Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পিজিতে ধমনীর জটিল অস্ত্রোপচারে সাফল্য

৭ এপ্রিল দুপুরে পেটে ও বুকে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে পূর্ণিমা স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসকেরা ধরতে পারেননি তাঁর কী সমস্যা হচ্ছে।

এসএসকেএমে পূর্ণিমা বেরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

এসএসকেএমে পূর্ণিমা বেরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৮ ১৭:১২
Share: Save:

অন্য দিনের মতোই সংসারের কাজ সামলে ঘুমোতে যাচ্ছিলেন বছর তেইশের পূর্ণিমা বেরা। হঠাৎ পেট ও বুকে ব্যথা অনুভব করেন তিনি। দিন দুয়েকের মধ্যেই যন্ত্রণা বাড়তে থাকে। পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুর থানা এলাকার বাসিন্দা পূর্ণিমা এর পরে তিনটি হাসপাতালে গেলেও চিকিৎসকেরা রোগ নির্ণয় করতে পারেননি। অবশেষে তিনি ভর্তি হন এসএসকেএম হাসপাতালে। প্রথমে হৃদ্‌রোগ বিভাগে প্রাথমিক পর্বের পরীক্ষা চলে। তার পরে কার্ডিওভাস্কুলার বিভাগে ভর্তি করা হয় পূর্ণিমাকে। জানা যায়, সমস্যাটা মহাধমনীতে। সেটির অবস্থা এমনই, যে কোনও সময়ে সেটি ফেটে যেতে পারে। ওই বয়সে যা যথেষ্ট বিরল বলেই চিকিৎসকদের অভিমত। দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।

এসএসকেএম সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৮ এপ্রিল সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ পাঁচ জন শল্য চিকিৎসক-সহ পনেরো জনের একটি দল অস্ত্রোপচার শুরু করেন। প্রায় সাড়ে আট ঘণ্টা ধরে চলে অস্ত্রোপচার। এই অস্ত্রোপচারের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক শান্তনু দত্ত জানান, ধমনীতে তিন স্তরের প্রাচীর থাকে। পূর্ণিমার ধমনীতে ওই তিনটির মধ্যে একটি স্তরে চিড় ধরেছিল। সেটি পরিবর্তন করে কৃত্রিম প্রাচীর বসানো হয়। হৃৎপিণ্ডের ভাল্‌ভেও সমস্যা ছিল। সেটিরও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পরে পূর্ণিমাকে প্রথমে ইনটেনসিভ থেরাপি ইউনিটে (আইটিইউ) পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। আপাতত তিনি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) রয়েছেন।

৭ এপ্রিল দুপুরে পেটে ও বুকে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে পূর্ণিমা স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসকেরা ধরতে পারেননি তাঁর কী সমস্যা হচ্ছে। এর পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মহকুমা এবং জেলা হাসপাতালে। সেখানেও সুরাহা না হওয়ায় ১০ এপ্রিল রাত বারোটা নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। বুকে ব্যথা অনুভব করায় তাঁকে হৃদ্‌রোগ বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন, শুধু হৃৎপিণ্ডে নয়, সমস্যা আরও জটিল। কার্ডিওভাস্কুলার বিভাগে দশ দিন ধরে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের পরে চিকিৎসকেরা জানান, পূর্ণিমার মহাধমনী অর্থাৎ, হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত সঞ্চালনের জন্য যে ধমনী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেটি ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর পরেই কার্ডিওভাস্কুলার বিভাগের প্রধান শুভঙ্কর ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা শুরু হয় পূর্ণিমার।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সরকারি হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচারের সাফল্যের হার একেবারেই ভাল নয়। এ বার পূর্ণিমাদেবী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলে সরকারি হাসপাতালের পরিষেবাকে আরও এগিয়ে দেবে বলে আশা করছেন স্বাস্থ্য ভবনের একাংশ।

তবে এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে জেলার হাসপাতালগুলির পরিষেবা নিয়ে। জেলার হাসপাতালগুলিকে স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা চলছে। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা বারবার জানাচ্ছেন, জেলা হাসপাতালগুলিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রযুক্তি ও পরিকাঠামোগত উন্নতির কাজ চলছে জোরকদমে। কিন্তু তার পরেও কলকাতার সরকারি হাসপাতালের উপরেই ভরসা করে থাকতে হচ্ছে জেলার রোগীদের। জটিল অস্ত্রোপচার তো দূর অস্ত্‌, এমনকি রোগ নির্ণয়েও ভরসা সেই কলকাতার হাসপাতালই। পূর্ণিমার ঘটনা সেটা ফের প্রমাণ করে দিল বলে মনে করছেন চিকিৎসক-মহল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Purnima Bera PG Hospital artery surgery
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE