কলকাতা পুলিশের সঙ্গে দীর্ঘ ১৫ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল বিমা সংস্থা ‘ন্যাশনাল ইনসিওর্যান্স কোম্পানি’র। লালবাজার সূত্রের খবর, এ বার থেকে স্বাস্থ্য বিমা পরিষেবার জন্য কলকাতা পুলিশ তাদের নিজস্ব ‘ওয়েলফেয়ার বোর্ড’ তৈরি করবে। কিন্তু কবে তা তৈরি হবে, তা এখনও জানা যায়নি।
এই মুহূর্তে কলকাতা পুলিশে সব মিলিয়ে প্রায় ২৮ হাজার কর্মী রয়েছেন। ২০০৩ সাল থেকে ‘ন্যাশনাল ইনসিওর্যান্স কোম্পানি’ই কলকাতা পুলিশকে
স্বাস্থ্য বিমা পরিষেবা দিয়ে এসেছে। লালবাজার সূত্রের খবর, ২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষের জন্য ওই বিমা সংস্থার তরফে প্রত্যেক পুলিশকর্মীর জন্য যে মাসিক প্রিমিয়াম চাওয়া হয়েছে, তা গত বছরের তুলনায় অনেকটাই বেশি। গত ১৫ অগস্ট ওই ‘গ্রুপ মেডিক্লেম পলিসি’র কাগজপত্র হাতে আসার পরেই মাথায় হাত পড়ে যায় পুলিশকর্মীদের।
লালবাজার সূত্রের খবর, নতুন অর্থবর্ষের জন্য ওই বিমা সংস্থা প্রিমিয়ামের যে নতুন হিসেব পাঠিয়েছে, তাতে বাবা-মাকে বাদ দিয়েও স্বাস্থ্য বিমা খাতে প্রত্যেক পুলিশকর্মীকে মাসে ৭৪০ টাকা করে দিতে হবে। গত বছর এই অঙ্কটাই ছিল ৪৭৫ টাকা। নতুন পাঠানো হিসেব অনুযায়ী বাবা-মাকে বিমার অন্তর্ভুক্ত করতে হলে পুলিশকর্মীদের প্রতি মাসে দিতে হবে ১৪৯৭ টাকা (সঙ্গে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত)। গত বছরে যা ছিল ৬৭৫ টাকা।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত বছরের তুলনায় স্বাস্থ্য বিমা খাতে প্রিমিয়ামের পরিমাণ এতটা বে়ড়ে যাওয়ার ফলে প্রায় ৯০ শতাংশ পুলিশকর্মীই বিমার নবীকরণে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। এই নিয়ে গত এক মাস ধরে কলকাতা পুলিশ মহলে যথেষ্ট ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। অধিকাংশ কর্মী বিমা নবীকরণে আগ্রহ প্রকাশ না করায় নবীকরণের সময়সীমাও এক মাস বাড়ানো হয়। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার লালবাজারের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বিমা সংস্থার কর্তাদের বৈঠক হয়।
লালবাজার সূত্রের খবর, পুলিশের তরফে বিমা সংস্থার কর্তাদের কাছে প্রিমিয়ামের পরিমাণ কমানোর আর্জি জানানো হলেও তাঁরা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, গত চার বছর ধরে ওই সংস্থা কলকাতা পুলিশকে স্বাস্থ্য বিমা দিতে গিয়ে বিপুল লোকসান করেছে। প্রিমিয়াম কমালে আরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে ওই বিমা সংস্থা জানিয়ে দেয়, তাদের পক্ষে কলকাতা পুলিশকে আর স্বাস্থ্য বিমা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়। ‘ন্যাশনাল ইনসিওর্যান্স কোম্পানি’র এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশকে স্বাস্থ্য বিমা পরিষেবা দিতে গিয়ে গত চার বছরে আমাদের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি পোষাতে প্রিমিয়ামের পরিমাণ বাড়ানো ছাড়া উপায় ছিল না।’’
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ওই বৈঠকে বিমা সংস্থা আর পরিষেবা দিতে রাজি না হওয়ায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, পুলিশকর্মীদের স্বাস্থ্য বিমা পরিষেবার জন্য
কলকাতা পুলিশের তরফে একটি ‘ওয়েলফেয়ার বোর্ড’ গড়া হবে। কলকাতা পুলিশ নিজেই ওই বোর্ড সামলাবে। ঠিক হয়েছে, স্বাস্থ্য বিমা খাতে ওয়েলফেয়ার বোর্ডকে মাসে পাঁচশো টাকা করে দেবেন প্রত্যেক পুলিশকর্মী। আর বিমায় পরিবারের সঙ্গে বাবা-মাকে যুক্ত করলে দিতে হবে মাসে ৭৯২ টাকা।
এত দিন বাবা-মায়ের জন্য প্রিমিয়ামের অঙ্কের উপরে অতিরিক্ত আরও ২০ শতাংশ দিতে হত। নয়া ওয়েলফেয়ার বোর্ড তৈরি হলে সেই টাকাটা লাগবে না।
তবে কলকাতা পুলিশের নতুন স্বাস্থ্য বিমা পরিষেবা কবে থেকে চালু হবে, তা জানেন না পুলিশকর্মীরা। এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘স্বাস্থ্য বিমার জন্য ওয়েলফেয়ার বোর্ড গঠন নিঃসন্দেহে ভাল সিদ্ধান্ত। কিন্তু কবে ওই পরিষেবা চালু হবে, তা জানি না। এর মধ্যেই বিমার টাকার প্রয়োজন হলে কী করব?’’
কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘যত দ্রুত সম্ভব ওই বোর্ড গঠনের চেষ্টা হচ্ছে।’’ ওই তহবিলের খুঁটিনাটি নিয়ে আজ, শুক্রবার লালবাজারে বৈঠকে বসবেন পুলিশকর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy