Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Durga Puja 2023

মহোৎসবের শেষ দুপুর স্যাঁতসেঁতে করে দিল বৃষ্টি, ছাতা নিয়েই রাস্তায় মানুষ, চিন্তা রাত নিয়ে

একেবারে শেষ লগ্নে কি মাটি হয়ে যাবে বাঙালির প্রাণের উৎসব? এমনই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, বড় বড় পুজো কমিটির উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে আম বাঙালির মনে!

Kolkata’s big Durga puja puja committees’ officials face a sudden disaster

বৃষ্টি মাথায় নিয়েও মণ্ডপে ভিড় দর্শনার্থীদের। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:৩২
Share: Save:

নবমীতে মুখভার কলকাতার আকাশের। সোমবার সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়াতেই উত্তরের আকাশ কালো করে এসেছিল, ধীরে ধীরে মধ্য কলকাতা হয়ে পূর্ব ও দক্ষিণ কলকাতার আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা দিতে বেশি সময় নেয়নি। তার পরেই নামে ঝেঁপে বৃষ্টি। একেবারে শেষ লগ্নে কী মাটি হয়ে যাবে বাঙালির প্রাণের উৎসব? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে পুজো কমিটির উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে আম বাঙালির মনে!

এ বারের পুজোয় ভিড়ের নিরিখে অনেক পুজো কমিটির ঘুম ছুটিয়েছিল সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার পুজো। অযোধ্যার আগেই কলকাতার শারদোৎসবে রামমন্দিরের আদলে মণ্ডপ গড়ে দর্শক টানতে সফল হয়েছে তারা। কিন্তু নবমীর দুপুরের দুর্যোগ তাদেরও উৎকণ্ঠা বাড়িয়েছে। পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা তথা ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সজল ঘোষের কথায়, ‘‘আমাদের প্যান্ডেল দেখতে রাতেও যেমন ভিড়, দিনেও তেমন। আর আচমকা বৃষ্টি এসে যাওয়ায় মানুষ যত্রতত্র মাথা বাঁচাতে দৌড় লাগাচ্ছেন। কেউ মণ্ডপের ভিতরে ছুট লাগাচ্ছেন, তো কেউ আবার মাঠের কোণায় কোনও জায়গায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। পুজোয় আগত দর্শনার্থীরা যাতে কোনও ভাবেই আঘাত না পান, সেই দায়িত্বও আমাদের। কিন্তু এ ভাবে বৃষ্টি এসে আমাদের সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিচ্ছে।’’

আবোল তাবোলের ১০০ বছর উপলক্ষে মণ্ডপ সাজিয়ে বড় পুরস্কারের পাশাপাশি দর্শকদের মন জিতে নিয়েছে হাতিবাগান নবীন পল্লী। কিন্তু বেয়াড়া বৃষ্টি তাদের মণ্ডপেও প্রভাব ফেলেছে। পুজোর অন্যতম কর্তা সৌভিক ভড় বলেন, ‘‘আমাদের পুজো এ বছর কলকাতার অন্যতম আকর্ষণ। তাই নবমীর সকাল থেকেই আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের ব্যস্ত থাকতে হয়েছে দর্শকদের সামাল দিতে। আচমকা বৃষ্টিতে অনেক দর্শক এসে মণ্ডপের ভিতরে দাঁড়িয়ে পড়ছেন। তাই বাইরে থেকে নতুন করে লোক ঢুকতে পারছেন না। সন্ধ্যা ও রাতেও যদি এমন বৃষ্টি হয়, তা হলে আমাদের বড় সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে।’’

দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম নামজাদা পুজো খিদিরপুর ২৫ পল্লীর পুজো কর্তা কালী সাহা অবশ্য বলেছেন, ‘‘যে সময় বৃষ্টি এসেছে, সেই সময় মণ্ডপে ভিড় তুলনামূলক কম ছিল। তাই সেই ভিড় সামাল দিতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি। কিন্তু বিকেল ও সন্ধ্যায় যদি বৃষ্টি হয় তাহলে আমাদের সমস্যায় পড়তে হবে। কারণ আমাদের মণ্ডপের ভিতর এ বার কোনও ছাউনি নেই। সঙ্গে কাছেপিঠেও বৃষ্টি থেকে বাঁচার কোনও আশ্রয়স্থল নেই।’’

হঠাৎ এমন বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন উত্তর কলকাতার চোরবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। তাদের এ বারের মণ্ডপ মূলত তৈরি হয়েছে লোহা দিয়ে। মণ্ডপের অভ্যন্তরের আলোকসজ্জার জন্য সেইসব লোহা দিয়েই বিদ্যুতের তার লাগানো হয়েছে। বৃষ্টিতে সেই তারের মাধ্যমে যাতে লোহার মণ্ডপে যাতে কেউ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট না হন, সেই ব্যবস্থা শুরু করেছেন উদ্যোক্তারা। বৃষ্টি আসার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা যোগাযোগ করা শুরু করেন কলকাতা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন (সিইএসই)-র সঙ্গে। পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুজোয় কর্মরতদের সঙ্গে দর্শক ও আমাদের পুজো কমিটির লোকেরা যাতে সুরক্ষিত থাকেন সেই ব্যবস্থাই আমাদের করতে হবে। বৃষ্টি আসায় সত্যি আমরা অসুবিধায় পড়েছি। তবে দ্রুতই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসব। যাতে কারও কোনও সমস্যা না হয়।’’

জোর বৃষ্টি নামায় দক্ষিণ কলকাতার নিউ আলিপুরের সুরুচি সংঘের স্বেচ্ছাসেবক ও পুলিশকর্মীদের ভিড় নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্যতম কর্তা স্বরূপ বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘অক্টোবর মাসের শেষের দিকে পুজো হওয়ায় এ বার আমাদের মণ্ডপের কোনও ছাউনি করা হয়নি। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি আসায় আগত জনতা বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ছোট ছাউনি দেওয়া মণ্ডপের অংশে ঢুকে পড়ছেন। তাতে ভিড় সামাল দিতে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের অসুবিধা হচ্ছে।’’ তবে পুজো কমিটির তরফে বড় ছাতার বন্দোবস্ত করে দর্শনার্থীদের বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচানোর মতো সাহায্যের কথাও বলেছেন স্বরূপ।

সব পুজো কমিটিরই দেবীর কাছে প্রার্থনা, নবমী নিশি যেন সব রকম দুর্যোগ ছাড়াই কাটে। কারণ আগামী কালই বিজয় দশমী। দেবীর নিরঞ্জনের প্রহর। উৎসব শেষ হওয়ার আগে বর্ষণাসুর যাতে কোনও ভাবেই নিজের দাপট দেখাতে না পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE