Advertisement
E-Paper

দেখা নেই শকুনের, মৃত পশু খাবে কে

শকুনের অভাবেই ভাগাড়ের মাংস অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে চলে আসছে খাবারের পাতে!  

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৮ ০২:৩৮
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ভাগাড়ে এক সময়ে দল বেঁধে ঘুরে বে়ড়াত ওরা। মরা জন্তু দেখলেই ঘিরে ধরে শুরু হত ভূরিভোজ। সেই দৃশ্য আজ আর দেখা যায় না! শহর এবং জেলার বিভিন্ন ভাগাড় থেকে কার্যত উধাও হয়ে গিয়েছে শকুনের ঝাঁক। পরিবেশবিদদের অনেকেরই মতে, শকুনের অভাবেই ভাগাড়ের মাংস অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে চলে আসছে খাবারের পাতে!

তবে এটাও ঠিক, শকুন হারিয়ে যাওয়ার জন্য ভাগাড়ের মাংসকেই দায়ী করেন প্রাণী বিশেষজ্ঞেরা। রাজ্য জীববৈচিত্র্য পর্ষদের চেয়ারম্যান অশোককান্তি সান্যাল বলেন, ‘‘পশুদের ওষুধে ডাইক্লোফেনাক বলে এক ধরনের রাসায়নিক থাকত। তা পশুর মাংসপেশিতেও থাকত। সেই মাংস খাওয়ায় রাসায়নিক শকুনের শরীরে ঢুকেছে।’’ পক্ষী বিশেষজ্ঞদের মতে, ডাইক্লোফেনাক-এর ফলে শকুনদের কিডনি বিকল হতে থাকে। কার্যত মহামারীর আকার নেয় সেই রোগ। যার পরিপ্রেক্ষিতে ডাইক্লোফেনাক-এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

পরিবেশবিজ্ঞানীদের অনেকেরই মতে, বাস্তুতন্ত্রে শকুনের মতো পাখি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশের মরা, পচা মাংস খেত এই পাখিরা। ফলে প্রাকৃতিক উপায়েই মৃত পশুদের সদগতি হত। কিন্তু শকুনেরা হারিয়ে যাওয়ায় সেখানেই ঢুকে পড়তে পারছে দুষ্কৃতীরা। বেলগাছিয়া ভাগাড়ে এক কালে নিয়মিত শকুনের ঝাঁক দেখেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান বটানিক গার্ডেনে শকুনের বাসাও ছিল। ২০০১ সালে বটানিক্যাল গার্ডেন নিয়ে একটি মামলা করতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, শকুনের বাস উঠে গিয়েছে শিবপুর থেকে। সুভাষবাবু বলছেন, ‘‘ভাগাড় থেকে শকুন হারিয়ে পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে।’’

এই প্রসঙ্গে অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কলকাতা থেকে হাড়গিলে পাখির হারিয়ে যাওয়ার কথাও। শকুনের মতো হা়ড়গিলে পাখিও মৃত পশুর দেহাবশেষ খেয়ে সাফ করত। শহরের পরিবেশ রক্ষায় হাড়গিলের ভূমিকার স্বীকৃতি দিয়েছিল কলকাতা পুরসভাও। ১৮৯৬ সালে প্রথম মোহরচিহ্ন (এমব্লেম) তৈরি হয় পুরসভার। তা ছিল দু’টি হাড়গিলে পাখি। পরে তা বদলে যায়।

এই পরিস্থিতিতে অবশ্য কিছুটা আশার আলো দেখছেন সরকারি বিজ্ঞানীরা। অশোকবাবু বলেন, ‘‘শকুন রক্ষায় নানা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গে প্রজনন কেন্দ্র তৈরি হয়েছে।’’ কলকাতার ময়দানেও বছর কয়েক আগে কয়েকটি শকুনের বাসা নজরে এসেছে। কিন্তু শকুনের ঝাঁক ফের চোখে প়়ড়বে কি না, সে প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে সেই ভাগা়ড়েই।

অনেকেই বলছেন, পশুর ওষুধে ক্ষতিকর রাসায়নিক পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বছর দুই আগে এই যুক্তিতেই গুরুগ্রামে ভাগাড়ে মৃত পশুর দেহ ফেলতে নিষেধ করা হয়েছিল। পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘ভাগাড়ে নানা ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মিলেমিশে থাকে। তা থেকে নানা দূষণ ছড়ায়। ফলে শকুন রক্ষা করতে গেলে ভাগাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষাও জরুরি।’’

Meat Vulture Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy