Advertisement
E-Paper

কলকাতার কড়চা

শাস্তি’ গল্পে অভিমানী চন্দরা মনে মনে স্বামী ছিদামকে বলেছিল, ‘আমি তোমাকে ছাড়িয়া আমার এই নবযৌবন লইয়া ফাঁসিকাঠকে বরণ করিলাম— আমার ইহজন্মের শেষ বন্ধন তাহার সহিত।’

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০০

সাত চরিত্রের ‘সপ্তপর্ণী’

শাস্তি’ গল্পে অভিমানী চন্দরা মনে মনে স্বামী ছিদামকে বলেছিল, ‘আমি তোমাকে ছাড়িয়া আমার এই নবযৌবন লইয়া ফাঁসিকাঠকে বরণ করিলাম— আমার ইহজন্মের শেষ বন্ধন তাহার সহিত।’ আবার ‘চার অধ্যায়’-এ এলা অতীনকে বলে, ‘আমার চৈতন্যের শেষ মুহূর্ত তুমিই নাও। ক্লোরোফরম এনেছ? ভীরু নই আমি; জেগে থেকে যাতে মরি তোমার কোলে তাই করো।’ বা ‘কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই।’— এ রকমই রবীন্দ্রনাথের সাত নারী চরিত্র চন্দরা, দামিনী, চিত্রাঙ্গদা, মালতী, কাদম্বিনী, নন্দিনী ও এলাকে বেছে নিয়ে উষা গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাবনা থেকে সাধনা আহমদ-এর স্ক্রিপ্টে তৈরি হয়েছে ‘রঙ্গকর্মী’র নতুন নাটক ‘সপ্তপর্ণী’। অতএব সাত অভিনেত্রীর অভিনয়— সাত নারী পরিচালকের নির্দেশনায়। অভিনব! আরও অভিনব গোটা নাটকটাই এগিয়েছে বাংলা ও হিন্দি— দ্বিভাষিকতায়। এ বার প্রধানত এ নাটকে ভর করেই অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ রঙ্গকর্মী তাদের একচল্লিশ বছর উদ্‌যাপন করবে তিন দিনের ‘টেগোর টু মান্টো’ শীর্ষক নাট্যোৎসব। ১৬-১৮ জানুয়ারি, প্রতি দিন সন্ধে ৭টায়। একটি নাটকের মধ্যে পরিচালনা আর অভিনয়ে মেয়েদের এ ভাবে সম্মিলিত করার কারণ কী? ‘আসলে দেশ-মানুষ-প্রেম এ সব নিয়ে রবীন্দ্রনাথ তাঁর নারী চরিত্রের মাধ্যমে যা বলে গিয়েছেন, তা শুধু আজই নয়, সব সময় ভীষণ ভাবে প্রাসঙ্গিক। আমাদের মতো সাধারণের মনে দাগ কাটে। কাজকর্ম-ক্লান্তির শেষে মনে হয়, লেগে থাকাই বেঁচে থাকা, আমিও বাঁচব!’ বলছিলেন উষা। উৎসবের দ্বিতীয় দিনে মঞ্চায়ন হবে উষা গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশিত ও সাদাত হাসান মান্টোর গল্প অবলম্বনে ‘বদনাম মান্টো’। তৃতীয় দিনে দেখা যাবে বিনোদিনী কেয়া মঞ্চে, রঙ্গকর্মী স্টুডিয়ো থিয়েটারে সন্ধে ৬টায় ‘অন্তর্যাত্রা’য় উষা গঙ্গোপাধ্যায়ের একক অভিনয়। তার আগে ‘আড্ডা’, সেখানে ‘সপ্তপর্ণী’র সাত পরিচালক সোহাগ সেন সীমা মুখোপাধ্যায় অবন্তী চক্রবর্তী সুরঞ্জনা দাশগুপ্ত অদ্রিজা দাশগুপ্ত তুলিকা দাস ঈশিতা মুখোপাধ্যায় তাঁদের সাত অভিনেত্রীকে নিয়ে খোলামেলা আলোচনায় মাতবেন— ‘সপ্তপর্ণী’ কী ভাবে তৈরি হল। সঙ্গে ‘সপ্তপর্ণী’র মহড়ার ছবি, অংশুমান ভৌমিকের সৌজন্যে।

সম্মাননা

আশি বছরের চৌকাঠে তাঁকে নিয়ে ইংরেজি ভাষায় বেরোল সম্মাননা গ্রন্থ: নবনীতা, সেভেন্টি নাইন (কারিগর)। বাংলা সাহিত্য মাঝে মাঝেই খেয়াল রাখে না, ঠিক ক’জন নবনীতা দেবসেন তার প্রাসাদে আছেন। এক জন কবিতায় ‘স্বাগত দেবদূত’ বলে আহ্বান জানান, অন্য জন নটী নবনীতার রম্য রচনা লেখেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগ জানে, প্রতিটি সত্তার আধার এক জনই— এনডিএস। আশির দশকে নিজেই নীলরঙা ফিয়াট গাড়ি চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতেন। এই বই সেই এনডিএসকে-ই ছাত্রছাত্রী, সহকর্মী ও সতীর্থদের শ্রদ্ধাঞ্জলি। বন্ধু যশোধরা বাগচী আজ আর নেই। তিনি জানিয়ে গিয়েছেন, নবনীতার প্রথম বেড়ানোর লেখা গোখেল স্কুলের পত্রিকায়। সবাই ভেবেছিল, বাবা নরেন্দ্র দেব লিখে দিয়েছেন। সে রকম শঙ্খ ঘোষের বাবা এক বার জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘এত বিদেশ ঘোরো, ক্লাস নাও কখন?’ বিন্দুমাত্র অপ্রতিভ না হয়ে নবনীতার জবাব ছিল, ‘কই, এ ব্যাপারে নিজের ছেলেকে বকেন না তো! যত দোষ পরের মেয়ের!’

জীবন জুড়ে গান

বিশ্বভারতী’র সংগীত ভবনের যে ছাত্রীকে মোহরদি বলেছিলেন— যত শেখাবে তত শিখবে, সেই কাকলি রায়ের (১৯৪৩-২০১৭) ওই শেখা চলেছে আজীবন। সম্প্রতি তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর খানিক আগেও গল্পে গল্পে গান শুনিয়েছেন এক স্নেহভাজনকে। গান গাওয়ার প্রসাদ-বিষাদ বা সুর-সাধনার অধিকার ছাড়া আর কিছু চাওয়ার নেই— এই বোধই ছিল তাঁর গান শেখানো কিংবা গায়নের মূলকথা। জলপাইগুড়ির বাল্য থেকে কলকাতায়, শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রসংগীতের মহাগুরুদের কাছে শিখেছেন তিনি— দেবব্রত-সুচিত্রা-কণিকা-নীলিমা সেন। তাঁর গায়নে ছিল খোলা গলা আর খোলা মনের এক আশ্চর্য মিশেল। শঙ্খ ঘোষকে এক চিঠিতে ‘কাকলির অমন চমৎকার গলা’র কথা লিখেছিলেন রাধামোহন ভট্টাচার্য। তাঁর একক গানের একমাত্র ক্যাসেট ‘ভিতরে জাগিয়া কে যে’, তাঁর একমাত্র বই জীবন জুড়ে গান। তাঁর সংগীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গান্ধার-এর অনুষ্ঠানেও থাকে ওই খোলা মনের স্পর্শ। শিক্ষিত শ্রোতার সঞ্চয়ে থাকবে নিশ্চয়।

দেখার মন

স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি দেখার অভ্যেসটাই তেমন ভাবে তৈরি হয়নি আমাদের। পূর্ণদৈর্ঘ্যের কাহিনিচিত্র দেখার আগে যেন অনেকটা ‘ছোট ছবি’ দেখার মানসিকতা নিয়ে দেখি, সে সব ফিল্মের বিষয় বা শিল্পরূপ নিয়ে মাথাই ঘামাই না। ‘সেই অভ্যেস বদলাতেই নতুন প্রজন্মের পরিচালকদের শর্ট আর ডকুমেন্টারি দেখানোর আয়োজন’, বলছিলেন ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ-এর প্রেমেন্দ্র মজুমদার। তাঁদের উদ্যোগে নন্দনে ১৮ জানুয়ারি বিকেল ৪.৩০-এ ‘সেশন অন শর্টস’-এ দেখানো হবে একগুচ্ছ ছবি, এসআরএফটিআই-এর সহায়তায়, সেখানকার ছাত্রছাত্রীদেরই তৈরি ছবিগুলি। আবার নন্দনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ২০ জানুয়ারি সন্ধে ৬টায় ‘টেলিং টেলস অন সেলুলয়েড’ দেখানোর আয়োজন ফিল্মস ডিভিশন-এর, তাতে ত্রিপুরার জনজাতীয় গোষ্ঠীর সংগীত চর্চা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছবি জোশি জোসেফের। অন্য দিকে ১৯-২২ জানুয়ারি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে যোগেশ মাইম অ্যাকাডেমিতে ‘পিপলস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’, তাতে এ দেশ ও উপমহাদেশের নানা স্তরে মানবাধিকারের লড়াই নিয়ে তৈরি ছবির সমারোহ। উদ্যোগে পিপলস ফিল্ম কালেকটিভ। দেখানো হবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছবি।

লড়াই

গান গেয়ে, সিডি বিক্রি করে নিজেদের জন্য রোজগার তো করাই যায়। কিন্তু সেই রোজগার যদি হয় এমন কিছু মানুষের জন্য যাদের প্রতি দিনের বেঁচে থাকাটাই এক-একটা নতুন লড়াইয়ের অধ্যায়? অর্চন, মণিকা, স্যামি, অগ্নিভ, রিপন-রা এমন কিছু অনাত্মীয় শিশুর জন্যই গান গেয়েছেন। জানিয়েছেন, স্বার্থের বাইরে বেরিয়ে দুর্ভাগ্যের জাঁতাকলে পড়া বাচ্চাগুলোর জন্য গান গাওয়ার সময় যতটা আবেগ আর দরদ গলায় আপনাআপনি এসে পড়েছিল তা আগে কখনও হয়নি। অসুস্থ দরিদ্র অনাথ শিশুদের পড়াশোনা ও চিকিৎসার জন্যই নিজেদের নতুন অ্যালবাম ‘বাউল নগরী’-র বিক্রির পুরো টাকা দিয়ে দিচ্ছে বাংলা ব্যান্ড ‘এ5।’ উলুবেড়িয়ায় একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে একটি হোমে ওই বাচ্চাদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁদের। তার পরেই সব ওলটপালট। গানের মাধ্যমেই ছোট্ট মানুষগুলোর কঠিন দুনিয়ায় কিছুটা স্বস্তি আনতে চেয়েছেন নবীন শিল্পীরা।

ডোভার লেন

সারারাতব্যাপী ‘দ্য ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্স’-এর ৬৫তম বার্ষিক সম্মেলনে পনেরো বছর পর আবার সকালের অনুষ্ঠান। উদ্বোধন ২২ জানুয়ারি বেলা ১১টায়, শ্রোতারা সানাই শুনবেন হাসান হায়দর খানের এবং পণ্ডিত যশরাজের কণ্ঠসংগীত, তিনিই উদ্বোধক। বিশেষ অতিথি মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সংগীত সম্মান ২০১৭-র প্রাপক প্রবীণ বেহালাশিল্পী শিশিরকণা ধর চৌধুরী। এ বারে মূল শিল্পী সহ তবলা ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রশিল্পী নিয়ে মোট ৬২ জন শিল্পীর সমারোহ। বিশিষ্টদের মধ্যে আমজাদ আলি খান, শিবকুমার শর্মা, হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া, সুজাত খান, আমান আলি বাঙ্গাশ, আয়ান আলি বাঙ্গাশ, ইরশাদ খান, বাহাউদ্দিন ডাগর, রাজন ও সাজন মিশ্র, অজয় চক্রবর্তী, রাশিদ খান, শওকত হুসেন খান, কৈবল্যকুমার গুরাভ, অশ্বিনী ভিদে, সুধা রঘুনাথন, অপূর্বা গোখলে, নির্মাল্য দে, অঞ্জনা নাথ। তবলার যুগলবন্দি যোগেশ সামসি ও শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। নিবেদনে দেশ।

উজ্জ্বল উদ্ধার

‘প্রিয় চরিত্র রাজেন্দ্রলালের মতই সিদ্ধার্থ (অমিতাভ) ঘোষ ছিল এক যথার্থ polymath.’ লিখেছেন প্রসাদরঞ্জন রায়, সিদ্ধার্থ ঘোষ/ প্রবন্ধসংগ্রহ-এর (বুকফার্ম) সূচনায়। পেশায় যন্ত্রবিদ সিদ্ধার্থ একাধারে ছিলেন সাহিত্যিক, গবেষক, সম্পাদক ও সংগ্রাহক। ২০০২-এ মাত্র ৫৪ বছর বয়সে প্রয়াত এই বিস্মৃত প্রতিভাকে তুলে আনার এই প্রয়াস আশা জাগায় বইকী। ৩৯টি রচনা সাজানো হয়েছে উপেন্দ্রকিশোর-সুকুমার-সত্যজিৎ, ভূত, গোয়েন্দা, পত্রপত্রিকা, বিজ্ঞান-কল্পবিজ্ঞান, খেলাধুলা বিভাগে। ২০ জানুয়ারি জীবনানন্দ সভাঘরে সন্ধ্যা ৬টায় প্রকাশ পাবে বইটি, স্মৃতিচারণে প্রসাদরঞ্জন রায় কেয়া দাশগুপ্ত প্রমুখ, আর ‘সিদ্ধার্থ ঘোষ: কালসমুদ্রে আলোর যাত্রী’ শীর্ষকে বলবেন আশীষ লাহিড়ী।

শতবর্ষে

সম্ভ্রান্ত কৃষক পরিবারের সন্তান সুশীল জানা-র (১৯১৬-২০০৮) কৈশোর মেদিনীপুরে কাটলেও পরে চলে আসেন কলকাতায়। ১৩৪২-এ প্রথম গল্পের প্রকাশ ‘উত্তরা’ ও ‘প্রবাসী’তে। ১৯৪৬-এ মুজফফর আহমেদের ডাকে যোগ দেন ন্যাশনাল বুক এজেন্সিতে। ১৯৫০-’৮১ পড়ান মুরলীধর গার্লস কলেজে। স্বভাবনীরব এই সাহিত্যিক তাঁর দীর্ঘ জীবনে লিখেছেন ৬টি উপন্যাস, বেশ কিছু ছোটগল্প, কবিতা এবং বহু প্রবন্ধ। পেয়েছেন বঙ্কিম পুরস্কার, শরৎচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার প্রভৃতি। ওঁর আম্মা গল্প নিয়ে তৈরি গৌতম ঘোষের দখল ছবিটি স্বর্ণকমল লাভ করে। নিজে অনুবাদ করেছেন, ওঁর লেখা অনূদিত হয়েছে বিভিন্ন বিদেশি ভাষায়। ১৯ জানুয়ারি সাড়ে ৪টেয় ‘অন্তর্মুখ’ পত্রিকার উদ্যোগে জীবনানন্দ সভাঘরে স্মরণসভা, ‘জন্মশতবর্ষে কথাকার সুশীল জানা: ফিরে দেখা’। স্বাগত ভাষণে উদয়চাঁদ দাশ। আলোচনায় সুমিতা চক্রবর্তী, রবিন পাল, শ্রীলা বসু ও গৌতম ঘোষ।

দুর্নীতি-চিন্তা

দুর্নীতির অর্থনীতি চর্চায় গোটা দুনিয়ায় প্রথম সারিতে রয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে-র অধ্যাপক প্রণব বর্ধন। বাঙালির কাছে তিনি অবশ্য সম্প্রতি আরও বেশি পরিচিত স্মৃতি কণ্ডূয়ন-এর লেখক হিসেবে। আজ রোটারি সদনে সন্ধে সাড়ে ছ’টায় ‘প্রণবেশ সেন স্মারক বক্তৃতা’য় তাঁর দুর্নীতি বিষয়ক চিন্তা, থুড়ি, দুশ্চিন্তা শোনা যাবে। দুশ্চিন্তা কেন? প্রণববাবু জানালেন, অনেক কারণেই। একটা বড় কারণ, দুর্নীতি-দুর্নীতি রবে বেশি চেঁচামেচি করলেও যে অর্থনীতিতে তার কুপ্রভাব পড়ে, এই কথাটা আমরা মনে রাখি না। সে দিন শঙ্খ ঘোষ প্রকাশ করবেন ‘প্রণবেশ সেন স্মারক বক্তৃতা সংগ্রহ’।

সাহিত্য উৎসব

পড়ুয়া লেখক ক্রেতা বিক্রেতা প্রকাশক সব্বাইকে জড়ো করে সাহিত্যের উৎসব। চলছে সেই ২০১০ থেকে: এপিজে কলকাতা লিটারারি ফেস্টিভ্যাল। জাতীয় আন্তর্জাতিক লেখক-প্রকাশকরা যেমন শামিল, তেমনই পাঠকদেরও উজ্জ্বল উপস্থিতি। এ বারে প্রথম কমবয়সিদের জন্যে— অক্সফোর্ড জুনিয়র লিটারারি ফেস্টিভ্যাল। ব্রিটিশ উপনিবেশ, উদার গণতন্ত্রের মতো রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে পরিবেশ, কোনও বিষয়ই বাদ নেই। এপিজে সুরেন্দ্র গোষ্ঠী ও তার অক্সফোর্ড বুকস্টোর আয়োজিত এ উৎসবের উদ্বোধন হল গতকাল সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালে, শশী থারুরের উপস্থিতিতে। সেন্ট জনস চার্চ, হ্যারিংটন স্ট্রিট আর্টস সেন্টার বা প্রেসিডেন্সিতে, ১৮ জানুয়ারি অবধি।

স্মরণ

নিজের ছেলেবেলা সম্পর্কে তিনি বলতেন, ‘মা সরস্বতী আমায় লেখাপড়ায় পণ্ডিত করেননি। বরং বলা যায় সংগীতের স্বর্গদ্বার খুলে দিয়েছেন আমার সামনে।’ পাঁচ বছর বয়সে পিতার কাছে তালিম শুরু করেন প্রখ্যাত সরোদিয়া উস্তাদ বাহাদুর খান। তার পর মাইহারে চলে যান উস্তাদ আলাউদ্দিন খানের কাছে তালিম নিতে। সঙ্গী দিদি অন্নপূর্ণা, দাদা আলি আকবর, রবিশঙ্কর। সরোদের শিক্ষা তাঁকে নিয়ে যেত বাইরে। জঙ্গলের নিরিবিলিতে সংগীত সাধনা চলত। তিনি নিজেই পরে বলছেন, ‘আপনমনে বাজাচ্ছি, বাজনা শেষ হতেই কাছের ঝোপে একটা বাঘ ডেকে উঠল। ‘হালুম’ করে নিঃশব্দে চলে গেল। আমি তো ভয়ে মরি।’ ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘গরম হাওয়া’, ‘সুবর্ণরেখা’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ প্রভৃতি ছবির সংগীত পরিচালক বাহাদুর খানের জন্ম বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবেড়িয়ার শিবপুর গ্রামে ১৯৩১ সালের ১৯ জানুয়ারি। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ছিলেন তাঁর গুণমুগ্ধ। নেহরুর উদ্যোগেই তিনি প্রথম বিদেশ যান— চিনে। তাঁর জন্মদিনে ‘কুহক’ সংস্থা আইসিসিআর-এ বিকেল সাড়ে ৫টায় আয়োজন করেছে ‘পরম্পরা: স্মরণে, বরণে’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। স্মৃতিচারণে পণ্ডিত মনোজশংকর ও শঙ্করলাল ভট্টাচার্য। এর পর তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র বিদ্যুৎ খান সাহেবকে সংবর্ধনা ও পিতাপুত্রের দু’টি সিডি প্রকাশ পাবে। দ্বিতীয়ার্ধে শোনা যাবে পার্থ বসুর সেতার, তবলায় সাবির খান।

আত্মজন

ছবি: দীপঙ্কর ঘোষ

তিনি বাঁশপাহাড়ি গ্রামের কথা নানা প্রসঙ্গেই বলতেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় লোকসংস্কৃতির বিষয় জানতে ছাত্রছাত্রীরা গিয়েছিলেন জঙ্গলমহলের ওই প্রান্তে। ছড়া-গান-ধাঁধা-প্রবাদ সংগ্রহ করেছিলেন। দারিদ্রের মধ্যেও মানুষের সরল কথালাপে তাঁর বিস্ময় জেগেছিল। পরবর্তীতে ক্ষেত্রসমীক্ষা ব্যাপক ভাবে না করলেও, দিব্যজ্যোতি মজুমদার লোকায়ত জীবন-সংস্কৃতির অন্তরের গল্প খুঁজেছেন অবিরাম। লোককথা, রূপকথা, মিথকথা, লোককথার ঐতিহ্য, বাংলা লোককথার টাইপ ও মোটিফ ইনডেক্স, লোকসংস্কৃতির ভবিষ্যৎ ইত্যাদি সহ জীবন অনুভবে মেশা আত্মজনের কথা-কাহিনি মিলিয়ে লিখেছেন প্রায় কুড়িটি বই। আদিবাসী আর প্রান্তজনের কথার সারাৎসার অনুশীলনই ছিল তাঁর দিব্যজ্ঞান। কর্মজীবনে দীর্ঘদিন ছিলেন রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রকাশনা সম্পাদক এবং ‘পশ্চিমবঙ্গ’ পত্রিকার সম্পাদক। লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্রের কর্মপরিষদের সদস্য এবং প্রকাশন সম্পাদনার দায়িত্ব পালনও করেছেন। কলকাতা ও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি-অধ্যাপক ছিলেন। পেয়েছেন দীনেশচন্দ্র সেন পুরস্কার, সহজিয়া ও যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি সম্মান।

জন্ম ওপার বাংলার পাবনায়। কিশোর আর তারুণ্য কেটেছে রামপুরহাটে। উদাসী নির্লিপ্ততার মধ্যেও এক মজলিশি মন ছিল তাঁর। দূর বডোদরায় ৭৮ বছর বয়সে ৪ জানুয়ারি প্রয়াত হলেন তিনি। আজ সন্ধ্যায় অবনীন্দ্র সভাঘরে তাঁর স্মরণ অনুষ্ঠান।

Kolkata Korcha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy