Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নায়কের সঙ্গে উর্দি পরে নাচ নিয়ে বিতর্ক

দর্শকাসনের সামনের সারিতে বসে মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশ কমিশনার-সহ লালবাজারের তাবড় কর্তারা। মঞ্চে ‘জব তক হ্যায় জান’-এর সুরে নাচছেন শাহরুখ খান। আর তাঁর নৃত্যসঙ্গিনী কলকাতা পুলিশের উর্দি-টুপি পরা এক কর্মী! ফিল্মি নাচে যেমনটি হয়, ঠিক তেমন করেই উর্দি পরা ওই পুলিশকর্মী কখনও জড়িয়ে ধরছেন শাহরুখের কোমর, পা তুলে দিচ্ছেন নায়কের কোলে। শাহরুখও তাঁকে সিনেমার নায়িকার মতোই পাঁজাকোলা করে কোলে তুলে তালে তালে চক্কর কাটছেন।

পুলিশ যখন নায়িকা। শনিবার কলকাতা পুলিশের অনুষ্ঠানে শাহরুখ খান। ছবি: প্রদীপ আদক

পুলিশ যখন নায়িকা। শনিবার কলকাতা পুলিশের অনুষ্ঠানে শাহরুখ খান। ছবি: প্রদীপ আদক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫৩
Share: Save:

দর্শকাসনের সামনের সারিতে বসে মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশ কমিশনার-সহ লালবাজারের তাবড় কর্তারা। মঞ্চে ‘জব তক হ্যায় জান’-এর সুরে নাচছেন শাহরুখ খান। আর তাঁর নৃত্যসঙ্গিনী কলকাতা পুলিশের উর্দি-টুপি পরা এক কর্মী! ফিল্মি নাচে যেমনটি হয়, ঠিক তেমন করেই উর্দি পরা ওই পুলিশকর্মী কখনও জড়িয়ে ধরছেন শাহরুখের কোমর, পা তুলে দিচ্ছেন নায়কের কোলে। শাহরুখও তাঁকে সিনেমার নায়িকার মতোই পাঁজাকোলা করে কোলে তুলে তালে তালে চক্কর কাটছেন। আর চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখে উল্লাসে ফেটে পড়ছে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম! মহিলা সহকর্মীকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে জনা দুয়েক পুলিশও উর্দি পরেই মঞ্চে উঠে একটু কোমর দুলিয়ে নিলেন!

শনিবার সন্ধ্যা। কলকাতা পুলিশের আয়োজনে জমজমাট ‘জয় হে’। সেই অনুষ্ঠানেই উর্দি পরা তরুণী পুলিশকর্মীর এমন নাচ দেখে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তাঁরা বলছেন, ওই তরুণী শাহরুখের সঙ্গে নাচতেই পারেন। কিন্তু পুলিশের উর্দি পরে প্রকাশ্যে এমন নাচগান করা যায় কি না, প্রশ্নটা সেখানেই। যদিও কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র বলছেন, “এটা সামাজিক অনুষ্ঠান। বিষয়টিকে সেই প্রেক্ষিতেই দেখা উচিত।”

পুলিশকর্তারা যা-ই বলুন, বাহিনীর অন্দরেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মাত্র বছর দুয়েক আগেই জলপাইগুড়িতে এক কৌতুকশিল্পীর অনুরোধে উর্দি পরে অনুষ্ঠানে নাচায় শো-কজ করা হয়েছিল এক মহিলা পুলিশ কর্মীকে। এই প্রসঙ্গে উঠছে বাম আমলের একটি ঘটনাও। মহাকরণের অলিন্দে উর্দি পরা পুলিশকর্মীকে সিগারেট খেতে দেখে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত। তখন তা নিয়ে বিতর্কও হয়েছিল।

পুলিশের ‘রুল বুক’ বলছে, উর্দির নিজস্ব একটি সম্ভ্রম রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মী যে শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীর সদস্য, তার প্রমাণই হল ওই উর্দি। কোথায় উর্দি পরে যাওয়া যায়, কোথায় যায় না তা-ও নির্দিষ্ট করা রয়েছে ‘রুল বুকে’। নিয়ম অনুযায়ী, উর্দি পরে পারিবারিক কাজও করা যায় না। একাধিক জেলার পুলিশ সুপারের বক্তব্য, তাঁরা এমনকী নিজেদের ছেলেমেয়েকে স্কুল-কলেজে পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময়ও উর্দি পরেন না। “কারণ সেটা করা যায় না,” মন্তব্য এক পুলিশকর্তার। রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি অরুণপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও মনে করেন, উর্দি পরে নাচানাচি বাঞ্ছনীয় নয়। তাঁর কথায়, “কী পরিপ্রেক্ষিতে এই ঘটনা ঘটেছে, তা অনুষ্ঠানে উপস্থিত পুলিশকর্তারাই বলতে পারবেন।”

বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে লালবাজারের অন্দরেও। পুলিশের একাংশই বলছেন, উর্দি পরে এমন কাজ উচিত নয়। কিন্তু এমন অনুষ্ঠানে উর্দি পরে যেতে হবে কেন, প্রশ্নটা সেখানেই। মুম্বই পুলিশেরও এমন অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু সেখানে উর্দি পরে যাওয়া বাধ্যতামূলক নয়। কলকাতা পুলিশের এক অফিসার বলেন, “এখানে তো প্রতি থানা থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যার উর্দি পরা কর্মী অনুষ্ঠানে পাঠাতে হয়।” এই প্রসঙ্গেই প্রাক্তন মুখ্যসচিব অর্ধেন্দু সেনের বক্তব্য, “কী ধরনের অনুষ্ঠান হবে, সেটা নীতিনির্ধারকেরা ঠিক করেন। যেমন মেজাজ তৈরি হয়েছে, তেমন ভাবেই অনুষ্ঠান এগিয়েছে। বেচারি পুলিশকর্মীকে দোষ দিয়ে কী লাভ!”

শনিবারের সন্ধ্যায় স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই এই অনুষ্ঠানের সূচনা করে বলেছিলেন, “পুলিশ সারা বছর রোদে পুড়ে, জলে ভিজে কাজ করে। উৎসবে আনন্দ করতে পারে না। তাই তাঁদের ও তাঁদের পরিবারের জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE