ফুড পরজন থেকে শুরু করে টাইফয়েডের মতো রোগ হতে পারে। হতে পারে মৃত্যু পর্যন্ত। শিশুদের ক্ষেত্রে পচা মাংস খেয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি।”
দেখুন ভিডিও
বজবজ পুরসভার তরফেও এই নিয়ে আলাদা করে তদন্ত চালানো হচ্ছে। উপ-পুরপ্রধান গৌতম দাশগুপ্ত জানিয়েছে, ধৃত রাজার সঙ্গে এই পাচারচক্রে আর কোনও পুরকর্মীর যোগ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ দিন কাউন্সিলাররা বজবজের ডাম্পিং গ্রাউন্ডে সরেজমিনে তদন্তে গিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর তাঁরা পুরসভাকে রিপোর্ট দেবেন।
ভাগাড় থেকে মরা পশুর মাংস পাচারের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে বৃহস্পতিবার। বজবজের সুভাষ উদ্যানের ভাগাড় থেকে বেরনোর সময় একটি ট্যাক্সির চাকা গর্তে পড়ে যায়। ট্যাক্সিটির ডিকিতে মাংসভর্তি একাধিক প্যাকেট দেখতে পান স্থানীয়রা। তখনই তাঁদের সন্দেহ হয়। ট্যাক্সিটি ভাগাড়ের দিক থেকে আসায় সন্দেহটা আরও দানা বাধে। সঙ্গে সঙ্গে ট্যাক্সিচালক শ্যামলাল আর ভাগাড়ের পুরকর্মী রাজাকে ঘিরে ধরেন তাঁরা। কোথা থেকে এই মাংস এনেছেন, জানতে চাওয়া হয় তাঁর কাছে। প্রথম দিকে কিছু বলতে না চাইলেও, পরে চাপের মুখে পড়ে তাঁরা স্বীকার করেন, ওই মাংস ভাগাড়ে ফেলে যাওয়া মরা পশুদের। ভাগাড় থেকে মরা পশুর মাংস ও চামড়া সংগ্রহ করে সেগুলো পাচার করে দেওয়া হত। আর এই পুরো কাজটাই পুরসভার অস্থায়ী কর্মী রাজা মল্লিকের তত্ত্বাবধানে হত। স্থানীয়রা এর পর রাজা ও শ্যামলালকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy