Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হেরিটেজ রক্ষায় কি লন্ডনের পথে কলকাতা

বর্তমানে যে কেউ পুরসভার ওয়েবসাইটে গিয়ে হেরিটেজ তালিকা দেখতে পারেন। সেখানে প্রতিটি হেরিটেজ ভবন বা স্থানের ক্ষেত্রে বরাদ্দ মাত্র একটি লাইন।

ঐতিহ্য: শহরের হেরিটেজ ভবন টাউন হল সংস্কারের কাজ চলছে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

ঐতিহ্য: শহরের হেরিটেজ ভবন টাউন হল সংস্কারের কাজ চলছে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৯ ০২:০২
Share: Save:

কলকাতা এক দিন লন্ডন হবে, বারবারই বলে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা হবে কি না, সেটা সময় বলবে। কিন্তু হেরিটেজ রক্ষার ক্ষেত্রে কি এই শহর এ বার লন্ডনকে অনুসরণ করতে চলেছে? অন্তত তেমনই আলোচনা শুরু হয়েছে কলকাতা পুর প্রশাসনের অভ্যন্তরে। যার প্রাথমিক ধাপ হল, পুরসভার বর্তমান হেরিটেজ-তালিকা বাতিল করে নতুন ভাবে তৈরি করা। লন্ডনে কোনও হেরিটেজ ভবন বা স্থান সম্পর্কে যে ভাবে তথ্য নথিভুক্ত থাকে, অনেকটা সেই আদলে। যে তালিকা দেখে হেরিটেজ ভবন বা স্থান সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি করা যাবে।

বর্তমানে যে কেউ পুরসভার ওয়েবসাইটে গিয়ে হেরিটেজ তালিকা দেখতে পারেন। সেখানে প্রতিটি হেরিটেজ ভবন বা স্থানের ক্ষেত্রে বরাদ্দ মাত্র একটি লাইন। সংশ্লিষ্ট ভবন বা স্থানটির ঠিকানা উল্লেখ করে সেটি নির্মাণশৈলীর জন্য নাকি ঐতিহাসিক কোনও প্রেক্ষিত অথবা কোনও মনীষীর বাসস্থান হওয়ার জন্য হেরিটেজ-গ্রেড প্রাপ্ত, তা উল্লেখ করা রয়েছে। পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ওই বিবরণ থেকে সংশ্লিষ্ট ভবন বা স্থানটি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা করাও সম্ভব নয়।

মূলত সেই কারণেই ব্রিটেনে যে ‘ফর্ম্যাট’-এ হেরিটেজ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়, পুরসভার হেরিটেজ কমিটির তরফে সেই ‘ফর্ম্যাট’ জমা পড়েছে কর্তৃপক্ষের কাছে। জুন মাসে পুর হেরিটেজ-কমিটির বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, হেরিটেজ রক্ষার ক্ষেত্রে লন্ডনের পথে হাঁটার প্রস্তাবটি আপাতত বিবেচনাধীন। কিন্তু হেরিটেজ-তালিকায় যে পরিবর্তন করা হবে, সে ব্যাপারে সংশয় নেই বলেই জানাচ্ছেন পুরকর্তাদের একাংশ। পুর হেরিটেজ কমিটির চেয়ারম্যান তথা পুর কমিশনার খলিল আহমেদ বলেন, ‘‘কোনও হেরিটেজ ভবন বা স্থানের বিবরণ আর এক লাইনে লেখা থাকবে না। ভাল করে তথ্য সংগ্রহে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেই ভবন বা স্থান সম্পর্কে তালিকায় অন্তত একটি অনুচ্ছেদ থাকতে হবে। তেমন হলে আদালতে লড়ার ক্ষেত্রে আমাদের সুবিধা হবে।’’

হেরিটেজ বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, ব্রিটেনে হেরিটেজ ভবন সংরক্ষণ সংক্রান্ত আলাদা আলাদা ‘কোড’ রয়েছে। সেই অনুযায়ী ওই ভবনগুলি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ হয়। এক হেরিটেজ বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘যে কোনও হেরিটেজ ভবনের ডকুমেন্টেশন জটিল প্রক্রিয়া। তাই ব্রিটিশ ‘গাইড টু দ্য কনজ়ারভেশন অব হিস্টরিক বিল্ডিং’-এ স্পষ্ট বলা রয়েছে, কোন মাপকাঠির ভিত্তিতে হেরিটেজ ভবন সংরক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহের কাজ করতে হবে।’’ তবে শুধু কলকাতা পুর আইনই নয়, এ দেশে শুধু হেরিটেজ ভবন সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট কোড নেই বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

সেই ‘খামতি’ দূর করতেই আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে ব্রিটিশ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি। পুরসভা সূত্রের খবর, জুন মাসের হেরিটেজ কমিটির বৈঠকে এই প্রশ্নও উঠেছে, যে হেরিটেজ ভবনগুলি গত দশ বছর ধরে ‘গ্রেড পেন্ডিং’ তালিকায় পড়ে আছে, সেগুলি কবে গ্রেডভুক্ত হবে? প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে পুরসভা শুধুমাত্র ‘গ্রেড ওয়ান’, ‘গ্রেড টুএ’ এবং ‘গ্রেড টুবি’ পর্যায়ভুক্ত প্রায় ১২০০ স্থান ও ভবনের হেরিটেজ-তালিকা প্রকাশ করেছিল। ‘গ্রেড পেন্ডিং’-এর তালিকায় রাখা হয়েছিল ৩১০টি ভবনকে। তৎকালীন পুর বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছিল, পরবর্তী কালে ওই বাড়িগুলির ঐতিহাসিক ও নির্মাণশৈলীগত প্রেক্ষিত দেখে সেগুলির গ্রেড ঘোষণা করা হবে। কিন্তু কোন মাপকাঠির ভিত্তিতে ভবনগুলিকে ‘গ্রেড ওয়ান’, ‘গ্রেড টুএ’ বা অন্য গ্রেড দেওয়া হবে, তার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভবন ও স্থান সম্পর্কে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তথ্য নথিভুক্ত করা দরকার বলে মনে করছেন পুর কর্তৃপক্ষ।

হেরিটেজ কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট মাপকাঠি থাকলে সেই অনুযায়ী গ্রেড ঘোষণা করা সহজ হয়। কারণ, সংগৃহীত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে বলা যায়, কেন কোনও ভবনকে গ্রেড টুএ দেওয়া হল, গ্রেড ওয়ান নয়। ব্রিটিশ মাপকাঠি অনুযায়ী সেখানকার সিটি কাউন্সিল যেমন কাজটা করে থাকে, এখানেও তেমন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি নির্দিষ্ট নিয়ম থাকলে হেরিটেজ-বিতর্ক এড়ানোও সম্ভব হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

London Kolkata Heritage KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE