শোকার্ত কান্দুই দম্পতি
বয়সের ভারে ন্যুব্জ। রোগাক্রান্ত। হাঁটু-কোমরের ব্যথায় নড়াচড়ার ক্ষমতা নেই। তার উপরে পোস্তার উড়ালপুল ভেঙে পড়ার দগদগে স্মৃতি তাঁদের যেন আরও বেশি করে অসুস্থ করে তুলেছে।
বছর দুয়েক আগে সেই ভয়াবহ দিনে উড়ালপুলের ধ্বংসস্তূপেই একমাত্র ছেলে ও বৌমাকে হারিয়েছিলেন অশীতিপর দম্পতি জগদীশপ্রসাদ কান্দুই ও বিমলাপ্রসাদ কান্দুই। সেই কথা মনে পড়তেই চোখ ভিজে উঠল বিমলাদেবীর। ২০১৬-র ৩১ মার্চ সকালে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ মামাকে দেখতে স্ত্রীকে নিয়ে জো়ড়াবাগানের টেগোর ক্যাসেল স্ট্রিটের বাড়ি থেকে টানা রিকশায় চেপে রওনা দিয়েছিলেন জগদীশ-বিমলার ছেলে। মাথার উপরে সেতুর একাংশ ভেঙে পড়ায় ঘটনাস্থলেই মারা যান অজয় (৫০) ও সরিতা (৪৫)।
বৃহস্পতিবার তিনতলা বাড়িতে কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুললেন বিমলাদেবী। লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়াতে হয় তাঁকে। দুই নাতি আর বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে সংসার। সারা দিন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা একাই থাকেন। দাদুর ব্যবসা দেখভাল করেন অজয়-সরিতার ছোট ছেলে নিখিল। বড় ছেলে অভিষেক এক বেসরকারি সংস্থার চাকুরে। দুই নাতিই এখন তাঁদের আশা-ভরসা। দু’বছর আগের ঘটনার কথা বলতে গিয়ে ফুঁসে উঠলেন বিমলাদেবী। বললেন, ‘‘ব্রিজ ভাঙার পরে স্থানীয় বিধায়ক ও কাউন্সিলর এক বার আমার বাড়িতে এসে মুখটা দেখিয়েছিলেন। তার পরে দু’বছর কারও দেখা মেলেনি। ব্রিজটা ভাঙা অবস্থায় এখনও একই ভাবে পড়ে আছে। সেটা ভাঙা হবে, না রাখা হবে, এখনও সেই সিদ্ধান্তটাই হল না! এ থেকেই বোঝা যায়, এ বিষয়ে সরকার কতটা উদাসীন!’’
অজয় ও সরিতা।
দেওয়ালে ছেলে-বৌমার ছবির দিকে তাকিয়ে আঁচলে চোখ মোছেন বৃদ্ধা। বলেন, ‘‘ওই ব্রিজটা এখন ‘ভুতুড়ে’ ব্রিজে পরিণত হয়েছে। আমাদের একটাই দাবি, অবিলম্বে ওটা ভেঙে ফেলা হোক। তা হলে আমার ছেলে-বৌমার আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে।’’
পাশে বসা জগদীশের খেদ, ‘‘ওদের মৃত্যুর পরে কোনও দিনই ব্রিজের তল্লাট দিয়ে যাইনি। বেরোলেও দু’-তিন কিলোমিটার ঘুরপথে যাই। ওই ব্রিজটা দেখতেই আর ইচ্ছা করে না।’’ অজয়-সরিতার ব়়ড় ছেলে অভিষেকের প্রশ্ন, ‘‘ওই উড়ালপুলের বাকি অংশ যে নিরাপদ, তার প্রমাণ কে দেবে? অবিলম্বে বাকি অংশ ভেঙে ফেলা হোক। এটাই এখন মনেপ্রাণে চাইছি।’’
ভাঙা উড়ালপুল ভেঙে ফেলতে আন্দোলনে নেমেছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে গঠিত ‘ফ্লাইওভার হটাও অভিযান সমিতি’। ওই সংগঠনের তরফে উড়ালপুল ভাঙার দাবিতে আদালতে মামলা করা হয়েছে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাপি দাসের অভিযোগ, ‘‘আমরা বরাবর বলে এসেছি, এই উড়ালপুল আর নিরাপদ নয়। অবিলম্বে বাকি অংশ ভেঙে ফেলা হোক। মন্ত্রীরা শুধু ব্রিজ ভাঙা নিয়ে বিবৃতি দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’’ বাপি জানান, উড়ালপুল ভেঙে ফেলার দাবিতে আজ, শনিবার সকালে ‘ফ্লাইওভার হটাও অভিযান সমিতি’-সহ একাধিক সংগঠনের উদ্যোগে মিছিল করা হবে।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy