Advertisement
E-Paper

নেই-রাজ্যে আছে ওঁদের বিশ্বাস

রোজকার খবরে মারামারি-হিংসা আর অবক্ষয়ের কাহিনির মধ্যে এ এক অন্য জগৎ। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের বিজলী সিনেমা হল সংলগ্ন এই ফুটপাত তারই সাক্ষী।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৮ ০৩:০৩
নিমগ্ন: পড়াশোনায় নাতনির সঙ্গী দিদিমাও। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিমগ্ন: পড়াশোনায় নাতনির সঙ্গী দিদিমাও। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

সন্ধ্যাবেলায় সেখানে গেলেই দেখা মিলবে তার। রাস্তার আলোয় মন দিয়ে পড়ে চলেছে এক কিশোরী। জলচৌকির উপরে বই রেখে পড়া চলে রাত পর্যন্ত। পাশেই বসে পুরু কাচের চশমা চোখে এক বৃদ্ধা। নাতনির সুবিধার জন্য পড়ার ফাঁকেই বড়বড় হরফে বইয়ের পাতা থেকে খাতায় লিখে রাখছেন বিভিন্ন অধ্যায়। কখনও আবার হাতে ধরে দিদিমা শিখিয়ে দিচ্ছেন লেখার কায়দা, কখনও পড়ে শোনাচ্ছেন বাংলা গদ্য। এ ভাবেই চলে দু’জনের ভালবাসার বিদ্যাচর্চা।

রোজকার খবরে মারামারি-হিংসা আর অবক্ষয়ের কাহিনির মধ্যে এ এক অন্য জগৎ। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের বিজলী সিনেমা হল সংলগ্ন এই ফুটপাত তারই সাক্ষী। সকালে নাতনিকে স্কুলে পাঠিয়ে লোকের বাড়ি কাজে যান সত্তরোর্ধ্ব ওই মহিলা। নাম সন্ধ্যা অধিকারী। তাঁর ছায়াসঙ্গী পূজা, ভবানীপুর গার্লস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। বিকেল চারটে নাগাদ নাতনি স্কুল থেকে ফিরলেই তাকে খাইয়ে শুরু হয়ে যায় পড়াশোনা। পড়া শেষে রাতের খাবার খেয়ে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন ওঁরা। এ ভাবেই দিদিমার স্নেহে বেড়ে উঠছে কিশোরী।

‘‘এমন ভালবেসে পড়াশোনা! প্রতিদিন দেখি আর ভাবি, আমাদের ছেলেমেয়েরা এত কিছু পেয়েও শুধু ‘এটা লাগবে, ওটা লাগবে’র তালিকা ধরায়। অথচ কালি ছাড়া পেনেও যে আঁচড় কাটা যায়, সেটা দেখতে এখানে আসতে হয়।’’— বলছিলেন এক পথচারী। কিসের আশায় এমন লড়াই? ‘‘স্বপ্ন দেখি, নাতনি বড় হয়ে ডাক্তার হবে। তবে কী ভাবে সেটা সম্ভব, জানি না।’’— বললেন সন্ধ্যাদেবী।

এ ভাবে রাস্তায় পড়াশোনা করে কত দিন চালাবে মেয়েটি? এ নিয়ে ইতিমধ্যেই সংশয় তৈরি হয়েছে পূজার দিদিমণিদের মধ্যে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অনিতা চৌধুরীর মতে, ফুটপাতে থেকে পড়াশোনা চালানো কষ্টসাধ্য। বড় সমস্যা, মেয়েটির নিরাপত্তা নেই। এমনকি শৌচাগার ব্যবহারেও হাজার সমস্যা রয়েছে। ওর কিছু হলে কে দেখবে? একটা থাকার জায়গা বড় প্রয়োজন মেয়েটার।’’ অন্য এক শিক্ষিকা জানান, পূজার মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে। তবে খোলা আকাশের নীচে সেই সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখা প্রায় অসাধ্য। তাই ছাত্রীর জন্য আশ্রয় চেয়ে শিক্ষা দফতরে আবেদন জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

যদিও নাতনির আশ্রয়ের কথা উঠতেই চোখে জল চলে আসে দিদার। জোরালো কণ্ঠে তাঁর আশ্বাস, ‘‘আমি আছি তো! ওর সঙ্গে কিছু খারাপ হতে দেব না। জন্ম থেকে মানুষ করছি। ওকে ছেড়ে থাকতে পারব না।’’ স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে একাই আগলে রেখেছেন বাবা-মায়ের ফেলে যাওয়া আদরের নাতনিটিকে। কিশোরী মেয়েটিও দিদার বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে লড়াকু ভঙ্গিতে বলে ওঠে, ‘‘এখানেই ভাল আছি।’’

কাকতালীয় ভাবে তখন দূরের কোনও এফএম রেডিও থেকে ভেসে আসছে— ভাল আছি, ভাল থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।

grandmother student Poverty Footpath
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy