Advertisement
১১ মে ২০২৪

বেপরোয়া বাসের চাকায় পিষ্ট পথচারী

কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই অটোচালক ছিটকে পড়েন ফুটপাতে। এর পরেই আরও একটি অটো এবং একটি গাড়িতে ধাক্কা মেরে মিনিবাসটি পিষে দেয় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্বনাথ হালদার (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে

মর্মান্তিক: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃত বিশ্বনাথের স্ত্রী ও মেয়ে।

মর্মান্তিক: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃত বিশ্বনাথের স্ত্রী ও মেয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৪২
Share: Save:

বাসস্ট্যান্ডের সামনেই অটোস্ট্যান্ড। সেখানে যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন অটোচালক সোমনাথ রায়। হঠাৎই তাঁর অটোয় জোরে ধাক্কা দেয় দ্রুত গতিতে ধেয়ে আসা একটি মিনিবাস। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই অটোচালক ছিটকে পড়েন ফুটপাতে। এর পরেই আরও একটি অটো এবং একটি গাড়িতে ধাক্কা মেরে মিনিবাসটি পিষে দেয় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্বনাথ হালদার (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে। বাইপাসের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় তাঁকে। বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ রাসবিহারী কানেক্টরে রাজডাঙা বাসস্ট্যান্ডের সামনের অটোস্ট্যান্ডের ঘটনা। দু’টি অটো ও গাড়িটিকে কসবা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আটক হয়েছে মিনিবাসটি। বাসের চালক পলাতক।

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিনের এই ঘটনায় কোনওমতে রক্ষা পেয়েছেন সোমনাথবাবু। তাঁর হাতে এবং বুকে আঘাত লেগেছে। সোমনাথবাবু ছাড়াও ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ছ’জন। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে সোমনাথবাবুকে ছেড়ে দেওয়া হলেও ভর্তি করে রাখতে হয়েছে কয়েক জনকে।

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন বাইপাসের দিক থেকে গড়িয়াহাটের দিকে যাচ্ছিল আনন্দপুর-হাওড়া রুটের ওই মিনিবাসটি। দ্রুত গতিতে আসার সময়ে রাজডাঙা বাসস্ট্যান্ডের কাছে এসে সেটি নিয়ন্ত্রণ হারালে ঘটে দুর্ঘটনা। পুলিশের দাবি, সেই সময়ে দু’টি অটোয় চালক-সহ মোট পাঁচ জন ছিলেন। বাসের ধাক্কায় তাঁদের অনেকেই ছিটকে পড়েন ফুটপাতে। অটোগুলি উঠে যায় ফুটপাতের উপরে। স্থানীয়েরা অনেকেই দাবি করেছেন, দু’টি বাসের মধ্যে রেষারেষির জেরেই ঘটেছে এই ঘটনা।

পুলিশ জানায়, বিশ্বনাথবাবুর বাড়ি নোনাডাঙা এলাকায়। মৃতের পরিজনেরা জানান, বিশ্বনাথবাবুদের ‘ডেকরেটর’-এর ব্যবসা আছে।

দুর্ঘটনার পরে এই অবস্থা হয় অটোটির। বুধবার, রাজডাঙায়।

আগে তাঁরা রাজডাঙা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় থাকতেন। কিছু দিন আগেই নোনাডাঙায় বাড়ি করে চলে গিয়েছেন তাঁরা। পরিবারে স্ত্রী ছাড়াও রয়েছেন বিশ্বনাথবাবুর দুই মেয়ে। এ দিন সকালে ব্যবসার কাজে বিশ্বনাথবাবু বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন বলে জানান তাঁর স্ত্রী দুর্গা হালদার। কান্না জড়ানো গলায় এ দিন তিনি বলেন, ‘‘বলে গেল ফিরে ক্লাবের পুজোর মিটিংয়ে যাবে। আর ফিরলই না!’’

দুর্ঘটনাস্থলের কাছে একটি হোটেল চালান সবিতা মিস্ত্রি। তিনি বলেন, ‘‘দোকানে বসে কাজ করছিলাম। হঠাৎ জোর আওয়াজ। একটা বাস অটোগুলোকে মারতে মারতে বেরিয়ে
গিয়ে গাড়িতে ধাক্কা মারল। আমাদের সামনে সবাই পড়ে ছটফট করছিলেন।’’

রীতেশ ঝা নামে আর এক প্রত্যক্ষদর্শী জানালেন, দু’টি অটোর মধ্যে এক জন মহিলা আটকে ছিলেন। কোনওমতে তাঁকে বার করা গিয়েছে। তবে বিশ্বনাথবাবুর হুঁশ ছিল না। রীতেশের কথায়, ‘‘বাস আর গাড়িটির মাঝে দাঁড়িয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। বাসটা সরাসরি তাঁকে ধাক্কা মারে। যে ভাবে ধাক্কা মারল, দেখেই বুঝেছিলাম তাঁকে আর বাঁচানো যাবে না।’’

ট্র্যাফিক পুলিশ মারফত খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় কসবা থানার পুলিশ। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘গাড়িটার পরেই বাইক নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এক ট্র্যাফিক সার্জেন্ট। গাড়িটা না থাকলে বাসটা সরাসরি ওই অফিসারকে মারত। কোনও মতে বেঁচে গিয়েছেন তিনি।’’

ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী ও নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Reckless bus Run Over Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE